অন্য ধর্মের অসম্মান নয়

0

ইকতেদার আহমেদ
১৯৪৭ সালে ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন এটি ধর্মনিরপেক্ষ ছিল না। দেশটির সংবিধানের ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সালে এটির প্রস্তাবনায় ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ রাষ্ট্রের সব ধর্মের প্রতি সম-আচরণ। যদিও ভারতের সংবিধান বা কোনো আইনে ধর্ম ও রাষ্ট্রের সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ জন্ম পরবর্তী ১৯৭২ সালে যখন সংবিধান প্রণীত হয় তখন সংবিধানের প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ নং ৮-এ ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে বর্ণিত ছিল। পরে সংবিধানের দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ, ১৯৭৮ দ্বারা প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ নং ৮-এ রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস নীতিটি প্রতিস্থাপিত হয়। অতঃপর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পুনঃ উভয় স্থানে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপিত হয়। ভারত সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও সেখানে প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায় অন্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। হিন্দু ১০০ কোটি, মুসলিম ২২ কোটি, খ্রিষ্টান সাড়ে তিন কোটি, শিখ আড়াই কোটি, বৌদ্ধ এক কোটি, জৈন ৬০ লাখ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ৪০ লাখ। ভারতবর্ষ বিভাজনের সময় লোকসংখ্যা ছিল ৩৩ কোটি। তখন হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৪ ও আট কোটি। বর্তমানে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ১৮ কোটি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ। বাংলাদেশে এ সংখ্যাটি সামগ্রিক জনসংখ্যার ৮ শতাংশ।
ভারত বিভিন্ন জাতি সমন্বয়ে গঠিত একটি দেশ। অপর দিকে বাংলাদেশ একক জাতি সমন্বয়ে একটি দেশ। বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম। বাংলাদেশের অধিবাসীরা বাঙালি নামে অভিহিত। বাঙালিদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মাবলম্বী রয়েছে। পাকিস্তানের অধিবাসীরা চারটি মূল জাতিসত্তায় বিভক্ত। এগুলো হলো পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বালুচ ও পাঠান। পাঞ্জাবি ও সিন্ধি এ দু’টি জাতি হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মাবলম্বী সমন্বয়ে গঠিত। বিশ্বের প্রতিটি জাতির পৃথক সংস্কৃতি রয়েছে। তবে যেসব জাতি ধর্ম দ্বারা বিভাজিত তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি ভিন্নতর হয়ে থাকে। মানুষের খাদ্যাভ্যাস একটি জাতির সংস্কৃতির অংশ। একটি জাতির খাদ্যাভ্যাস অভিন্ন হয়ে থাকলেও ধর্মীয় সংস্কৃতির কারণে দেখা যায় কিছু খাবার একটি ধর্মাবলম্বী দ্বারা বর্জনীয় আবার সেগুলো অপর ধর্মাবলম্বীর কাছে গ্রহণীয়। যেমন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গরুর গোশত খান না। কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে এটি খাওয়াতে কোনো ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই; তবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী একজন মুসলিমকে হালাল হিসেবে স্বীকৃত যেকোনো জীবের গোশত খেতে হলে অবশ্যই ধর্মীয় বিধান মেনে জবাই করতে হয়। একজন হিন্দুর জন্য যেমন ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী গরুর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ; অনুরূপ হালালভাবে জবাই করা নয়, এমন গরুর গোশত খাওয়া একজন মুসলিমের জন্যও নিষিদ্ধ। বাঙালি জাতিভুক্ত হিন্দুরা ব্যাপকভাবে কাছিম ও কাঁকড়া খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তা ছাড়া শূকরের মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রেও হিন্দু ধর্মে কোনো বাধানিষেধ আছে বলে আমাদের জানা নেই। যদিও অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী নিরামিষভোজী হওয়ার কারণে শূকরসহ অপরাপর প্রাণী যেমন গরু, ছাগল, মহিষ প্রভৃতির গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকে। একজন মুসলমানের জন্য শূকরের গোশত খাওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। ভারতের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গরুর গোশত খায় না আর অপর দিকে মুসলিমরা গরুর গোশত খায় এ কারণে বিভিন্ন রাজ্যে গরু জবাই করা যাবে কি যাবে না এ নিয়ে প্রায়ই দাঙ্গাহাঙ্গমা হয়। এসব দাঙ্গায় আইনশৃঙ্খলার বিঘœসহ জীবনহানি ঘটে থাকে। ভারতে যেমন মুসলিমদের গরু জবাইয়ে বাধা দেয়া হয় এর বিপরীতে বাংলাদেশে কখনো হিন্দুদের কোনো প্রাণী খাওয়ার ব্যাপারে বাধা দেয়া হয় না। হিন্দু ধর্মের ইতিহাস অধ্যয়নে জানা যায়, প্রাচীন ভারতে গরুর অন্তর্ভুক্ত ষাঁড় দেবতার উদ্দেশে বলির পর এর গোশত খাওয়া হতো। কিন্তু দুগ্ধ প্রদানকারী গরুর অন্তর্ভুক্ত গাভী জবাই নিষিদ্ধ ছিল। হিন্দুদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ বেদে গাভীকে দেবতা উল্লেখপূর্বক দেবের মা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে গরুকে খাদ্যের উৎস এবং জীবনের প্রতিরূপ হিসেবে সম্মানের সাথে দেখা হয়। অনেক হিন্দু ধর্মবহির্ভূত মানুষ মনে করে থাকে হিন্দুরা গরুর উপাসনা করে। আসলে ব্যাপারটি তা নয়। সঠিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয় হিন্দু ধর্মে গরু পবিত্র হওয়ার চেয়ে জবাই নিষিদ্ধ। মনে করা হয় জৈন ধর্মের প্রভাব থেকে হিন্দু ধর্মে গরু নিধন বন্ধ করা হয়। প্রাচীন ভারতে হিন্দুদের মধ্যে যখন গরুর গোশত খাওয়ার অনুমতি ছিল তখনো বেদে নিরামিষ ভোজীদের উৎসাহিত করা হয়েছিল।
গরুর গোশত বাঙালি মুসলমানদের একটি প্রিয় খাবার হওয়ায় প্রতি বছর ভারত থেকে বাংলাদেশে বৈধ-অবৈধভাবে ২৫-৩০ লাখ গরুর আসে। বাংলাদেশে গাভীবহির্ভূত গরু রফতানি করে ভারত বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি কিছু উগ্র হিন্দু ধর্মীয় দল যেমন শিবসেনা, হিন্দু মহাসভা, আরএএস, বজরং প্রভৃতির সমর্থন ভোগ করে থাকে। এসব উগ্রপন্থী হিন্দু দল ভারতে গরু নিধন বন্ধসহ বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধের ব্যাপারে সোচ্চার। এরই বহিঃপ্রকাশে দেখা গেল ভারতের জনৈক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চৌকি পরিদর্শনের সময় বিএসএফ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় গরু যেন প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে তাদের কঠোর হতে হবে; যাতে সে দেশটিতে গরুর গোশতের দাম বৃদ্ধির কারণে মুসলমানদের গরুর গোশত খাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ভারতের উগ্র ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর কিছু নেতার আশঙ্কা সে দেশে যে হারে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে তাতে অচিরেই তারা প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। মুসলমানদের বংশবৃদ্ধি রোধে এসব নেতা মুসলিম সক্ষম পুরুষদের নির্বীর্যকরণের কথা বলছেন। এ ধরনের উক্তি উভয় সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানকে যে ক্ষুণœ করছে তাতে সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, তারা মুসলমানদের উপাসনালয় মসজিদের অভ্যন্তরে হিন্দুদের দেবদেবীর মূর্তি স্থাপনের দাবিও তুলছেন। এ ধরনের দাবির রেশ টেনে ধরে রাখা না গেলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাশাপাশি উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে, যা দেশটির সংবিধানের পরিপন্থী। ভারতে যখন উগ্রাবাদী হিন্দু দলগুলো গরু জবাই সম্পূর্ণ বন্ধে সোচ্চার এবং তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কিছু রাজ্যে যখন গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে; তখন দেখা যায় ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর গোশত রফতানিকারক দেশ। ২০১৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সে বছর ভারত ১৭ লাখ ৬৫ হাজার টন গরুর গোশত রফতানি করেছে, যা বিশ্বের মোট গরুর গোশত রফতানির এক-পঞ্চমাংশ। ভারতের কেন্দ্রীয় আইনে দুগ্ধ প্রদানকারী গরু ও মহিষ জবাই নিষিদ্ধ হলেও পুরুষ ও অনুৎপাদনশীল গরু ও মহিষ সেখানকার ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থ উপার্জনের একটি ক্ষেত্র। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাংলাদেশে গরু প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথাটি উচ্চারণের পর সে দেশের অর্থনীতিবিষয়ক পত্রিকায় গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর যেসব পুরুষ ও অনুৎপাদনশীল গরু রফতানি করা হয়; তা বন্ধ করা হলে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে ভারতের প্রতিবছর ন্যূনপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে, যা দেশটির জন্য সম্পূর্ণভাবে অনুৎপাদনশীল ব্যয়।
ভারত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও হিন্দু রাষ্ট্র নয়। পৃথিবীতে একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল। নেপালের হিন্দুরা ভারতের হিন্দুদের মতো একই ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণ করে থাকে। তবে সেখানকার হিন্দুরা প্রতি বছর অন্তর ভারতের বিহার রাজ্যের সীমান্তবর্তী বারা জেলার বারিয়ারপুরে গাধিমাই উৎসবে দেবীকে তুষ্ট করতে লক্ষাধিক গরু, মহিষ, ছাগল বলি দিয়ে উৎসর্গ করে থাকে। হিন্দু ধর্মানুযায়ী গাধিমাই হলো শক্তির দেবী। এ দেবীর উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের পশু নিধনপূর্বক উৎসর্গ করা হলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধারণা, তারা এক দিকে অশুভ শক্তির ক্ষতি হতে রেহাই পাবেন। অপর দিকে পশু বলির মাধ্যমে দেবীর সন্তুষ্টির কারণে তাদের জীবন দেবীর শক্তির প্রভাবে প্রতিপত্তি ও ঐশ্বর্য দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। গাধিমাই মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত পশু নিধন উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ৮০ ভাগ ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশের অধিবাসী। এ উৎসবে ২৫ লক্ষাধিক ভারতীয় ও নেপালী ধর্মপ্রাণ হিন্দুর সমাবেশ ঘটে। উৎসবের পর দেখা যায় পশুর গোশত, হাড় ও চামড়া ভারত ও নেপালের কোম্পানি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ উৎসবে যেসব পশু বলি দেয়া হয় এর বেশির ভাগ আসে ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে। অনেক প্রগতিবাদী হিন্দু বিশ্বাস করেন, গরু নিধন ও এর গোশত খাওয়া বিষয়ে সরাসরি হিন্দু ধর্মে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তাদের অভিমত- উগ্রবাদী যেসব হিন্দু নিজ দেশে গরু হত্যা নিষিদ্ধে আন্দোলনরত তাদের গাধিমাই উৎসবে গরু নিধন বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা ভারতের সর্বত্র গরু নিধন নিষিদ্ধ আন্দোলনের সাথে পরিহাস নয় কি! হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুরোহিতগণ গরু নিধন নিষিদ্ধের সপক্ষে যে যুক্তি দেখান, তা হলো গাভীর দুধ ও গাভী হতে উৎপাদিত পাঁচটি পণ্য যথা দুধ, দই, মাখন, মূত্র ও গোবর বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় ব্যবহৃত হয়। ভারতবর্ষে প্রাচীনকালে যখন হিন্দু ধর্মের আবির্ভাব ঘটে তখন এ দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে কৃষিনির্ভর ছিল। সে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির প্রাণশক্তি ছিল গরু। এর কারণ হিসেবে যে যুক্তি দেয়া হতো- তা হলো গরু হালচাষে ব্যবহৃত হয়। এই প্রাণী দিয়ে ধান মাড়াই করা হয়। এর গোবর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক উত্তম সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গরুর দুধ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মিটায়। বৌদ্ধ ধর্মে একদা যেকোনো ধরনের জীব হত্যা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ জীবিকার প্রয়োজনে সে নিষেধাঙ্গা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে একেবারেই অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই দেখা যায়, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে বসববাস করে। প্রাচীনকাল হতেই আগেকার ভারতবর্ষ এবং বর্তমানের ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দু ও মুসলমানরা একে অপরের ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে বসবাস করে আসছিল। ভারতে মাঝে মাঝে হিন্দু উগ্র ধর্মান্ধ দল মুসলিমদের গরু জবাইকে উপলক্ষ করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এ বিদ্বেষের যখন উপস্থিতি তখন ভারত গরুর গোশত রফতানিকারক দেশ এবং বিপুলসংখ্যক ভারতীয় গাধিমাই উৎসবে যোগ দিয়ে গরু নিধনের মাধ্যমে দেবীর সন্তুষ্টি অর্জনে মত্ত। কিন্তু এ বিষয়ে এ সব হিন্দু উগ্র ধর্মান্ধ দলের কোনো মন্তব্য নেই। ধর্মবিশ্বাস হলো ঐশ্বরিক শক্তির প্রতি আত্মসমর্পণ। এটি অন্যের ধর্মকে কটাক্ষ এবং অন্যের ধর্মের রীতিনীতিকে বিদ্রূপ করা অনুমোদন করে না। বাংলাদেশে বসবাসরত মুসলমানরা তাদের ধর্মে অনুমোদন নেই, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এমন কোনো কাজের ব্যাপারে যখন বাধা হিসেবে দাঁড়ায় না, তখন ভারতে বসবাসরত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরও উচিত মুসলমানদের ধর্মের অনুমোদিত এমন ধরনের কাজে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা। আমরা যদি একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সম্মান দেখাই তা হলে তা উভয় দেশে উভয় ধর্মাবলম্বীদের জন্য পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে বসবাসের পথ প্রশস্ত করবে যা প্রকারান্তরে উভয় দেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক