মৃত্যুদন্ডেও ধর্ষণ ও হত্যা কমছে না

0

আনুশকাসহ সাম্প্রতিক কিছু ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড প্রমাণ করে মৃত্যুদন্ডের আইন করেও ধর্ষকদের থামানো যায়নি। এতে প্রতিয়মান হয় শুধু আইন করে অপরাধ কমানো সম্ভব নয়। প্রয়োজনে আইন কার্যকর করা এবং তা দ্রুততম সময়ে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয় গত অক্টোবরে। নভেম্বরে জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়। ধর্ষণের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হলেও ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত হত্যা কমেনি। এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, সেই কারণগুলো দূর করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ তো নিতে দেখা যায় না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করা সম্ভব হয়নি। তদন্তের দুর্বলতায় অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে বলেও অভিযোগ শোনা যায়। ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগের এক দশকে ধর্ষণজনিত অপরাধে পাঁচ হাজার ১১৭টি মামলা হলেও বিচার হয়েছে মাত্র ৮৮১টির এবং শাস্তি হয়েছে মাত্র ১০১ জনের। আর সাম্প্রতিক সময়ে এক জরিপ তো ভয়াবহ এক চিত্র সামনে নিয়ে আসছে। সাতটি সহযোগী সংগঠনের সহযোগিতায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন তথ্য সংগ্রহ করে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে বলা হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ডের বিধান এবং অব্যাহত প্রতিবাদের পরও দেশে ক্রমেই বাড়ছে ধর্ষণের হার। আটকে রাখা যাচ্ছে না ধর্ষণ মামলার আসামিদের। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত করা ২৫টি ধর্ষণ মামলায় ৩৪ জন আসামির মধ্যে ২৭ জন আসামি জামিনে আছে। দুজন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আর পাঁচজন আবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছে। দেখা যাচ্ছে, গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘণ্টা থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার আসামিরা জামিন পাচ্ছে। দুটি ধর্ষণের ঘটনায় দুজন প্রতিবন্ধী নারীর দুটি সন্তান হয়েছে। কিন্তু তারা পিতৃত্বের পরিচয় পায়নি। এসব মামলার বিচার দেরি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও তা অনুসরণ করা হচ্ছে না। অথচ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা বিচারের জন্য নথি পাওয়ার তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলা আছে। তদন্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নির্ধারিত সময়সীমা ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে না।
শুধু মৃত্যুদণ্ডের আইন হলেই হবে না, দ্রুত বিধিমালা প্রণয়ন করে আইনের বিষয়গুলো স্পষ্ট করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক সামাজিক ব্যবস্থা গড়তে হবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারা বাদ দিতে হবে। সংস্কার আনতে হবে প্রচলিত বিচারব্যবস্থায়। আইনের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে দায়িত্ব পালনে আরো বেশি সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি অপরাধীরা যেন কোনোভাবেই প্রশ্রয় না পায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা মনে করি, দেশবাসী ধর্ষণ ও ন্যায় বিচার দেখতে চাই। আমরা আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্টরা তা নিশ্চিতে অধিকতর সক্রিয় হবেন।