বেনাপোলে এক মাসে ভারতফেরত ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে গত ৩৫ দিনে ৪ হাজার ২শ জন ভারত থেকে ফিরেছেন। কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন থেকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নিয়ে বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে ফেরেন তারা। তাদের মধ্যে সোমবার (৩১ মে) পর্যন্ত দুই শিশুসহ ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ বলছে, বেনাপোল হয়ে ভারতফেরতদের নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, গত ৩৫ দিনে ভারত থেকে বেনাপোল হয়ে দেশে ফেরা ৪ হাজার ২শ জন বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রী। তাদের প্রত্যেককে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ভারতফেরত বাংলাদেশিদের জন্য বেনাপোলের রজনীগন্ধা, পোর্টভিউ, অ্যারিস্টোকেট, জুয়েল আবাসিক, চৌধুরী হোটেল, সিটি আবাসিক, নিশাত হোটেল, ফ্রেশ হোটেল, নাহিদ হোটেল, হোটেল সানসিটি, মৌ হোটেল, হোটেল সিটি, বেনাপোল পর্যটন মোটেল, রহমানিয়া হোটেল, যশোর শহরের হাসান ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল নয়ন, ম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল, জাবের ইন্টারন্যাশনাল, আরএস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সিটি প্লাজা, হোটেল মিডওয়ে, হোটেল ম্যাগপাই, শেখ হাসিনা আইটি পার্ক, হোটেল মনিহার, হোটেল প্রিন্স, হোটেল বলাকা, হোটেল শাহরিয়ার, হোটেল সিটি, যশোর হোটেল, হোটেল সোনালী ও ঝিকরগাছার গাজীর দরগাহ মাদরাসা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে প্রস্তুুত রাখা হয়েছে।
এছাড়া সাতক্ষীরা, নড়াইল, খুলনা, মাগুরা ও ঝিনাইদহে আরও কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে। ভারতফেরত নারীদের নিরাপত্তায় আলাদা কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে যশোর শহরের রেলরোডে জয়তী সোসাইটিতে। কোয়ারেন্টাইনে নারী পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সেখানকার নারীকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন। আর করোনা পজিটিভ ও গুরুতর অসুস্থদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও বক্ষব্যাধিসহ অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালের রেড জোনে মোট ৫৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ভারত থেকে আসা রোগীর সংখ্যা ১৪ জন। বাকি ৩৯ জন স্থানীয়ভাবে করোনায় আক্রান্ত হন।
যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, জেনোম সেন্টারে এ পর্যন্ত ভারতফেরত ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের জনের শরীরে করোনার ভারতীয় নতুন ধরন পাওয়া যায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, ভারতফেরতদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ জন। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ জন। আর সংক্রমণ নিয়ে দেশে ফিরেছেন ১৩ জন। ভারত থেকে ফেরা যাত্রীদের কারণে যশোর জেলা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ভারতফেরতদের মধ্যে যশোর শহরের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে (আবাসিক হোটেল) দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্রের ছেলে বিমল চন্দ্র দে (৬০) ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার আব্দুল আওয়ালেরর স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৩৩)। তাদের মধ্যে বিমল চন্দ্র ফুসফুসে ক্যান্সার ও আম্বিয়া কিডনি রোগে ভুগছিলেন। তিনি আরও জানান, ভারত থেকে আসাদের মাঝে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আবার স্থানীয়ভাবে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। সবমিলিয়ে যশোর জেলা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে দুই দেশের সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ভারতে আটকে থাকা বাংলাদেশিরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে দেশে ফিরছেন। জেলা প্রশাসন ভারত ফেরতদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দিচ্ছে।