লিপস্টিক সূচকের সমাপ্তি ঘটিয়েছে কভিড-১৯

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥সাধারণত বছরের বেশির ভাগ সময় কসমেটিক দোকানগুলো বর্ণিলভাবে সজ্জিত থাকে, যে দোকানগুলো ঘিরে রাখেন একদল সুপ্রশিক্ষিত বিক্রয়কর্মী। ব্যাপকভাবে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকা এ দোকানগুলো বছরজুড়ে দামি লিপস্টিক, ফেস ক্রিম ও পারফিউম বিক্রির মাধ্যমে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন পাউন্ডের অর্থ তুলে আনে। কিন্তু চলতি বছরের পরিস্থিতি ভিন্ন। স্বভাবতই নভেল করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ছাড় দেয়নি কসমেটিক শিল্পকেও। বছরের বেশির ভাগ সময় রাস্তার পাশের সুসজ্জিত দোকানগুলো বন্ধ থাকায় হ্রাস পেয়েছে এর বিক্রিও। বিশেষ করে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা এবং ঘরগুলো ওয়ার্ক স্টেশনে পরিণত হওয়ার কারণে অনেক নারীকেই তাদের মেকআপ বাক্সগুলো গুছিয়ে তুলে রাখতে হয়েছে। কারো কারো ব্যাগে হয়তো এরই মধ্যে ধুলোও জমতে শুরু করেছে।
বাজার নিয়ে গবেষণা করা এনপিডির দেয়া তথ্যমতে, ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোয় ডিজাইনার ব্র্যান্ডের কসমেটিক পণ্যের বিক্রি এ বছর নেমে এসেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থের হিসাবে এই হ্রাসের মূল্য ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড। এই হ্রাস আরো বড় হবে যদি আপনি কম দামি লিপস্টিক ও আইশ্যাডোগুলোও যুক্ত করেন। তখন সেই ক্ষতির পরিমাণে যুক্ত হবে আরো ১৮০ মিলিয়ন পাউন্ড।
এ বিষয়ে কাল্ট বিউটি ওয়েবসাইটের সহপ্রতিষ্ঠাতা আলেক্সিয়া ইনগে বলেন, নারীরা এখন এমনিতেই কম মেকআপই নিয়ে থাকেন। লকডাউন তৈরি হতে থাকা সেই প্রবণতাকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। এরই মধ্যে সাধারণ মানুষ মেকআপকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শুরু করেছে।
এদিকে স্বাস্থ্য সংকটের এ সময়ে ‘লিপস্টিক সূচক’ নামে তথাকথিত টার্মটি আরো একবার সামনে এসেছে, যাকে মূলত বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থায় কসমেটিক পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহের ব্যারোমিটার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এস্টি লাউডেরের সাবেক চেয়ারম্যান লিওনার্দ লাউডের শূন্য দশকের শুরুর দিকে টার্মটি প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি বলেছিলেন, প্রসাধনী ক্রয়ের ক্ষেত্রে লিপস্টিকের বিক্রি বাড়া একটি অর্থনৈতিক সূচক হতে পারে। যেখানে ধারণা করা হচ্ছিল, অর্থনৈতিক সংকটকালীন নারীরা ব্যয়বহুল জামা ও জুতার বিকল্প হিসেবে লিপস্টিককে বেছে নিয়ে থাকেন।
কিন্তু কভিড-১৯ আসার বিষয়টি এ সূচক কখনই অনুমান করতে পারেনি। যেখানে বাধ্যতামূলকভাবে মুখ ঢেকে রাখার কারণে আপনার ঠোঁট আর দৃশ্যমানই থাকছে না। ফলে লকডাউনে একসময় জরুরি সৌন্দর্যবর্ধন সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হওয়া ফাউন্ডেশন ও লিপস্টিকের বিক্রি হ্রাস পেয়েছে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। পাশাপাশি লিপস্টিক সূচক প্রভাব নিয়ে যে ধারণা প্রচলিত ছিল, তাও এখন উল্টে গেছে।
ইনগে বলেন, লাউডারের লিপস্টিক প্রভাব নিয়ে আলাপ করতে সবাই পছন্দ করেন। কিন্তু লিপস্টিকের বিক্রি সম্ভবত এখন সবচেয়ে বাজে ক্যাটাগরিতে থাকবে।
তবে লিপস্টিক বিক্রি কমলেও ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য ব্যবহূত কসমেটিকস এবং শরীর ও চুলে ব্যবহার করা সামগ্রীগুলোর বিক্রি বেশ বেড়েছে। চলতি বছর এ পণ্যগুলোর বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩৪ শতাংশ। মানুষ এখন মেকআপের বদলে ত্বকের যত্ন নেয়ার প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়ার কারণে এই বৃদ্ধি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি এ বছর সামনে আসা নতুন এসব ট্রেন্ড সামনের দিনগুলোয়ও স্থায়ী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে নারীরা লিপ পেন্সিলের পণ্যগুলো সরিয়ে ফেলার কারণে তাদের হ্যান্ডব্যাগও আরো ছোট হয়ে আসবে।