মনিরামপুরে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়ে কলেজ ছাত্রকে হত্যা, আটক ১ # মন্টু চেয়ারম্যানকে আটকের দাবিতে শিক্ষার্থীদের থানা ঘেরাও

0

মজনুর রহমান ও ওসমান গণি, মনিরামপুর(যশোর)॥ যশোরের মনিরামপুরে মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী সন্দেহে বোরহানুল কবির নামে এক কলেজ ছাত্রকে বেধড়ক মারপিটে হত্যা করার অভিযোগ পওয়া গেছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার খালিয়া রাস্তার মোড়ে বোরহান মারপিটের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত আটটার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করে। নিহত বোরহানুল কবির পৌরশহরের মোহনপুর এলাকার ট্রেকার চালক আহসানুল কবিরের বড় ছেলে। সে মনিরামপুর সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। অপরদিকে এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দোষারোপ করে ঝাপা ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা শামছুল হক মন্টুকে গ্রেফতারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা রোববার বিকেলে পৌরশহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে থানা ঘেরাও করে। নিহতের পিতা জানান, শনিবার সকাল নয়টার দিকে বোরহানুল কবির বাড়ি থেকে মনিরামপুর পৌরশহরে একটি কোচিং সেন্টারে পড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরে কোচিং সেন্টারের একজন শিক্ষককের কাছ থেকে বাইসাইকেল নিয়ে সে উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকায় যায়। দুপুর ১২ টার দিকে রাজগঞ্জ-হেলাঞ্চি সড়কের খালিয়া গ্রামের রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকে। এ সময় সেখানে মোটরসাইকেলসহ উপস্থিত ছিলেন কৃঞ্চবাটি গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে নাইম হোসেনসহ অপর এক ব্যক্তি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এ সময় বোরহান রাস্তার পাশে বাইসাইকেলটি রেখে নাইমকে অনুরোধ করেন তাকে মোটরসাইকেলে নিয়ে যেতে। কিন্তু নাইম অপারগতা প্রকাশ করলে সে এক পর্যায়ে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে উঠার চেষ্টা করে। তখন ছিনতাইকারী ভেবে নাইম ও তার সাথে থাকা অপর যুবক মিলে তাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে ছিনতাইকারী বলে চিৎকার করলে আশাপাশের লোকজন এসে বোরহানকে বেধড়ক মারপিটে রক্তাক্ত করে। পরে তাকে রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে সোপর্দ করা হয়। খবর পেয়ে বোরহানের অভিভাবকরা দুপুর দুইটার দিকে সেখান থেকে তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরবর্তিতে তাকে নেওয়া হয় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার চরম অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার রাতেই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা বোরহানকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদি হয়ে মনিরামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শনিবার রাতেই পুলিশ প্রধান হত্যাকারী নাইম হোসেনকে মোটরসাইকেলসহ আটক করে।
অপরদিকে এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দোষারোপ করে ঝাপা ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা শামছুল হক মন্টুকে গ্রেফতারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা রোববার বিকেলে পৌরশহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে থানা ঘেরাও করে। এ সময় এলাকাবাসীও শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেয়। আর এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন পৌর কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা বাবুল আকতার। কয়েক’শ শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী বিকেল পাঁচটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী থানা ঘেরাও করে সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় বিক্ষোভকারীরা বোরহান হত্যাকান্ডে ঝাপা ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টুকে দোষারোপ করে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। মুহু মুহু শ্লোগানে এলাকা তখন প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়। প্রায় এক ঘন্টা পর সেখানে হাজির হন থানার ওসি(সার্বিক) রফিকুল ইসলাম। এ সময় ওসি তাদের দাবি আগ্রহভরে শোনেন এবং তদন্তে হত্যাকান্ডে ইউপি চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততা পেলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতী দেন। পরে বিক্ষোভকারীরা ঘেরাও কর্মসূচী স্থগিত করেন। কর্মসূচিতে নেতৃত্বদানকারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুল আকতার জানান, দ্এুকের মধ্যে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সেখানে পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে। এ দিকে নিহতের পিতাসহ স্বজনদের দাবি বোরহানকে মারপিটে রক্তাক্ত জখমের পর তাকে রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে সোপর্দের প্রায় দুই ঘন্টা পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ দ্রুত তাকে চিকিৎসা দেয়া হলে হয়ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো। কারন চিকিৎসার অভাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনেই বোরহানের মৃত্যু হয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে রাজগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শন সাহাজান আলী জানান, তদন্ত কেন্দ্রে সোপর্দ করার পর পরই তার স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিহতের পিতা এবং প্রতিবেশীরা জানায়, সম্প্রতি বোরহানের মানষিক রোগে ভূগছিল। ইতিপূর্বে বোরহান একবার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। বোরহানকে হারিয়ে পরিবারসহ স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম।