উপকূলে সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে দুই কারণে

0

খুলনা সংবাদদাতা॥ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল দুর্যোগপ্রবণ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে আগামী দিনে এই অঞ্চলে দুর্যোগ আরও তীব্রতা নিয়ে এবং ঘন ঘন আঘাত হানবে। তার লক্ষণ ইতোমধ্যে আমরা টের পাচ্ছি। প্রাকৃতিক এবং মনুষ্য সৃষ্ট কারণের যৌথ অভিঘাতে পানি সংকট এই অঞ্চলে নানা রূপে দেখা দেবে। লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সাগরতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে জোয়ারের তীব্রতা ও উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূ-গর্ভস্থ জলে আর্সেনিক দূষণ, জলবদ্ধতা, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জল ও মাটির দূষণ ইত্যাদি ক্রমেই এই অঞ্চলকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলবে। সেজন্য এই অঞ্চলের সব উন্নয়ন পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সংক্রান্ত উপাত্তসমূহ বিবেচনায় নেওয়া খুবই জরুরি।
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে খুলনায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এভাবে মতামত দেন। নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে খুলনা সিটি করপোরেশন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাওসেড ও উপকূলীয় পানি সম্মেলন কমিটি যৌথভাবে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে। সভায় বক্তারা দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার মানুষের সুপেয় পানি সংকট নানা কষ্টের কথা তুলে ধরেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. দিলীপ কুমার দত্তের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। অ্যাওসেড নির্বাহী পরিচালক শামীম আরেফীনের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোস্তফা সরোয়ার। বক্তব্য দেন খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ দেলোয়ারা বেগম, পানি অধিকার কমিটির সভাপতি রেহানা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ববি, বেসরকারি সংস্থার মাহবুবুর রহমান মোহন, সাংবাদিক কৌশিক দে, খালিদ পাশা জয়, সিডিপির ইকবাল হোসেন বিপ্লব, উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা মানিক ভদ্র, নুরুন নাহার বেগম, কাকলী রাণী বিশ্বাস, সাহাবুদ্দিন মোড়ল প্রমুখ। সভায় পাইকগাছা উপজেলার ভুক্তভোগী জনগণ উপকূলীয় অঞ্চলের পানি সংকটের চিত্র তুলে ধরেন এবং প্রতিনিয়ত তারা যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন যেমন পানির লবণাক্ততা, নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাওসেড এর পরিচালক মাহববুবুর রহমান মোহন, সিডিপির সমন্বয়কারী ইকবাল হোসেন বিপ্লব, আইআরভির সমন্বয়কারী কাজী জাভেদ খালীদ জয়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাহীন জামান পন, কালের কণ্ঠের সাংবাদিক কৌশিক দে বাপী, পাইকগাছা উপজেলার ভিসিআরপিসি মাহমুদকাটির সভাপতি মানিক ভদ্র, বাঁকার সভাপতি মো. শাহবুদ্দিন, রামনাথপুরের শেফালী বিশ্বাস, হিতামপুরের কাকলি বিশ্বাস প্রমুখ। রামনাথপুর গ্রামের গৃহবধূ শেফালী বিশ্বাস বলেন, ‘চারিপাশে পানি আছে, কিন্তু খাওয়ার পানি নাই। স্নান করাসহ স্বাভাবিক কাজে পানি ব্যবহার করা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। সামনে কী অবস্থা হবে জানি না।’ আলোচনা সভায় জানানো হয়, দেশের সব অঞ্চলের স্বাদু জলের উৎসসমূহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় স্বাদু জলের এলাকা ৪৫ ভাগ থেকে কমে ৩৬ ভাগ, মৃদু লবণাক্ততার এলাকা ৫০ ভাগ থেকে কমে ৪৭ ভাগ হবে। অপরদিকে তীব্র লবণাক্ততার এলাকা ৫ ভাগ থেকে বেড়ে ১৭ ভাগে উন্নীত হবে। লবণাক্ত এলাকা এবং তীব্রতা বৃদ্ধির হিসাবে ইতোমধ্যে ১৯৯০ সালের তুলনায় ১০ ভাগ এলাকা ও ১০ ভাগ তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।