ঈদ হোক নিরাপদ আনন্দের

0

‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মতো মৃণ্ময়ী রূপে মাহে রমজান শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর হাজির হয়েছে আমাদের মাঝে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে রমজান হলো সিয়াম সাধকদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার। যারা আল্লাহর কাছ থেকে এই মহিমান্বিত পুরস্কার অর্জন করেছেন, মাহে রমজানের শিক্ষায় নিজেদের আলোকিত করেছেন ঈদুল ফিতরের আনন্দ তাদের জন্যই। শাব্দিক মূল্যায়নে ঈদের উৎপত্তি আরবি আওদুন থেকে যার অর্থ ‘বার বার ফিরে আসে এমন আনন্দ’। আর ফিতর শব্দটির উৎপত্তি আরবি ‘ফুতুর’ থেকে। যার অর্থ সকাল বেলার নাস্তা বা মূল্যবান পুরস্কার। মাহে রমজানে আল্লাহর যেসব বান্দা সিয়াম সাধনা করেছে শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখের সকালে তাদের রোজা ভঙ্গ করা এবং ঈদের জামাতে হাজির হওয়াই হলো ইসলামী পরিভাষায় ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের সকালে মহান আল্লাহকে বিশ্বাসী মানুষ ছুটে যান ঈদগাহে। ঈদের নামাজ শেষে তারা একে-অপরের সঙ্গে ঐশী আনন্দে কোলাকুলি করেন। মুমিনদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে ঈদগাহের এই মিলনমেলা। মানুষ আনন্দঘন পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন মনমানসিকতা দিয়ে একে-অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পবিত্র জীবনযাপন করবে আল্লাহ তেমনটিই চান। ঈদুল ফিতর ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন সৃষ্টিতে বরাবরই অবদান রাখছে। সে বিবেচনায় এটি এক সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসবে সমাজের ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব বিশ্বাসী মানুষ যাতে অংশ নিতে পারে সে জন্য রয়েছে আলাহর সুস্পষ্ট বিধান। এ জন্যই ফিতরা আদায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাহে রমজানের মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা মানুষকে যেমন ত্যাগের শিক্ষা দেয়, ঠিক তেমনি ঈদ উৎসবকে ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের মধ্যে ভাগাভাগির তাগিদ দেয়।
এ বছরও ঈদুল ফিতর এমন এক সময় এসেছে যে, যখন সারা পৃথিবী জুড়ে বিরাজ করছে ঈদ জামাতের অনিশ্চয়তা। কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস নামের এক ‘অদৃশ্য’ ভাইরাসে দ্বিতীয় ঢেউয়েবিশ্বজুড়ে চলছে মৃত্যুর মিছিল। লাখ লাখ আক্রান্ত আর লাখো মানুষের মৃত্যুর পরও শতভাগ কার্যকর কোনো ওষুধ আবিস্কার হয়নি। করোনার হাত থেকে রক্ষার এখনও প্রধান উপায় সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হাতধোয়া। ফলে বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশে খোলামাঠে ঈদের জামাতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এবার ঘোষিতভাবে মসজিদে অনুমতি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত করতে হবে। মুসল্লিরা বলছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই জামাত আদায় করতে প্রস্তুত। একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের জামাত করতে না পারার কষ্ট আসলে কেউ ভোগ করতে চায় না। ইতিহাসের তৃতীয় নিরানন্দ ঈদের সার্বিক কষ্টের মাঝে ঈদের নামাজ জামাতে আদায়ের সুখটুকু যাতে মুসল্লিরা উপভোগ করতে পারে তার জন্য সরকারের সদয় হওয়ার অনুরোধ আমরা গতবারই করেছিলাম। এবার মসজিদে মিলেছে তাই সকল মুসল্লিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করবো মুসল্লিরা নিয়ম মেনেই চলবেন। আমরা আরও আশা করবো, কোনো অসুস্থ ব্যক্তি ঈদের জামাতে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করবেন না। আমরা চাই, ঈদ উৎসব হোক সবার জন্য আনন্দের। আমরা আশা করি, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে ঈদের আগেই ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে তাদের মুখে হাসি ফুটাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের তৌফিক দান করুন।
ঈদ উপলক্ষে লোকসমাজের সকল সাংবাদিক-কর্মচারী, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকারদের জানাই অগ্রিম ঈদ মোবারক। আজকের এই দিনে আমরা লোকসমাজ পরিবারের পক্ষ থেকে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জননেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় সকলের প্রতি আহ্বান জানাই। কামনা করি সকল প্রতিকূলতার মাঝেও ঈদ হোক আনন্দের এবং নিরাপদ। ঈদ মোবারক।