শ্রমিক সংকটে আটকে আছে ৬০০ পণ্যবোঝাই ট্রাক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমিক সরবরাহ না করায় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের ট্রাক থেকে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ভোমরা বন্দরে ব্যবসায়ীরা। গত দুদিনে বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় অন্তত ৬০০ পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকে রয়েছে। এতে পচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়াসহ আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করে ভোমরা স্থলবন্দরের নিয়োগ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দুই বছর আগে শ্রমিক সরবরাহের এ কাজ পায় ড্রপ কমিউনিকেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শ্রমিক সরবরাহের বিপরীতে প্রতি ১০ চাকার ট্রাক থেকে ১ হাজার ৮০০ ও ১২ চাকার ট্রাক থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এর বিপরীতে শ্রমিকদের ট্রাকপ্রতি দেয়া হয় ৩৮০ টাকা। কিন্তু শ্রমিকদের সংখ্যার বিবেচনায় সেটি খুবই অল্প। শ্রমিকদের কষ্টের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এতদিন ট্রাকপ্রতি শ্রমিকদের আলাদাভাবে বকশিশ দিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সরকার পণ্য খালাসের জন্য আরো এক দফা টাকা আদায় করায় এখন বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় ১ এপ্রিল থেকে শ্রমিকদের বকশিশ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা এখন বন্দরের কাজ বন্ধ রেখেছেন।
ভোমরা বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেডএ মাহমুদ ডন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আকতার হোসেন জানান, শ্রমিক না পেয়ে দুদিন ধরে ভোমরা বন্দরে তার ৬০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় আটকে আছে। এসব ট্রাকে পেঁয়াজ, চাল ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে কৃষিজাত বা পচনশীল পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শ্রমিক খরচ পরিশোধ করার পরও তার পণ্য খালাস করা যায়নি।
এ বিষয়ে ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, প্রতি টন পণ্য খালাসে শ্রমিক বাবদ সরকারকে ভ্যাটসহ ৭২ টাকা করে পরিশোধ করতে হয় ব্যবসায়ীদের। নিয়ম অনুযায়ী সরকার ঠিকাদারের মাধ্যমে শ্রমিক সরবরাহ করবে। কিন্তু এখানে সরকারের শ্রমিক খরচ পরিশোধ করার পরও পুনরায় ব্যবসায়ীদের নিজ খরচে পণ্য খালাস করতে হয়।
ভোমরা স্থলবন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে আসা ট্রাকপ্রতি ৩৮০ টাকা দেয়। কিন্তু একটি ট্রাকের পণ্য খালাস করতে কমপক্ষে ৮-১০ জন শ্রমিক লাগে। সেখানে মাত্র ৩৮০ টাকায় কিছুই হয় না। শ্রমিকদের কষ্টের বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের ট্রাকপ্রতি ৫০০-৭০০ টাকা বকশিশ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে বকশিশের টাকা বন্ধ করে দেয়ায় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে ড্রপ কমিউনিকেশনের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক মাহামুদ হাসান বলেন, গতকাল (শনিবার) ও আজ (রোববার) শ্রমিক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। শ্রমিকরা আগামীকাল (আজ) থেকে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। তবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা পচনশীল পণ্য শ্রমিকদের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করে খালাস করে নিচ্ছেন। শ্রমিকরা কাজ করতে সম্মত হয়েছেন বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক যে তথ্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।