বর্জ্য থেকে সার, বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২০১৯ সালের আগস্টে যশোর পৌরসভার উদ্যোগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দেড় বছর ধরে বর্জ্য থেকে সার, বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। বর্জ্য থেকে তৈরি কমপোস্ট সার ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। পাশাপাশি বেড়েছে পৌরসভার আয়ও।
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, যশোর-নড়াইল সড়কের হামিদপুর ময়লার ভাগাড়ের ১৩ দশমিক ৯৭ একর (প্রায় ৪০ বিঘা) জমিতে তৈরি করা হয়েছে যশোর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন কেন্দ্র। ২৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় এর বাস্তবায়ন। এ প্রকল্পে মোট ৪৭ জন কর্মী রয়েছেন। ২০১৯ সালের আগস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিশোধন কেন্দ্রটি যাত্রা করে। এ পর্যন্ত ৮০০ টন কম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হয়েছে, যা ৭ টাকা কেজি দরে স্থানীয় কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। পরিশোধন কেন্দ্রেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রকল্পের সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সারা দিন পৌরসভার ট্রাকে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন চাহিদা ৪৫ টন হলেও বর্জ্য পাওয়া যাচ্ছে ৩৮ টন। বর্জ্যগুলো ওজন স্টেশনে ওজন করার পর স্টোরেজে নেয়া হয়। সেখানে বর্জ্যগুলো বাছাই করেন প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মীরা। এরপর সেখান থেকে পচনশীল দ্রব্য যেমন তরকারি, ফলমূলের খোসা, ঘাস, পাতা ইত্যাদি (যেগুলো জৈব সার তৈরির উপযোগী) জৈব সার প্লান্টে চলে যায়। সেখানে ২৮ দিন ধরে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব সার প্রস্তুতের জন্য উপযোগী করা হয়। এরপর বয়লার মেশিনে শুকিয়ে জালি বা ছাঁকনির মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী জৈব সারে পরিণত করা হয়। পরে আমরা সেই সার প্যাকেটজাত করি।
তিনি জানান, বাকি অংশ চলে যায় বায়োগ্যাস প্লান্টে। এছাড়া মনুষ্য বিষ্ঠা থেকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরল ও শুকনো অংশও বায়োগ্যাস প্লান্টে পাঠানো হয়। এখানে চার-পাঁচদিন রাখা হয়। সেখান থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন হয়। আর বাকি অংশ (স্লাইস) জৈব সারে ব্যবহূত হয়। উৎপাদিত বায়োগ্যাস দিয়ে তৈরি হয় বিদ্যুৎ। আমাদের এখানে তিনটি জেনারেটর রয়েছে। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২০০ কিলোওয়াট। উৎপাদিত বিদ্যুৎ গোটা প্লান্ট এরিয়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, শহর ও শহরতলি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্যের একটি বড় অংশ অপচনশীল। অর্থাৎ প্লাস্টিক বা পলিথিনজাতীয়। সেগুলো ফেলা হয় ল্যান্ডফিল্ডে। অথচ দুই বছর আগেও শহরতলির এ এলাকা ছিল পৌরসভার ডাম্পিং এরিয়া। ময়লার দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকত। মানুষের চলাচল স্বাভাবিক ছিল না। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দৃশ্যপট বদলে গেছে।
যশোর পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, শত বছরের ময়লার স্তূপ সরিয়ে জায়গাটিকে ব্যবহার উপযোগী করা কঠিন ছিল। সেটি সম্ভব হয়েছে। প্রয়োজনীয় বর্জ্যের জন্য ঝিকরগাছা ও মণিরামপুর পৌর কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছিল। কিন্তু তারা দেয়নি। এরই মধ্যে আমরা সার উৎপাদনে গেছি। আগামীতে পরিমাণ বাড়ানো হবে।