করোনায় নারীদের মৃত্যুহার বাড়ছে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥নিউমোনিয়া সন্দেহে গত ৭ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তাহমিনা বেগম। হাসপাতালে ভর্তি হবার পর নমুনা পরীক্ষায় তিনি করোনাতে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। এর দুইদিন পর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেওয়া হয়। ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান।
দেশের কিংবদন্তী অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে। রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ফুসফুসে শতভাগ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় মারা যান সাবেক এই সংসদ সদস্য।
দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে নারীদের আক্রান্ত এবং তাদের মৃত্যুহার কম ছিলো। কিন্তু চলতি বছরে এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে তাতে দেখা যায় নারীদের মৃত্যু বাড়ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০১ জন, তাদের মধ্যে ৩২ জন নারী। তার আগের দিনের (১৬ এপ্রিল) মারা যাওয়া ১০১ জনের মধ্যে নারী ৩৪ জন, ১৫ এপ্রিল মারা যাওয়া ৯৪ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন, ১৪ এপ্রিল মারা যাওয়া ৯৬ জনের মধ্যে নারী ৩৭ জন।
দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনজন রোগী শনাক্ত হবার কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তার ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথম মারা যাওয়া ব্যক্তিটি ছিলেন পুরুষ এবং ৭০ বছর বয়সী। শুরু থেকেই করোনাতে আক্রান্ত হয়ে পুরুষের মৃত্যুর তুলনায় নারী মৃত্যু কম থাকলেও এবারে করোনাতে নারীদের মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে।
সে থেকে আজ (১৭ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসেবে মারা গেছেন ১০ হাজার ২৮৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ সাত হাজার ৬৩৫ জন আর নারী দুই হাজার ৬৪৮ জন। শতকরা হিসেবে পুরুষ ৭৪ দশমিক ২৫ শতাংশ আর নারী ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
দেশে গত নভেম্বর থেকে করোনা সংক্রমণের হার ছিলো নিম্নগামী। কিন্তু মার্চ থেকে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এবারে সংক্রমণের তীব্রতা বেশি এবং মৃত্যুও বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, মার্চের ১ তারিখ থেকে গতকাল (১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত করোনায় ১ হাজার ৮৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৭৬ জন পুরুষ (৬৮ শতাংশ) আর ৫৯৯ জন নারী (৩২ শতাংশ)।
হঠাৎ করেই কেন নারীদের মৃত্যু হচ্ছে সে নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু বিশ্বজুড়েই দীর্ঘমেয়াদি যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো রোগে যারা ভুগছেন তারা করোনাতে আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, গতবারের তুলনায় এবারে নারীদের মৃত্যু অনেক বেশি।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবারের সংক্রমণ তীব্র এবং মৃত্যুহারও বেশি যেটা গতবার ছিলো না। গতবারের মৃত্যুর চেয়ে এবারের মৃত্যু একেবারেই ভিন্ন রকমের। আর ফিমেলরা বেশি ইনফেক্টেড হচ্ছে কিনা- সেই ডেটাটা আমাদের কাছে নেই।’
সাধারণত করোনা ছাড়া নন করোনা পিরিয়ডে নারী রোগী কম থাকে, পুরুষ রোগী বেশি থাকে। কোভিডের সময়েও গতবার পুরুষ ভর্তি বেশি ছিল নারী ছিল কম। কিন্তু এবার নারী রোগী অনেক বেশি ভর্তি হচ্ছে। যা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি, বলেন অধ্যাপক ডা. রুবিনা।
তিনি বলেন, এবারে নারী কেন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বা হওয়ার আদৌ কোনও কারণ রয়েছে কিনা- এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এখনও পাইনি। আর এবারের সংক্রমণের সিভিয়ারিটি বেশি বলে আমি মনে করছি, নারীরা সিভিয়ার হচ্ছে। বাসায় থেকে পারছে না বলেই হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে বেশি। গতবারে সংক্রমণের হার তেমন তীব্র ছিল না, জটিলতা ছিল না।’
অধ্যাপক রুবিনা আরও বলেন, ‘সেবার সংক্রমণ মাইল্ড-মোডারেট ছিল, যার কারণে তারা হাসপাতাল পর্যন্ত আসতো না। কিন্তু এবারে যেহেতু সবই সিভিয়ার কেস, জটিলতা বেড়ে গেলেতো আর বাসায় রাখার উপায় নেই। ফলশ্রুতিতে নারীরা হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে। যেহেতু সবমিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি, সেখানে নারী মৃত্যু বেশি হচ্ছে