বৈশ্বিক এলএনজি বাণিজ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে উচ্চাভিলাষী কাতার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে কাতারের বিশেষ একটি পরিচিতি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) উৎপাদন ও রফতানিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববাজারে এলএনজির সরবরাহ ও দামের ওঠানামায় কাতার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে এলএনজির ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর কাতার। এর অংশ হিসেবে দেশটি নতুন একটি এলএনজি প্রকল্পে বিনিয়োগের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। সক্ষমতার বিবেচনায় এটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি প্রকল্প। খবর অয়েলপ্রাইসডটকম ও রয়টার্স।
উপসাগরীয় দেশ কাতারের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান কাতার পেট্রোলিয়াম। প্রতিষ্ঠানটি কাতারের জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজিসহ) খাতের উত্তোলন, সরবরাহ, রফতানিসহ যাবতীয় দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এলএনজি উৎপাদনের পরিমাণ বর্তমানের তুলনায় ৪০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে কাতার পেট্রোলিয়ামের। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন ও রফতানি বাড়াতে নতুন নতুন উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি সপ্তাহে নর্থ ফিল্ড ইস্ট প্রজেক্ট (এনএফই) নামে একটি জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে কাতার পেট্রোলিয়াম। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কাতারের এলএনজি উৎপাদনের বার্ষিক সক্ষমতা ৭ কোটি ৭০ লাখ (এমএমটিপিএ) থেকে বেড়ে বছরে ১১ কোটি টনে উন্নীত হবে। অর্থাৎ এই একটি প্রকল্প কাতারের এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা বছরে তিন কোটি টনের বেশি বাড়াবে। মূলত এ কারণে প্রকল্পটিকে সক্ষমতার বিবেচনায় বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করেছে কাতার পেট্রোলিয়াম।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০১৫ সালের চতুর্থ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) নাগাদ উৎপাদনে আসতে পারে নর্থ ফিল্ড ইস্ট প্রজেক্ট। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলার ব্যয় হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কাতার পেট্রোলিয়ামের অধীনে দেশটির জ্বালানি খাতে এটাই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের পরিমাণ।
এ প্রকল্পের আওতায় কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড সিকুয়েস্ট্রেশন (সিসিএস) নামে একটি সিস্টেম রেখেছে কাতার পেট্রোলিয়াম এবং প্রকল্পটিতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের বড় একটি অংশ কাতারের জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে এ প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে সৌরবিদ্যুৎ। এ প্রকল্পে ব্যবহার হওয়া পানির ৭৫ শতাংশ পরিশোধনের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হবে। ফলে বছরে ১ কোটি ৭ লাখ ঘনমিটার পানি সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি প্রতিষ্ঠানটি।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে এর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে কাতার পেট্রোলিয়ামের। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটির নাম হবে নর্থ ফিল্ড সাউথ প্রজেক্ট (এনএফএস)। প্রকল্পটি ইরানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে পারে কাতার। বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২৭ সালের মধ্যে। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কাতারের এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা বছরে ১২ কোটি ৬০ লাখ টনে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছে কাতার পেট্রোলিয়াম। অর্থাৎ পরপর দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২০২৭ সাল নাগাদ কাতারের এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমানের তুলনায় বছরে ৪ কোটি ৯০ লাখ টন বাড়তে পারে।
খনিজ ও জ্বালানি খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জির গবেষণা পরিচালক গিলস ফেরেয়ার বলেন, বৈশ্বিক এলএনজি বাণিজ্যে কাতারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। শীর্ষ রফতানিকারক দেশের দাবি নিয়ে বর্তমানে এ প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যত দিন যাচ্ছে, বৈশ্বিক এলএনজি বাণিজ্যে ত্রিদেশীয় প্রতিযোগিতা ততই জোরদার হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সক্ষমতার বিবেচনায় বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি প্রকল্পে বিনিয়োগ আগামী দিনগুলোয় কাতারকে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে কাতারের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে এ বিরোধ কাতারের অর্থনীতিকে চাপে ফেলে। তবে চাপ এড়িয়ে জ্বালানি খাতের ওপর ভর করে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশটি নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর। মূলত এ কারণে এলএনজি বাণিজ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিয়েছে কাতার।