চায়ের দোকানই এখন তার ঠিকানা ॥ নিজে রান্না করে খেতে পছন্দ করেন শামছুল মোল্লা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ নেই মাথা গোজার ঠাই, নেই শীতের তেমন কোন গরম কাপড়। অনেক কষ্টে দিন যায় আর রাত আসে, এ ভাবেই পার করেছেন জীবনের বড় একটি অংশ। সারা দিন ভিক্ষা করে যা রোজগার হয় তাই দিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে আছেন বৃদ্ধ শামছুল মোল্লা (৬২)। চৌগাছা পারবাজারে কপোতাক্ষ ব্রীজের পাশে একটি চায়ের দোকান এখন তার ঠিকানা। তিনি নিজ হাতেই রান্না করে খেতে পছন্দ করেন।
শামছুল মোল্লা পিতা মৃত লোকমান হোসেন মোল্লা। পাশ^বর্তী ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলার শ্যামনগর গ্রাম তার জন্মস্থান ঠিকানা। দুই ভাই বোনের মধ্যে শামছুল মোল্লা বড়। ছোট বোন বেশ আগেই একটি কারনে আত্মহত্যা করে। মা বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। অভাব অনাটনের সংসার তাই পিতা ১ শতক জমিও রেখে যেতে পারেনি। চরম দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে বৃদ্ধ শামছুল মোল্লা তার স্ত্রী মোমেনা বেগম বেঁচে ছিলেন। কিন্তু ১১ বছর আগে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী মোমেনা বেগমও চলে যায় না ফেরার দেশে। দীর্ঘ সংসার জীবনে কোন সন্তাননাদি হয়নি তাদের তাই বড়ই একা তিনি। শনিবার সকালে চৌগাছা পারবাজারে যেয়ে দেখা যায়, ব্রীজের কাছে বসে মাছ কাটছেন বৃদ্ধ শামছুল মোল্লা। এ সময় কথা হলে তিনি উপরোক্ত কথা গুলো বলে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, জন্ম থেকেই অভাব অনাটনের সথে লড়াই করে এ পর্যন্ত এসেছি। কখনও ভাবেনি মানুষের কাছে হাত পেতে আমাকে চলতে হবে কিন্তু এখন আর পারিনা, তাই ভিক্ষা করে চলে আমার জীবন। শনিবার বেজায় ঠান্ডা তাই ভিক্ষা করতে যায়নি। যা সঞ্চয় ছিল সেই টাকার মধ্য থেকে ২০ টাকার ছোট মাছ আর ৩০ টাকা দিয়ে একটি বড় সিলভার কার্প মাছ কিনে এনেছি। মাছ কেটে নিজেই রান্না করব, কেউ খেতে চাইলে তাকে হতাশ করিনা বললেন বৃদ্ধ শামছুল মোল্লা। তিনি আরও বলেন, গ্রামে থাকতে চেয়ারম্যান মেম্বরদের কাছে ছুটেছি একটি কার্ডের জন্য, কিন্ত হয়নি। কেন হয়নি তা উনারা ভাল বলতে পারবেন। সরকার গরীব অসহায়দের অনেক কিছুই দেন কিন্তু আমি কিছুই পায়নি, হয়ত আমার কপালের দোষ, তা না হলে কেমন এমনটি হবে। দীর্ঘদিন বাড়ি ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে প্রায় দুই সপ্তাহ হলো চৌগাছার ব্রীজের পাশে এই চায়ের দোকানে অবস্থান করছি। এখানকার ব্যবসায়ীরা সবাই ভাল আমাকে যথেষ্ঠ সহযোগীতা করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তায় জানেন তিনি কত দিন এখানে আমাকে রাখবেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী চঞ্চল হোসেন, কৃষ্ণ কুমার সর্দার, সাবেক বাস চালক কান্ত বলেন, শামছুল মোল্লা তার অসহত্বের কথা জানালে আমরা চায়ের দোকনের এক পাশে তাকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারা দিন গ্রাম এলাকায় ঘুরে বেড়ায় রাতে ফিরে রান্না করে খাওয়া শেষ করে দোকানের মধ্যেই সে ঘুমাই। তার নির্দিষ্ঠ একটি ঠিকানা হওয়া দরকার বলে অনেকে মনে করছেন।