কপিলমুনি হাসপাতালের উন্নয়ন কাজ বন্ধে উকিল নোটিশ

0

এইচএম শফিউল ইসলাম,কপিলমুনি(খুলনা)॥ কপিলমুনি হাসপাতাল বাউন্ডারির মধ্যে ১১ শতক জমি নিজের দাবি করে কাজ বন্ধের উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে উন্নয়ন কাজ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, কয়রা, পাইকগাছা, তালা, ডুমুরিয়ার লাখো লাখো মানুষ এক সময় ছিল চিকিৎসা বঞ্চিত। আধুনিক কপিলমুনির রুপকার বিনোদগঞ্জের স্থপতি দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু তার জীবদ্দশায় একাধিক জনহিতকর প্রতিষ্ঠান গড়ার পাশাপাশি চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষের সুচিকিৎসা দিতে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ এপ্রিল তার পিতামহের নামে সম্পূর্ণ নিজ অর্থে ৩ একর জায়গার ওপর ২০ শয্যা বিশিষ্ট ভরত চন্দ্র হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। একতলা ভবন নির্মাণ করে বহির্বিভাগের কার্যক্রম ও ১৯২৬ খ্রি. মারবেল পাথর খচিত সুরম্য দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে কোলকাতা থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতি এনে অন্তঃবিভাগ চালু করেন। এছাড়া নির্মাণ করেন ৩ টি পুকুর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন। তৎকালীন জেলা বোর্ড কর্তৃক হাসপাতালটি পরিচালিত হতো। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকার হাসপাতালটি জাতীয়করণ করে ১০ শয্যা বিশিষ্ট কপিলমুনি হাসপাতাল নামকরণ করে ২ জন ডাক্তার, ৪ জন নার্স, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ৪জন এমএলএসএস, ১ জন ওয়ার্ড বয় ও ২ জন সুইপার নিয়ে পরিচালিত হতে থাকে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় হাসপাতালের বেদখলীয় জায়গা উদ্ধার করে সীমানা প্রাচীর নির্মিত হয়। এ ক্ষেত্রে জনৈক নিলু সাধু ও তার ছেলেরা মিলন মন্দিরের পেছনের পুকুরটি নিজেদের দাবি করে আদালতে মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে তারা পরাজিত হন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, কপিলমুনি হাসপাতালে বহির্বিভাগে ৭,৯১৪ জন পুরুষ, ১৮,৮৮০ জন মহিলা ও ৯,৮২৪ জন শিশু আমাশয়, ডায়রিয়া, এআরআই, পেপটিক আলসার, চুলকানি, পাচড়া, পিঠে ও কোমরে ব্যথা প্রভৃতি রোগে চিকিৎসা নিয়েছেন। দৈনিক আগত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫০ থেকে ১৭৫ জন। অন্তঃবিভাগে প্রধানত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, পেটে ব্যাথা, ডেলিভারি, দুর্ঘটনা, মারামারির ঘটনায় চিকিৎসা নেন ৫৯৪ জন পুরুষ ও ৫১০ জন মহিলা।
হাসপাতালটির গুরুত্ব বিবেচনা করে উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে তালা ও ডুমুরিয়া সীমন্তবর্তী প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল কপিলমুনি ১০ শয্যা হাসপতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত করার দাবি উঠে। বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সরকারের প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এলাকায় সফরকালে হাসপাতালটি আধুনিকায়নের ঘোষণা দিলেও বহিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগের ভবন সংস্কার, রং করা ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সবশেষ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ভবনের ছাদ নির্মাণসহ হোয়াইট ওয়াশ করা হয়। একই বছর স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্বাস্থ্য দপ্তরের ডিজি শেখ ইউসুফ হারুন হাসপাতালটি পরিদর্শনে আসেন এবং সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে শেখ ইউসুফ হারুন ও তপন কান্তি ঘোষ নামের এলাকার দুজন সচিবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাসপাতালটি ২০ শয্যায় উন্নতীকরণসহ আগের (ভরত চন্দ্র) নামে স্বীকৃতি পায় হাসপাতালটি। তখন ১৬ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে বৃহৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পে আছে ডাক্তার কোয়ার্টার, নার্স কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার, অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজ ও কোয়ার্টার, সাব স্টেশন, অপারেশন থিয়েটার, ইমার্জেন্সি, এক্স-রে, ল্যাব, ফার্মেসি, ভিআইপি কেবিন, আউটডোরসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা। চলতি বছরেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে উন্নত ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাবার আশায় এলাকাবাসী যখন অধীর অপেক্ষায় তখন নাছিরপুরের মৃত বছির গাজীর ছেলে জয়নদ্দীন গাজী জমি দাবি করে উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করছেন বলে অভিযোগ।