থ্রি মিলিয়নেয়ার ক্লাব থেকে ছিটকেই পড়ল চট্টগ্রাম বন্দর

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বছরে ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং (ওঠানামা) করার তালিকায় ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো উঠে এসেছিল চট্টগ্রাম বন্দরের নাম। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ধাক্কা লেগেছে, তাতে সদ্য শেষ হওয়া ২০২০ সালে ‘থ্রি মিলিয়নেয়ার’ পোর্ট ক্লাব থেকে ছিটকেই পড়তে হলো দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দরকে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর ৮ শতাংশ কমেছে কনটেইনার পরিবহনের হার। এছাড়া জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালট্যান্সি (এইচপিসি) প্রণীত চট্টগ্রাম বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনায় ২০২০ সালে কনটেইনার ২৯ লাখ একক কনটেইনার ওঠানামা হবে বলে যে ধারণা দেয়া হয়েছিল, তাও বছর শেষে অর্জিত হয়নি। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে খোলা পণ্য (কার্গো হ্যান্ডলিং) পরিবহন কিছুটা বাড়লেও প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় তা খুবই সামান্য।
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ওঠানামার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া বছরে দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দরে মোট ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ একক (টিইইউ- টোয়েন্টি ফিট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিটস) ওঠানামার এ হিসাবটিতে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল ইয়ার্ডের সঙ্গে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) ও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালের (আইসিটি) পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনারের হ্যান্ডলিং কার্যক্রমও যুক্ত হয়েছে। এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজের আগমন হয়েছে ৩ হাজার ৭২৮টি। আগের বছর ২০১৯ সালে এ বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ একক। সে বছরই মূলত ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে প্রথমবারের মতো ‘থ্রি মিলিয়নেয়ার’ পোর্ট ক্লাবে যুক্ত হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের নাম।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খোলা পণ্য পরিবহন কিছুটা বাড়লেও প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় সেটা সামান্যই। গেল বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৭২৪ টন খোলা পণ্য (কার্গো) হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে এই পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৬ টন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বন্দরের হ্যান্ডলিং কার্যক্রম আমদানি-রফতানি বাড়া ও কমার সঙ্গে সম্পর্কিত। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে খারাপ প্রভাব পড়লেও চলতি নতুন বছরে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব। কলকারখানা খুলে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যও গতি পেতে শুরু করেছে।
করোনার প্রভাবে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় বদলে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আগমনের দৃশ্যও। সদ্য শেষ হওয়া বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া করেছে ৩ হাজার ৭২৮টি। এর আগে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮০৭।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোয় দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের কারণে আবারো স্থবিরতা নেমে এসেছে রফতানি কার্যক্রমে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে রফতানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং। তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, দেশে শিল্প-কারখানা এরই মধ্যে সচল হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে সরকারি প্রকল্পের আমদানিও বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। ফলে নতুন বছরে আমদানি পরিচালন কার্যক্রমে ইতিবাচক চিত্র দৃশ্যমান হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ফোরাম ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম এ বিষয়ে বলেন, দেশে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আমদানিতে গতি ফিরতে শুরু করেছে। এর সুফল আমরা নিশ্চয়ই চলতি বছরে দেখতে পাব। যেটা কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে আমরা দেখতে পাইনি।
বন্দরের তথ্য বলছে, বিশ্বে ৬০টির মতো বন্দর রয়েছে যেগুলোয় বছরে ৩০ লাখ বা ৩ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডলিং (ওঠানামা) হয়। দেশে সমুদ্রপথে পণ্যের ৯৩ শতাংশই আমদানি-রফতানি হয় চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ভিত্তিতে চলতি বছর লয়েড লিস্ট যে শীর্ষ ১০০টি বন্দরের তালিকা করেছে, তাতে ৫৮তম অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু কভিড এসে ব্যাহত হয়েছে বন্দরের এ অগ্রযাত্রা।