স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি সরবরাহ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥যুক্তরাষ্ট্রের কলোনিয়াল পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতিষ্ঠানটির পাইপলাইন নেটওয়ার্কে সাইবার হামলা চালায় হ্যাকাররা। এতে যুুুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে দেশটির পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় তীব্র জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে যায় পেট্রল, ডিজেল, জেট ফুয়েলসহ অন্যান্য জ্বালানি সরবরাহ। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো এ পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ শুরু হয়েছে। কলোনিয়াল পাইপলাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানা ছয়দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে কলোনিয়াল পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতি ঘণ্টায় লাখ লাখ গ্যালন জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে। রোববার এক হাজারেরও বেশি স্টেশনে জ্বালানি সরবরাহ চালু ছিল। খবর রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সপ্তাহ আগে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধরনের সাইবার হামলার শিকার হয় কলোনিয়াল পাইপলাইন নেটওয়ার্ক। ফলে ৮ হাজার ৯০০ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ পাইপলাইন দিয়ে টানা ছয়দিন বন্ধ ছিল জ্বালানি সরবরাহ। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল থেকে পেট্রল, ডিজেল ও জেট জ্বালানি সরবরাহ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এ সময় জ্বালানি তেল ও গ্যাস কেনার হিড়িক পড়ে যায়। বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ এসব জ্বালানি পণ্য কিনে মজুদ করা শুরু করে। এতে বাড়তে থাকে জ্বালানি তেলের দাম।
কলোনিয়াল পাইপলাইন-সংশ্লিষ্টরা বলেন, আমরা আমাদের সরবরাহ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে তুলছি। প্রতিদিন বাজারে লাখেরও বেশি গ্যালন জ্বালানি সরবরাহ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
তবে এখনো দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে হাজারেরও বেশি সরবরাহ স্টেশন জ্বালানিশূন্য রয়ে গেছে। সরবরাহের জন্য নির্ধারিত জ্বালানি ঠিক সময়ে স্টেশনগুলোতে পৌঁছাতে না পারায় সংকট এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
এদিকে ৩১ মে মোমোরিয়াল ডে উদযাপন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ছুটি রয়েছে। ছুটির দিনকে কেন্দ্র করে জ্বালানি পরিশোধক ও সরবরাহকারীরা দ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন চাহিদা বৃদ্ধিতে সরবরাহ বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
কলোনিয়াল পাইপলাইনের মুখপাত্র এরিক অ্যাবারকোম্ব এক ইমেইল বার্তায় রয়টার্সকে বলেন, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির জাহাজীকরণ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
জ্বালানি ট্র্যাকিং অ্যাপ গ্যাসবাডি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে দেড় লাখেরও বেশি গ্যাস স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনের মধ্যে শনিবার ১৩ হাজার ৪০০ গ্যাস স্টেশনে সরবরাহ বন্ধ ছিল। রোববার সরবরাহ বন্ধ থাকা স্টেশনের সংখ্যা কমে ১২ হাজার ৪০৫-এ দাঁড়িয়েছে। এর আগে বন্ধ থাকা স্টেশনের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ২০০টি। গ্যাস বাডির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসির ৭০ শতাংশ স্টেশন এখনো জ্বালানি সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে নর্থ ক্যারোলাইনার অর্ধেকেরও বেশি স্টেশন এবং সাউথ ক্যারোলাইনা, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ও জর্জিয়ার অর্ধেকের কিছু কম স্টেশন জ্বালানিশূন্য রয়েছে।
এদিকে সাইবার হামলার পর জ্বালানি সংকট দেখা দিতে শুরু করলে দেশটির গাড়িচালকরা জ্বালানি তেল ও গ্যাস কিনে মজুদ করতে শুরু করেন। তবে বন্ধ হয়ে যাওয়া সরবরাহ স্বাভাবিক হতে থাকায় মজুদের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তাহের ব্যবধানে পেট্রলের চাহিদা ১৫ শতাংশ কমে গেছে।
আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন মুলুকে ২০১৪ সালের পর গত সপ্তাহে পেট্রলের দাম ছিল সর্বোচ্চ। এ সময় প্রতি গ্যালনের (রেগুলার আনলিডেড) দাম ২ দশমিক ৯৬ থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে।