মহান বিজয় দিবস সংখ্যার একগুচ্ছ লেখা-৩

0

একাত্তরের শুরু বাষট্টিতেই
হামিদ মীর

আপনি কি বিশ্বাস করবেন, পাকিস্তানের একজন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী ১৯৬২ সালে তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন, পাকিস্তান ভেঙে গেছে? জি হ্যাঁ, জেনারেল আইয়ুব খানের মার্শাল ল সরকারের বাঙালি আইনমন্ত্রী জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিমের ‘ উরধৎরবং ড়ভ ঔঁংঃরপব গঁযধসসধফ ওনৎধযরস (১৯৬০-১৯৬৬)’ গ্রন্থ অধ্যয়ন করে জানা যায় যে, পাকিস্তান ১৯৭১ সালে নয়, ১৯৬২ সালেই ভেঙে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালে শুধু পূর্ব পাকিস্তানকে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছিল। জাস্টিস ইবরাহিমের ডায়েরি ও জেনারেল আইয়ুব খানের সাথে আদান-প্রদানকৃত পত্রাবলিসংবলিত এই গ্রন্থ তার কন্যা ড. সুফিয়া আহমেদ সঙ্কলন করেন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান। জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিমের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থটিতে ১৯৬০ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সময়ের ঘটনাবলি স্থান পেয়েছে। গ্রন্থটি সংবেদনশীল প্রকৃতির গোপন দলিল দস্তাবেজও সংযুক্ত করা হয়েছে। সম্ভবত এ জন্য এ গ্রন্থটি জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিমের মৃত্যুর ৪৫ বছর পর প্রকাশ করা হয়েছে (গ্রন্থটি ঢাকার একাডেমিক প্রেস অ্যান্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি ২০১১ সালে প্রকাশ করেছে-অনুবাদক)।
জাস্টিস ইবরাহিম ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আইয়ুব খানের প্রথম ক্যাবিনেটে আইনমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৬২ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল আইন নিয়ে আইয়ুব খানের সাথে তার দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিম পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন। তার ধারণা ছিল, প্রেসিডেন্সিয়াল শাসনব্যবস্থা পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনার অনুভূতি বৃদ্ধি করবে। তিনি আইনমন্ত্রী হিসেবে যে আইনি প্রস্তাব পেশ করলেন, তা প্রত্যাখ্যান করা হলো। ১৯৬১ সালের নভেম্বরের পর তিনি ক্যাবিনেটের বৈঠকগুলোতে অংশ নেয়া বন্ধ করে দেন। জেনারেল আইয়ুব খান তাকে রাজি করানোর জন্য অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ শোয়াইব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং হাশেম রেজাকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিম তাদের সবাইকে জবাব দেন, ‘আমি পাকিস্তান ধ্বংসের আইনি পরিকল্পনায় শরিক হতে পারব না।’ ক্যাবিনেটের অপর তিন বাঙালি মন্ত্রী হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান এবং এ কে খানও জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিমের অবস্থানকে সমর্থন করতেন। তবে তারা কখনো পদত্যাগের হুমকি দেননি। ১৯৬২ সালের জানুয়ারিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে করাচিতে গ্রেফতার করা হলে ৫ ফেব্রুয়ারি জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিম আইয়ুব খানের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে বলেন, সোহরাওয়ার্দীর গ্রেফতার একটি ‘ব¬ান্ডার’, মারাত্মক ভুল। কিন্তু আইয়ুব এ কথায় একমত হলেন না।
তিনি বললেন, আমি তাকে ঢাকার পরিবর্তে করাচিতে গ্রেফতার করেছি। যাতে গণপ্রতিক্রিয়া বেশি না হয়। জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিম তার ডায়েরিতে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানও জানতেন, তার প্রেসিডেন্সিয়াল আইনের বিপরীতে কঠোর বিক্ষোভ হবে এবং অবশ্যম্ভাবী বিক্ষোভ দমনের জন্য তিনি এক জালিম স্বৈরশাসকরূপে মানুষের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিচ্ছেন। স্বীয় ডায়েরিতে এ কথাগুলোর লেখক দরদি ব্যক্তি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
সোহরাওয়ার্দীকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর পর জেনারেল আইয়ুব খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সমাবর্তনে ভাষণ দানের জন্য পূর্ব পাকিস্তান পৌঁছেন, যেখানে তাকে ডক্টরেটের সম্মানজনক ডিগ্রি দেয়ার কথা। জাস্টিস ইবরাহিম তার ডায়েরিতে লিখেছেন, জেনারেল আইয়ুব খান ঢাকা পৌঁছা মাত্রই পুরো পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা সোহরাওয়ার্দীর মুক্তির জন্য বিক্ষোভ শুরু করে দেয়। গ্রন্থটির ১৪০ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ছাত্ররা পাকিস্তান থেকে পৃথক হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল। এই সময় জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিম জেনারেল আইয়ুব খানের সাথে ঢাকায় সাক্ষাৎ করে নিজের পদত্যাগের প্রস্তাব পেশ করেন।
সামরিক প্রেসিডেন্ট তার আইনমন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধা দেন। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি পাকিস্তানি জনগণের ওপর প্রেসিডেন্সিয়াল আইন চাপিয়ে দেয়ার ইচ্ছা পরিত্যাগ করবেন। কিন্তু যখন ওই আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা হলো, তখন প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল আজম খান, এরপর আইনমন্ত্রী জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিম মন্ত্রীপদ থেকে পদত্যাগ করেন। সরকার বিবৃতির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানায়, ‘আইনমন্ত্রী অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেছেন।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিম জেনারেল আইয়ুব খানকে পত্র লিখলেন যে, তিনি তার পদত্যাগপত্রে ১৯৬২ সালের আইন প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর তিনি পদত্যাগপত্রের অনুলিপি গণমাধ্যমকে দিতে চান। সেনাশাসক জবাবে জাস্টিস ইবরাহিমকে এমন ধরনের কোনো পদক্ষেপের কারণে ‘কঠিন’ দুর্ভোগের হুমকি দেন।
গ্রন্থটি পাঠ করতে গিয়ে অনুভব হয় যে, মারাত্মক ধরনের মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিম কোনো আইনি ধারা ও চারিত্রিক রীতি ভঙ্গ করেননি। তবে জেনারেল আইয়ুব ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেন। যদি টুইটের যুগ হতো, তাহলে জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিম একটি ছোট্ট টুইট করতেন, ‘আমি ১৯৬২ সালের আইন প্রত্যাখ্যান করছি।’ এরপর তিনি চুপ হয়ে যেতেন। কিন্তু তিনি টুইটের নয়, টেলিগ্রাম ও টেলিফোনের যুগে বাস করতেন। তিনি জেনারেল আইয়ুব খানের হুমকিমিশ্রিত পত্রের জবাবে চার পৃষ্ঠাব্যাপী দীর্ঘ পত্র লিখেন এবং তার যুগের ‘গডফাদার’-এর হুমকিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি। কেননা পাকিস্তানের সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক।’
আইয়ুব খান জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিমের স্থলে সাবেক চিফ জাস্টিস জাস্টিস মুহাম্মদ মুনীরকে তার নতুন আইনমন্ত্রী বানান। লাহোরের অধিবাসী এই বিচারপতি গণতন্ত্র হত্যাকে বৈধ আখ্যায়িত করতে প্রয়োজনীয় ‘যুক্তি’ তৈরি করেছিলেন। তিনি আইনমন্ত্রী হয়েই কায়েদে আজমের পাকিস্তানকে হত্যা করার একটি বিধিবদ্ধ ঘোষণার প্রস্তুতি শুরু করেন। জাস্টিস মুনীর তার ‘ফ্রম জিন্নাহ টু জিয়া’ গ্রন্থে স্বীকার করেছেন যে, তিনি আইনমন্ত্রী হওয়ার পর জেনারেল আইয়ুব খানের পরামর্শে ১৯৬২ সালের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বাঙালি সদস্যদের সাথে আলাদা হওয়া বা কনফেডারেশনের জন্য যথারীতি আলোচনা করেন। কিন্তু অ্যাসেম্বলির অন্যতম বাঙালি সদস্য রমিজউদ্দিন তাকে এ কথা বলে চুপ করিয়ে দেন, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং আমরা পাকিস্তান। সুতরাং পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠরা নয়, সংখ্যালঘুদের করতে হবে।
পরিশেষে, ১৯৭১ সালে এই সংখ্যাগরিষ্ঠরা লড়াই করে সংখ্যালঘুদের থেকে আলাদা হয়ে গেছেন।
জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিমের স্মৃতিচারণে বারবার জেনারেল আইয়ুবসহ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর এ কে ফজলুল হকের আলোচনা এসেছে। এ কে ফজলুল হক ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোর প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। আর সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৬ সালে ‘দিলি¬ প্রস্তাব’ পেশ করেছিলেন যার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানকে একটি রাষ্ট্র বানানো হয়। জেনারেল আইয়ুব খান শুধু সোহরাওয়ার্দী নয়, ফাতেমা জিন্নাহকেও বিশ্বাসঘাতক অভিহিত করেন। সোহরাওয়ার্দী ও ফাতেমা জিন্নাহকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ অভিহিতকারী আইয়ুব খানের নামে রাওয়ালপিন্ডিতে একটি পার্ক রয়েছে। ওই আইয়ুব পার্কের কাছেই রয়েছে ফাতেমা জিন্নাহ উইমেন ইউনিভার্সিটি। আর কয়েক কিলোমিটার দূরে ইসলামাবাদে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং এ কে ফজলুল হক রোডও রয়েছে।
১৯৬৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ফাতেমা জিন্নাহকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইয়ে দিয়েছিল। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একে অপরের থেকে আলাদা হওয়া সত্ত্বেও সম্পর্কের অনেক বন্ধনে জড়িয়ে আছে। ১৯৬২ সালের প্রেসিডেন্টব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ার পর পাকিস্তানে ১৯৭৩ সালের পার্লামেন্টারি আইন চলছে। কিছু মানুষ পাকিস্তানকে প্রেসিডেন্টশাসিত ব্যবস্থার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তাদের মধ্যে সাবেক চিফ জাস্টিস ইফতেখার মুহাম্মদ চৌধুরী শীর্ষ তালিকায় রয়েছেন। তাদের সবার জাস্টিস মুহাম্মদ ইবরাহিমের গ্রন্থ পাঠ করা উচিত।
দৈনিক জং থেকে ভাষান্তর
ইমতিয়াজ বিন মাহতাব

যশোরের তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা
অধ্যাপক মো: মসিউল আযম

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে দেশবাসী তথা যশোরবাসীর কাছে এটা বিশেষ স্মরণীয় দিন। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এক তুমুল ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল চৌগাছা সীমান্তের জগনাথপুর গ্রামের মাঠে। এই যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হয়। তারা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পিছু হটে। দেশে প্রথম শত্রুমুক্ত হলো যশোর জেলার চৌগাছা। তাই এই দিনটি জাতির ইতিহাসে বড় গৌরবের দিন। স্বাধীনতার পর এই গ্রামের নামকরণ করা হয় মুক্তিনগর। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামেরই ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে আলতাফ হোসেন শহীদ হন এই জগন্নাথপুরের যুদ্ধে।
শহীদ আলতাফ হোসেন সরদার ১৯৫২ সালের ১৮ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ও মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। বড় ভাই আমীর হামজা (৭২) এই শহীদ পরিবারের হাল ধরেছেন। শহীদ আলতাফ চুড়ামনকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পরে হাইস্কুল থেকে ১৯৬৯ প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশের পর ১৯৭০-৭১ শিক্ষাবর্ষে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে যান এবং প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে উচ্চ প্রশিক্ষণ নেন বিহারের চাকুলিয়া সেনানিবাস ক্যাম্পে। প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেন। স্কুল জীবনে আলতাফ ছিলেন কৃতী ফুটবল খেলোয়াড়। হা-ডু-ডু খেলাতেও তার জুড়ি ছিল না। একটি মজার গল্প শোনান বড় ভাই আমীর হামজা। বাড়ির পাশেই চুড়ামনকাটি হাইস্কুলের বিরাট খেলার মাঠ।
মাঠে ছেলেরা খেলায় মশগুল। এই সময় পার্শ্ববর্তী সেনানিবাস থেকে কয়েকজন পাঞ্জাবি কুস্তিগীর সেনা মাঠে মহড়া দিতে আসে। এদের একজন বাঙালি ছেলেদের প্রস্তাব দেয় তার সাথে কুস্তি লড়তে। তার বিশাল চেহারা দেখে ভয়ে কেউ রাজি হয়নি। কিন্তু আলতাফ লড়তে চাইলেন। বড় ভাই তাকে নিষেধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। তাদের কুস্তি খেলা দেখতে দর্শকদের ভিড় জমে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে পাঞ্জাবি সেই কুস্তিগীরের পা উঁচুতে উঠিয়ে আছাড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন তিনি। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত দর্শকেরা আনন্দে হাততালি দিতে থাকে। ঘটনাটি তখন এলাকায় লোক মুখে রাষ্ট্র হয়ে যায়।
১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল। হানাদাররা তাদের বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। বাবা রজবালী সরদার একটি গাছি দা নিয়ে ছুটে যান প্রতিহত করতে। অবস্থা বেগতিক দেখে দৌড়ে পালিয়ে তিনি বাড়ির পাশে গোরস্থানে কবরের মধ্যে লুকিয়ে থাকেন। হানাদাররা কবরখানা তন্ন তন্ন করে খুঁজে অবশেষে সন্ধান পেয়ে তাকে সেই কবরের মাঝেই ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। শহীদ আলতাফ ছিলেন ১২ জন যোদ্ধার কমান্ডার। তার আরো বীরত্বের কাহিনী শোনান সহযোদ্ধা মহিউদ্দিন সরদার।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন (৬২) ১৯৭১ সালে ঢাকায় ভাই হাফিজ উদ্দীনের বাসায় থেকে ওয়েস্টা অ্যান্ড স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়তেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বড় সন্তান মাসুদুল আলম বিসিএস ক্যাডার (প্রশাসন)। বর্তমানে তিনি মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে যুব শিবিরে প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে সীমান্তের বয়রা ক্যাম্পে ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার নাজমুল হুদা ও মেজর আবুল মঞ্জুরের কাছ থেকে অস্ত্র গ্রহণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আলতাফ ও মহিউদ্দিন দেশের অভ্যন্তরে অভিযানে অংশ নেন। এর মধ্যে মথুরাপুর বিদ্যুৎ টাওয়ার ধ্বংস ও মেহেরুল¬ানগর রেলস্টেশনে অগ্নিসংযোগ উলে¬খযোগ্য। বিভিন্ন অভিযান শেষে আলতাফ ও মহিউদ্দিন দু’জনই আলতাফের খালার বাড়ি জগন্নাথপুর গ্রামে রাত্রি যাপন করছিলেন।
মিত্র বাহিনীর ৩০০ জনের একটি কোম্পানি সীমান্ত অতিক্রম করে জগন্নাথপুরে এসে জানতে পারে, গ্রামে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছে। ক্যাপ্টেন তাদের কাছে প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চান। দু’জনের একপর্যায়ে আদেশ দেন বেলচা দিয়ে পরিখা খননের জন্য। মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে তারা ২টি পরিখা খনন করে ফেলেন। এতে ক্যাপ্টেন খুশি হয়ে আলতাফকে একটি এসএলআর এবং মহিউদ্দিনকে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল প্রদান করেন।
২১ নভেম্বর সকাল ৭টা। ক্যাপ্টেন বাইনাকুলার দিয়ে দূরে দেখতে পান পাকিস্তানি সৈন্যরা একটি ট্যাংকের পাশে বসে নাশতা করছে। তিনি ও মহিউদ্দিনের কাছে জানতে চান, সব পরিখা খনন সমাপ্ত হয়েছে কি না। মহিউদ্দিনের হাতে একটি রকেট লাঞ্চারসহ থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল কাঁধে। সিগন্যাল পাওয়া মাত্রই শত্রুদের ট্যাংকে আঘাত করার ফলে ট্যাংকের চেইন বিচ্ছিন্ন হয়ে সেটি অচল হয়ে পড়ে। ওই মুহূর্তে অগণিত মর্টারের শেল এসে যুদ্ধের ময়দানে চার দিকে পড়তে থাকে।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট যুদ্ধরত অবস্থায় হঠাৎ একটি মর্টারের শেল এসে আলতাফের ঘাড়ে আঘাত হানে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সেখানেই শহীদ হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা! আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন সরদার (৬৭), তাকে বলা হতো ছোট আলতাফ। শহীদ আলতাফ ছিলেন দীর্ঘদেহী ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা মানুষ। শৈশবকালে সরদার গোষ্ঠীর এই দুই ছেলেকে এলাকার সবাই বলাবলি করতেন এরা দু’জন মানিকজোড়। একসাথে খেলাধুলা, স্কুলে যাওয়া, গোসল করা, সিনেমাও দেখতেন। দশম শ্রেণী পর্যন্ত একই স্কুলে সহপাঠী ছিলেন। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর গল্প করেই রাত ভোর হয়ে গেছে তাদের। দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে একই সাথে ভারতে গিয়ে টালিখোলা মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প হতে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন। পরে বিহারের চাকুলিয়া থেকে উচ্চ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ওই সময়ে তাদের গ্রামের আরো ২৩-২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণে ছিলেন।
প্রশিক্ষণকালীন সময়ে কমান্ডার সবার বিনোদনের জন্য একদিন প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করেন। সীমান্তের এপার থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দল বনাম ছাতিয়ানতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দল। ছাতিয়ানতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দল ৩-১ গোলে বিজয় অর্জন করে। ওই খেলায় শহীদ আলতাফ ২ গোল ও মহিউদ্দিন ১ গোল করেন। আমৃত্যু দুই আলতাফের বন্ধুত্ব ছিল অটুট। আলতাফ শহীদ হওয়ার পর অপর বন্ধু ছোট আলতাফ খুবই কান্নাকাটি করেন। যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর জগন্নাথপুর গ্রামে লাশ মাটিচাপা দিয়ে সেখানে একটি চিহ্ন রাখা হয়। যুদ্ধের সময় তার গায়ে ছিল খয়েরি রঙের সোয়েটার। এটা হয়েছিল তার দাফনের কাপড়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন মাস পর শহীদ আলতাফের হাড়গোড় এনে পুনঃ দাফনের ব্যবস্থা করেন। তারই সহযোদ্ধা বন্ধু আলতাফ একটি বস্তায় ভরে তা বয়ে আনেন। ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাটি স্কুলের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। এই মাজার নির্মাণে ইট, সিমেন্ট ও রাজমিস্ত্রির খরচ তিনি নিজে বহন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বন্ধুত্বের প্রতি এই সম্মান, ভালোবাসা, দরদ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। স্বাধীনতার পর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নেন। কলেজের একজন সাবেক ছাত্র হিসেবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আলতাফের জীবন আত্মোৎসর্গ করায় ম্যাগাজিনে তার একটি ছবির প্রয়োজন পড়ে। কলেজ কর্তৃপক্ষ শহীদের আত্মার স্মৃতির প্রতি এটি উৎসর্গ করেন। উৎসর্গ লিপিটি রচনা করেন কামরুজ্জমান আজাদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কারোর করুণা বা দয়ার দান নয়। শহীদ আলতাফের মতো নাম না জানা লাখো শহীদের এক সাগর রক্ত ও স্বজনহারা মা-বোনদের অশ্রু ও ইজ্জতের বিনিময়ে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বহু কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা তাই আমাদের অমূল্য সম্পদ।
লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী

গৌরবগাঁথা চৌগাছার ইতিহাস
শাহানুর আলম উজ্জ্বল

রক্তঝরা দিন এবং রাতের গল্প। যে গল্প নতুন প্রজন্মের মানুষ তেমন জানেনা। প্রতিদিন ভোর বেলা সূর্য ওঠে এটি যেমন চিরন্তন। তেমনি সেই সূর্যের আলোয় রাঙ্গানো থাকে হাজারো কাল মহাকালের ইতিহাস। হাসি, কান্না বেদনা ও রক্তস্নাত ইতিহাস। আমরা তেমনি এক ইতিহাস পাড়ি দিয়েছি। সেটা হলো স্বাধীনতার ইতিহাস, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তখনো এই ভূখন্ডে স্বাধীনতার সূর্য ওঠেনি। আমাদের ভাষা. সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং নিজস্ববোধের চেতনা লালন করলেও মর্যাদা দেয়া হয়নি। বারংবার অপদস্ত ও পদাঘাত করা হয়েছে। সেই অধিকারহীন মানুষগুলো একটি নতুন স্বপ্নে, নতুন সূর্যের স্বপ্নে, জেগে ওঠার স্বপ্নে ঘুরে দাঁড়ালো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হলো আপন হৃদয়ে রক্তের সঞ্চালন, জেগে উঠল প্রতিবাদ আর শৃংখল ভেঙ্গে ফেলার যুদ্ধের দামামা। হাজারও পথ পাড়ি দিয়ে, রাজপথের রাজনীতির পথচলা, তীব্র আন্দোলন ছাড়িয়ে অবশেষে ১৯৭১।
শুরু হলো স্বাধীনতার যুদ্ধ। যুদ্ধের ইতিহাসে কোন যুদ্ধই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। কিন্তু কিছু এলাকার মুক্তিযুদ্ধ বেশি মাত্রাই প্রতিফলিত হয় ইতিহাসের কারণেই। যুদ্ধের ধরন ও প্রকৃতির কারণে। তেমনি একটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খ্যাত উপজেলার নাম যশোরের চৌগাছা। এই মাটিতে হাতাহাতি, মল্লযুদ্ধ বা বেয়নেট যুগ্ধ সংঘটিত হয়। যে যুদ্ধ আর কোথাও হয়নি। এ ধরনের যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন। এখানকার যুদ্ধে নিহত হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ ও অগনিত সাধারণ জনগন। পাক যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত হবার ইতিহাস রয়েছে এই মাটিতেই। সেই গৌরবগাঁথা চৌগাছার যুদ্ধের ইতিহাস সংক্ষিপ্তভাবে তুলো ধরা হলো ।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষনের মধ্য দিয়ে চৌগাছার অঞ্চলে মানুষের মধ্যে যুদ্ধের উদ্দীপনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহযোগী মশিউর রহমান এ অঞ্চলের মানুষকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। এ সময় তিনি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে কর্মীসভাসহ নানা কর্মসূচী গ্রহন করেন। তাঁর সাথে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য রওশন আলী, তবিবর রহমান সর্দার, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী নূর বক্স, আবুল হোসেন, ফুলসারা গ্রামের মহাসীন মিয়া, বাদেখান পুর গ্রামের আবুল হোসেন মল্লিক, পুড়াহুদার সামসুল আলম, সিংহঝুলীর আলী কদর মোহাম্মদ সামসুজ্জামান, ফুলসারা গ্রামের শাহাজান কবির, দিঘলসিংহা গ্রামের কৃতি সন্তান ওয়ালী উল্লাহ, যাত্রাপুর গ্রামের নিতাই সরকার, জগদীশপুর গ্রামের আশরাফ হোসেন, হাকিমপুর গ্রামের দাউদ হোসেন খান, জগন্নাথপুরের সুজাউদ্দৌলাসহ অসংখ্য স্বাধীনতাকামী জনতা।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের ভূমিকা পালন করার কারনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে শহিদ মশিউর রহমানকে পাক হানাদার বাহিনী আটক করে। এরপর পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন আর সীমাহীন অত্যাচারে ২৩ শে এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। যুদ্ধের নিমিত্তে এ অঞ্চলের মানুষ প্রস্তুতি নেবার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে ভারতের বনগাঁর টালী খোলা, চাপাবেড়ে, বিহার চাকুলিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের ভর্তি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে মুক্তিযোদ্ধাদের ভর্তি করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এস এল আর, থ্রী নাট থ্রি, এল এম জি রাইফেল, এস এম জি অস্ত্র দেয়া হয়।
এ বছর মার্চ মাসের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের সীমান্ত পার হয়ে কাবিলপুর ও মাশিলার পথ ধরে চৌগাছায় আসে। মুক্তিযোদ্ধারা এলাকায় নানা কৌশলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যুদ্ধের সূচনা পর্বের আগেই পাকসেনারা তাদের গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে এই এলাকায় সার্বিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। পাকসেনাদের চৌগাছায় আসার খবরে মুক্তিযোদ্ধারা সলুয়া ব্রিজ ভেঙ্গে দেয়। যাতে এ এলাকায় তারা প্রবেশ করতে না পারে। একপর্যায় রাজাকারদের সহযোগিতায় এলাকার নিরীহ জনগন ওই ব্রিজ মাটি দিয়ে ভরাট করে। কিন্তু ব্রিজ ভরাটের পর আগত নিরীহ জনগনকে পাকসেনারা ব্রাস ফায়ার দিয়ে হত্যা করে। এখানে ১৭ জন নিহত হয় বলে জনশ্রুতি আছে। এরপর সলুয়া ব্রিজ পার হয়ে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা ২০ এপ্রিল চৌগাছা এলাকায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করে। বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। বিশেষ করে খোর্দ্দ সিংহঝুলী (মশিউর নগর) পুরোগ্রাম আগুন দেয়া হয়। পুড়িয়ে ঝারখার করা হয় গ্রামের বাড়িঘর, ধানের গোলা। পাকসেনারা ধারনা করেছিল এই গ্রামে শহীদ মশিউর রহমানের বাড়ি। তাই এই গ্রামকে পুড়িয়ে দগ্ধ করা হয়। সামনে যাকেই পায় তাকেই গুলি করে হত্যা করে।
পাকসেনাদের গুলিতে খোর্দ্দ সিংহঝুলী গ্রামের ১১ জনসহ সিংহঝুলী গ্রামের আব্দুর বারিক বিশ্বাসের ছেলে মতিউর রহমান ও বেড়গবিন্দপুর গ্রামের মমিনুর রহমান মারা যায়। এছাড়া চৌগাছা বাজারে বিভিন্ন আড়তঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে পাকসেনারা। চৌগাছার ডাকবাংলোসহ বিভিন্ন স্থানে পাকসেনারা ঘাঁটি গেড়ে সেখানে নির্যাতন চালায়। যুবতী মেয়েদের ধরে শারীরীকভাবে অত্যাচার শুরু করে। ১৯ নভেম্বর ভারতের বয়রা সীমান্ত দিয়ে সাজোয়া ট্যাঙ্ক ও ভারী অস্ত্র নিয়ে ভারতীয় যৌথ বাহিনী (মিত্র বাহিনী) কপোতাক্ষ নদ পার হয়ে এই এলাকায় প্রবেশ করে। এই দিন থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চৌগাছার বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের সাথে যুদ্ধ সংগঠিত হয়। স্বরুপদাহ ইউনিয়নে মাশিলার ফকির শাহের আকড়া, সঞ্চাডাঙ্গার কচু বিলের মাঠ এবং গরীবপুর পৃথকভাবে পাক বাহিনীর সাথে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। হাকিমপুর বাজার সংলগ্ন তৎকালীন কালীগঞ্জ থানার মান্দার বাড়িয়ার মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার ওলাদ উদ্দিনের নের্তৃত্বে পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ভারি অস্ত্র না থাকায় পিছু হটে আত্মরক্ষা করে। এই যুদ্ধে চন্দ্রপাড়া গ্রামের মজাহার আলী নিহত হন। অত্র এলাকায় চলতে থাকে যুদ্ধের দামামা। গ্রামের পর গ্রাম শুন্য হয়ে হয়ে যায়। মানুষজন দিগি¦দিক ছুটতে থাকে জীবনের ভয়ে। যেখানে সেখানে পড়ে থাকে নিরীহ জনসাধারণ ও গরু-ছাগলের মৃতদেহ।
তবে অত্র অঞ্চলের মধ্যে জগন্নাথপুর যুদ্ধটি এ অঞ্চলের বড় যুদ্ধ হিসাবে খ্যাত। এখানে মল্লযুদ্ধ (হাতাহাতি) বা বেয়নেট যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ফলে জগন্নাথপুরের ঐতিহাসিক আম্র কানন রণাঙ্গন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এখানকার যুদ্ধের ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে পৃথিবী বিভিন্ন দেশে সামরিক একাডেমিতে পাঠ করানো হয়। মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর সাথে পাক সেনাদের তুমুল যুদ্ধসহ মল্ল¬যুদ্ধ (হাতাহাতি) হয়। যেটা যুদ্ধের ইতিহাসে দেশের আর কোথাও হয়নি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে ২০ নভেম্বর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাকসেনারা সিংহঝুলী, মশিউরনগর মাঠ ও জগন্নাথপুরের উত্তরপাড়ায় সাজোয়া ট্রাংকসহ সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান নেয়। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয় জগন্নাথপুর ও গরীবপুর মাঠ সংলগ্ন চাঁড়ালের বাঁশ বাগানে ও তেঁতুলতলা এলাকায়। মূলত ২১ নভেম্বর ঈদের দিন থেকেই এখানে যুদ্ধের সূচনা হয়। নামাজের দিন হলেও খুশির পরিবর্তে চারপাশে নিস্তব্ধ নিরবতা বিরাজ করে। অজানা আতংক সকলের মধ্যে। এ অবস্থায় ঠিকমত কেউ ঈদের নামাজও পড়তে পারেনি। সকাল থেকেই শুরু হয় যুদ্ধ। পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায়। প্রচন্ড গুলির শব্দে চারদিক প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। জনসাধারণ দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকে। জীবন বাঁচানোর জন্য মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার নেশায় পাক সেনাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিত্র বাহিনী সাথে মুক্তি বাহিনী যুক্ত হয়ে যুদ্ধ শুরু করে। উভয়ের সম্মুখ যুদ্ধে ভারি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। একই সাথে ট্যাংক যুদ্ধ ঘোষণা করে উভয় পক্ষ। তুমুল সংঘর্ষে পাকসেনাদের ৭ টি ট্যাংক ধ্বংস করে দেয় মিত্র ও মুক্তি বাহিনী। পাকসেনারা কোনঠাসা হয়ে পড়ে।
একপর্যায় প্রথম দফায় এ যুদ্ধ শেষ হলে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরাস্থ করার জন্য শুরু করা হয় আকাশযুদ্ধ। মুহূর্তের মধ্যে পাক জঙ্গি বিমান জগন্নাথপুর মাঠসহ চৌগাছার আকাশ প্রকম্পিত করে তোলে। মুর্হুমুহু গুলিতে বিধ্বস্ত করার চেষ্টা করা হলেও ভারতীয় বিমানের কাছে পরাস্থ হয় পাক বিমান। বারবার বাঁধার মুখে পাক বিমান চৌগাছার আকাশে বেশিক্ষণ উড্ডয়ন করতে পারেনি। মিত্র বাহিনী দুটি বিমানকে ভূপাতিত করে দুজন পাইলটকে আটক করে। যুদ্ধ চলাকালীন উভয়ের গোলাবারুদ শেষ হলে এক পর্যায়ে জগন্নাথপুর আম্রকাননে শুরু হয় (হাতাহাতি) মল্লযুদ্ধ।
এ সময় উভয় পক্ষ অস্ত্রের বাট, বেয়নেট, কিল, ঘুষি, লাথি এমনকি কুস্তাকুস্তির মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে। দ্বিতীয় দফায় জগন্নাথপুর ও গরীবপুর মাঠে ২২ নভেম্বর এখানে পুনরায় শুরু হয় কামান যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ৯৬ জন পাকসেনা নিহত হয় বলে মুক্তিযোদ্ধারা ধারনা করেন। এ দিন মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্দিক আক্রমণ ও রণকৌশলে পাক সেনারা দিশেহারা হয়ে বিধ্বস্ত ৭ টি ট্যাংক, বাক্স ভরা মার্কিন চাইনিজ অস্ত্র ফেলে রেখে যশোর সেনানিবাস অভিমুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্ত হয় জগন্নাথপুর গ্রাম। জয়বাংলা স্লোগানে মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার মানুষ আনন্দ করে। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫৭ জন মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মধ্যে ১৯ জন নিহতের নাম পাওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন সুজাউদ্দৌলা, আসাদুজ্জামান মধু, আব্দুর রাজ্জাক, আবুল হোসেন, রেজাউল হোসেন, করিমন নেছা, মহিউদ্দীন, রহিমা খাতুন, ভানু বিবি, ছইরন নেছা, দেওয়ান মুন্সি, কফিল উদ্দীন, বিশু মন্ডল, খোকা বারিক, আলতাপ হোসেন, জহির উদ্দীন, হাসান আলী, আয়শা আক্তার ও তাহের আলী।
এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে পাশাপোল, সলুয়া, দশপাকিয়া, বুড়িন্দিয়া, বাড়িয়ালী, কাবিলপুর, গদাধরপুর, ঢেঁকিপোতা, হাকিমপুর, মশ্মমপুর, রাজাপুর, সাঞ্চাডাঙ্গা, কুলে, বর্নী অঞ্চলে পাক বাহিনীর সাথে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ৩ ডিসেম্বর আড়পাড়া, দূর্গাপুর, তেতুল বেড়ে ও চারাবাড়ির মাঠের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে মিত্র বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার মেজর জগৎ সিং এর নেতৃত্বে সুবেদার আয়ুব খান পাকসেনাদের ঘাটিতে ট্যাংক নিয়ে আক্রমন চালায়। এ যুদ্ধে পাকসেনা ও মিত্র বাহিনী প্রায় ৫০ জন সদস্য মারা যায়। এ যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সহযোগী হিসাবে অংশ নেন সৈয়দপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের আলী, কোটালিপুর গ্রামের সোহরাব হোসেন, নড়াইল জেলার লোহাগড়ার থানার রেজাউল ইসলামসহ ত্রিশজন মুক্তিযোদ্ধা। নানা আক্রমন আর পাল্টা আক্রমনের মধ্য দিয়ে এ এলাকায় যুদ্ধ চলে। চৌগাছার সকল যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ জনগন নিহত হন। এরমধ্যে সাধারণ জনগন সবচেয়ে বেশি। তবে নিহত হওয়া সকলের নাম উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এ পর্যন্ত নিহত যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন জগন্নাথপুর গ্রামের সুজাউদ্দৌলা, চৌগাছার ডা: বজলুর রহমান, রামকৃষ্ণপুরের মোসাদ্দিক আলী ও ইউনুচ আলী, যাত্রাপুরের জয়নাল আবেদীন. চন্দ্রপাড়ার মোজাহান আলী, কোটালিপুরের ইসলাম হোসেন, আব্দুল গফুর মাস্টার, আড়পাড়ার কাশেম আলী, মকছেদ আলী, খাইরুল ইসলাম, আফরা গ্রামের নূরুল ইসলাম, রামকৃষ্ণপুরের গোলাম কবির, উজিরপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, মনির হোসেন, সিংহঝুলী গ্রামের মতিয়ার রহমান, আঃ রহিম, আব্দুল করিম, আব্দুস শুকুর আলী, নুর হোসেন, বজলুর রহমান, রনক আলী, কোটালীপুর গ্রামের জুল ফিকার, হোসেন আলী, আক্কেল আলী, রওশন আলী, কয়ারপাড়ার ওপেন্দ্রমুখার্জী, জগনাথপুর আবুল হোসেন, মশ্মমপুর আয়ুব হোসেন, কাদবিলার বিজয় রায়, সাঞ্চাডাঙ্গার আয়না বেগম, আদুরী খাতুন, ডলী খাতুন, পঞ্চা বাবু, আড়ারদাহের কায়েম উদ্দিন, রায়নগরের বুদোই মন্ডল, কয়াপাড়ার ছানার উদ্দিন, সলুয়ার ওয়াজেদ আলী, লুৎফর রহমান, মানিক বিশ্বাস, আনছার আলী, জগদীশপুর জাহাঙ্গীর আলম, দিঘলসিংহার করিম কক্স, নারায়নপুরের রওশন আলী, কদমতলার ইদ্রিস আলী, চৌগাছার রবিউল ইসলাম, হাজরাখানা বাবর আলী, হাকিমপুর হালিম মৃধা, চৌগাছা সর্দার পাড়ার বাহার আলী, হাকিমপুর মৃত্যুঞ্জয় প্রমূখ।
চৌগাছার যুদ্ধের ইতিহাস গৌরবগাঁথা ইতিহাস। যুদ্ধের অনেক ইতিহাস এখনো বলাচলে অজানাই রয়ে গেছে। তবে যুদ্ধের ধরন ও মল্লযুদ্ধ (হাতাহাতি) সংগঠিত হওয়ায় জগন্নাথপুরের যুদ্ধটি এ অঞ্চলের লোমহর্ষক যুদ্ধ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। তাই মল্লযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষনের জন্য সাবেক জেলা প্রশাসক, পরিকল্পনা মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর জগন্নাথপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন মুক্তিনগর। জগন্নাথপুর গ্রামের আম্রকাননে কয়েক বছর আগে ভারতীয় সেনা প্রধান শংকর রায় চৌধুরী পর্যবেক্ষনে আসেন। ১৯৭১ সালে এ এলাকায় তিনি যুদ্ধের নেতৃত্বে দেন (সংক্ষিপ্ত। সূত্র : স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক ও প্রবীন জনসাধারণ)
শাহানুর আলম উজ্জ্বল, সাধারণ সম্পাদক প্রেসক্লাব চৌগাছা, যশোর।

যশোরের সম্মুখযুদ্ধে প্রথম শহিদ ওহাব আলী
রিমন খাঁন

পাক সেনার গোলায় নিহত যশোর শহরের ওহাব আলীকে এখনও দেয়া হয়নি শহীদের স্বীকৃতি। কখনো তালিকায় তার নাম আসলেও সরকারি গেজেটে ওঠেনি ওহাব আলীর নাম। শহরের ঘোপ এলাকার বাসিন্দা মৃত মফিজ ঢালির বড় ছেলে ওহাব আলী ৭১ এর মার্চের শেষ দিকে কয়েকজন বাঙ্গালী (তৎকালিন) ইপিআর সদস্যের সাথে শহরের কারবালা এলাকায় পাক সেনার গোলায় ঘটনাস্থলেই ওহাব আলী, ইপিআর সদস্য আতিয়ার, জামাল,শুকুর আলীসহ ৭/৮ জন মুক্তিকামী যুবক হতাহত হয়। দেশ স্বাধীনের পরে ছেলেকে শহীদ হিসেবে সরকারি গেজেটে নাম তোলার জন্যে অনেকের কাছে করুণ আকুতি ও ধর্ণা দিয়েও জীবদ্দশায় স্বপ্ন পুরন হয়নি হতভাগ্য পিতার মফিজ ঢালির। ইতো মধ্যে ওহাব আলীর মাও মৃত্য বরণ করেছেন। একনো বেঁচে আছে ওহাব আলীর তিন ভাই আসরাফ আলী, তৈয়ব আলী ও সাহেব আলী আর এক মাত্র বোন লাখি খাতুন। সাহেব আলী জানায় দেশ স্বাধীনের পরে তার জন্ম। তবে বাবা মায়ের কাছে শোনা গল্পে সে জেনেছে ঘটনার দিন দুপুরে বাঙ্গালী ইপিআরদের সাথে গোলাবারুদ আনা নেয়ার কাজ করছিল ওহাব আলী। এমন সময় আচমকা এক গোলা এসে পড়ে তাদের অবস্থানের উপর । ঘটনাস্থলে অনেকে প্রান হারালেও গুরুতর জখম হয় ওহাব আলী। পরে স্থাণীয়রা তাকে ফাতেমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন ওহাব আলী। তবে মৃত্যুর আগেই উপস্থিত সকলের কাছে নিজ ঠিকানা বলে যায় সে। সংবাদ পেয়ে পিতা মফিজ ঢালি কয়েকজন প্রতিবেশী আমির আলী, কালাম, সালাম ও আলী মিয়াকে সাথে নিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে আসে এবং নিজ বাড়ির কাছেই তাকে কবরস্থ করা হয়। এখন সেই বাড়ির উপর গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। এসময় প্রানভয়ে তার পরিবারের অন্য সদস্যরা এনায়েত পুরে অবস্থান নেয়। তাদের কাছে লোক মারফত খবর পাঠালেও সেদিন ওহাব আলীর মার কাছে ছেলের মুত্যুর খবর পৌছায়নি। শেষ পর্যন্ত অবস্থা বেগতিক থাকায় এক পর্যায়ে দাফন সম্পন্ন না করেই চলে যায় উপস্থিত সকলে। সন্ধ্যায় তাঁর বাবা মফিজ ঢালি একাই ছেলেকে কবরস্থ করেন। এবিষয়ে আমেরিকা প্রাবাসি মুক্তিযোদ্ধা খুরশীদ আনোয়ার বাবলু তাঁর মুক্তিযুদ্ধ-প্রামান্যকর্ম-কথা-কবিতা-চিত্রকর্ম নামক বইতে লিখেছেন দিন টা ছিল ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল দুপুর বেলা। ওহাব আলীরা একটি পিকআপ ভ্যানে করে কারবালার পাশে রেললাইনের ধারে মুক্তিযোদ্ধা বাঙালী পুলিশ, ইপিআর ক্যাম্পে খাবার ও গোলাবারুদ পৌছে দিতে যায়। কাছাকাছি স্থানে পৌছানোর সাথে সাথে পাকিস্তানি সেনাদের কামানের গোলায় ওহাব আলী, আতিয়ার, জামাল, কামালরা হতাহত হয়। ওহাব আলীর আর এক ভাই আশরাফ আলী জানায় দেশ স্বাধীনের পরে বঙ্গবন্ধু তৎকালিন যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শহীদ পরিবার হিসেবে তার বাবাকে নগর দুই হাজার টাকা ও এটি সদন দেয়। তবে সেই সনদ এখন আর তাদের কাছে নেই।
শহীদ ওহাব আলীর বয়স সে সময় ছিল ১৭ বছর এবং অবিবাহিত। তার পিতা মাতা কেউ আর বেচেঁ নেই। ছোট ভাই সাহেব আলী জানান আর্থিক সুবিধা বা চাকরীর প্রয়োজনে নয় নিজেদের কে শহীদের ভাই হিসেবে পরিচয় দেয়ার সেই গৌরব করতে ভাই এর (ওহাব আলী) শহীদের মর্যাদা চায়। এবিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন সেদিনের স্মৃতি চারণ করে বলেন দিন তারিখ স্মরণ নেই তবে মার্চের শেষ দিকে হবে। দুপুর আনুমানিক ২ টা। শহরের ভোলা ট্যাংক এলাকার ইপিআর ক্যাম্প থেকে গোলাবারুদ নিয়ে অন্য মুক্তিযোদ্ধা এবং বাঙ্গালী ইপিআর দের কাছে পৌছে দেয়ার কাজ করছিল ওহাব আলী। এসময় বৃষ্টির মতো সেল পড়ছিল। আমীর হোসেন বলেন ঠিক সে সময় তার অবস্থান ছিল শহরের পালবাড়ি এলাকায়। সেখান থেকেই খবর পেয়ে অনেক কষ্টে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘটনা স্থলে পৌছাই কিন্তু ততক্ষনের ওহাব আলীর লাশ নিয়ে গেছে তার বাবা মফিজ ঢালি। তিনি জানান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা না হলেও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এই মর্যাদার দাবি তো রাখতে পারি। ওহাব আলী আর এক ভাই তৈয়ব আলী জানান যুদ্ধের সময় তার বসয় ৫ বছর হবে। বড় ভাই ওহাব আলীর স্মৃতি খুব বেশি মনে নেই। তিনি জানান দেশ স্বাধীনের পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ পরিবার হিসেবে দুই হাজার টাকা দিয়েছিনে। এবং তিনি (আব্বা) ওহাব আলীকে শহীদের মর্যাদা দেয়ার জন্যে অনেকের কাছে গিয়েছেন কিন্তু কেউ কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। যশোরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, মুজিব বাহিনীর নেতারা ওহাব আলীর বিষয়টি জানলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একটি সুত্র জানায় তৎকালিন দ্ধিধা বিভক্ত ছাত্রলীগের মধ্যে রতন গ্রুপের সাথে ওহাব আলীর সখ্যতা ছিল। দেশ স্বাধীনের পরে প্রতিপক্ষের হাতে রতন হত্যা হয়। মুলত রতনের সাথে থাকার ঘোনিষ্ঠতা থাকার কারনে ওহাব আলীকে সেময়ে তাদের প্রতিপক্ষরা মেতে নিতে পারেনি। তাকে শাহীদের মার্যাদা দিতে কোন ভুমিকাও রাখেননি।

গল্প
শিকার
মুহাম্মদ শরীফ উল ইসলাম

রোববার সন্ধ্যায় আটলান্টার কোহিনূর রেস্টুরেন্টে প্রবাসী বাঙালিদের আড্ডাটা জমেছিল বেশ ভালই। বাংলাদেশের ভিক্ষাবৃত্তি বিদেশি রেস্টুরেন্টে মজাদার আড্ডার বিষয়ে রূপান্তরিত হল। একজন বলে উঠলেন ভিক্ষা বৃত্তি যতটা সহজ মনে হয় আসলে ততটা সহজ নয়। ভিক্ষাদাতাকে ভিক্ষা প্রদানে উৎসাহিত করতে দেহ ভঙ্গী ও বাচন ভঙ্গী দুইই ব্যবহারে ভিক্ষুককে পারদর্শী হতে হয়। কখন কিভাবে ভিক্ষা দাতার সামনে কী রকম অঙ্গ ভঙ্গী ও কখন কী বলতে হবে কিভাবে বলতে হবে অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে নাকি ইতিমধ্যে গোপনে কয়েকটা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং ভিক্ষুকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। তবে আফসোসের বিষয় বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তিতে বিকলাঙ্গ শিশুদের প্রাধান্য বেশি। এক অপরাধ চক্র শিশুদের অপহরণ করে তাদের হাট পা ভেঙ্গে বিকলাঙ্গ করছে এবং শহরের বিশেষ বিশেষ জায়গায় তাদের দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে। তাদের আয়ের সিংহভাগ এই চক্র ভোগ করছে।
আড্ডার উপসংহারে আমরা এই সিদ্ভান্তে উপনীত হলাম যে, এই পৈশাচিক অপরাধীদের খুঁজে বের করা উচিৎ এবং আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করান জরুরী প্রয়োজন। আমরা প্রবাসীরা এ ব্যপারে বড় ভূমিকা পালন করতে পারি।নিরুপায় শিশুদের এই সব শিকারির হাত রক্ষা করার জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করে ফেল্লাম।আগামি মাসে আমি দেশে যাচ্ছি তাই দেশের ভিক্ষা প্রথার উপর একটা সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত সচিত্র প্রতিবেদন কমিটির কাছে পেশ করার জন্য আমার উপর দায়িত্ব অর্পিত হল এবং কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে একটা ডিজিটাল ক্যামেরাও দেয়া হল। ফার্মগেট ওভার ব্রিজ থেকেই আমার কার্যক্রম শুরু করলাম। ওভার ব্রিজের নীচে ও উপরে অনেক ভিক্ষুক দেখলাম। এক জায়গায় দেখলাম এক অশীতিপর বুড়া পরনে লুঙ্গী ও পাজামা পরে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছে। অনেকগুলো লোক তাকে ঘিরে রয়েছে। বুড়া ক্ষীণ কণ্ঠে কি যেন বলছে। আমি নিচে যেয়ে হতবাক হয়ে গেলাম, অহ ড়ষফ যবষঢ়ষবংং সধহ নবমমরহম ুড়ঁৎ যবষঢ়. চষবধংব ফড়হ’ঃ মড় ধধিু. এরাব সব ংড়সব ঃধশধ ঃড় বধঃ.
বঙ্গদেশে বঙ্গভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজিতে ভিক্ষা? কারণটা কি? ভিক্ষা দাতাকে মোহিত করে ভিক্ষা দানে উৎসাহিত করানই ভিক্ষুকের কাজ। তাহলে নিশ্চয়ই এই বুড়া প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ভিক্ষুক। ইংরেজি ভাষায় কথা বলে ভিক্ষা দাতার মনে করুণার উদয় করা – এই ব্যক্তি এক সময় সম্ভ্রান্ত ছিল। ভাগ্যের কোন দুষ্ট চক্রে পড়ে বিপদে আপ তিত হয়েছে, তাকে সাহায্য করা যায়। তাই লোকে সাহায্য করছে। বার বার আফসোস করছে। হায়রে কপাল, হায়রে কপাল।
কিন্তু আমার ধারনা এই বুড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভিক্ষুক চক্রের আদ্যোপান্ত খবর এই বুড়ার পিছনে লেগে থাকলে পাওয়া যেতে পারে। বুড়ার কণ্ঠস্বর যখন আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম তখন মনে হল এটা আমার পরিচিত। চেহারাটা মনে হয় চেনা চেনা। অনেকক্ষণ নিরীক্ষণের পর মনে হল এ কি আমার বন্ধু জায়েদের বাবা হাজী জালাল শেখ। তা কি করে হয়? হাজী জালাল শেখ তো গ্রামের উচ্চবিত্ত মানুষ। জালাল শেখ চল্লিশ দশকের কোন এক সময় তিন চার বার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারেন নি। জাহাজের খালাসীর চাকরি নেন। খালাসী থেকে কালক্রমে জাহাজের মাস্টার হন। এলাকার সবাই তাঁকে মাস্টার হিসাবেই জানে। শোনা যায় জাহাজের তেল চুরি মালামাল চুরি করে অনেক পসার জমিয়েছেন। গ্রামে পাকা বাড়ি বাড়ি সংলগ্ন অনেক জমি জমা করেছেন।
আমাদের এলাকায় আট দশটা গ্রামের মধ্যে একটাই মাত্র হাই স্কুল। চার পাশের গ্রামের ছাত্ররা এই স্কুলে পড়াশুনা করে। আমি ৭ম শ্রেণির ছাত্র, তখন জালাল শেখের ছেলে জায়েদ আমার সহপাঠী হয়। জায়েদ্দের বাড়ি মধুমতী কুলে।আমার মামা বাড়ি যেতে হয় মধুমতী পার হয়ে। মামা বাড়ি যেতে মাঝে মাঝে জায়েদ্দের বাড়ি দু চার ঘনটা বেড়াতাম। জায়েদ্দের মধুমতী কুলের বিস্ত্রীত জমিতে সোনালী কাউন আমার মন কেড়ে নিত। আমরা ৭ম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষা শেষে দীর্ঘ ছুটি। ছুটি মানেই মামা বাড়ি যাওয়ার আনন্দ। আমি ও আমার কেবলই বড় বোন সকাল ১০তায় মামা বাড়ির পথে জায়েদ্দের বাড়ি গেলাম।দেখলাম জায়েদ তাদের ঘরের বারিন্দায় পাটি পেতে অংক করছে।পাসে মোড়ায় আমাদের সমবয়সী একটি মেয়ে বসা। খুবই সুন্দরী, অবশ্যই সে সেজেছিল সুন্দর করে। জায়েদ কে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কেরে? এটাকে নূতন দেখচি।জায়েদ কোন জবাব দিল না।জায়েদের মা এসে আমার বোনকে জড়িয়ে ধরল, আমার মাথায় হাত দিয়ে আদর করল। আমি বললাম কাকিমা এ মেয়েটা কে
কাকিমা বললেন, পিপীলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে।
আমি কিছুই বুঝলাম না।
কয়েকদিন পরে শুনলাম জায়েদ্দের বাবা এই মেয়েটিকে বিয়ে করেছে।
কলেজ ভার্সিটি জীবনে জায়েদকে সব সময় মনমরা দেখতাম। জায়েদ একদিন আমাকে বলল জানিস আনিস আমার বাবা তার নতুন বউকে নিয়ে জাহাজে সমুদ্রে ঘোরে, আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয় না। খুবই কষ্টে আছি । মাঠের ফসল বিক্রি করে মা আমার পড়াশুনার খরচ চালায়।মাঝে মাঝে মামাদের কাছে হাত পাততে হয়। পড়াশুনা শেষ একটা চাকুরী না পাওয়া পর্যন্ত আমার মার কোন সুখ নাই।
বুড়ার চেহারাটা মনে হয় জায়েদের বাবার মত। কণ্ঠস্বরও ঠিক বোঝা কষ্ট কর কিন্তু লোকটা ভিক্ষা করছে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।তবুও সাহস নিয়ে বুড়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞহাসা করলাম অৎব ুড়ঁ লধষধষ ংযবরশয, ভধঃযবৎ ড়ভ লধুবফ? বুড়া আমার দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ পরে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল। এবং বলল ও ধস ফবধফনড়ফু ড়ভ লধষধষ ংযবরশয, যব ফরবফ ১০ ুবধৎং ধমড়. এক রাশ প্রশ্ন মনে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম, এতক্ষণ আমি কোন স্বপ্ন দেখি নাই তো?
বিকেল বেলা চাপুলিয়ায় জায়েদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। দুর থেকে জায়েদের বাড়ির কোন ঠিকানা দেখলাম না। সেখানে দেখা যাচ্ছে ঘন অরণ্য। কাছে যেয়ে দেখলাম যেখানে জায়েদের বাড়ি ছিল সেখানে শাল সেকুন কাঠের বিশাল বাগান। বাগানের প্রবেশ পথে তিন চারটে সিমেন্টের বেঞ্চ। বেঞ্চে আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব কয়েকজন নিয়ে গল্পে মশগুল। চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে দেখামাত্র বললেন আরে আনিস যে? কেমন আছ, স্বাস্থ্য মাসাল্লাহ ভাল হয়েছ, তুমি কি আমার বাগান দেখতে এসেচ।তা একা এলে কেন? বউ বাচ্চা সাথে নিয়ে আসবে। আমার এই বাগান দেখতে তোমার ঢাকা কুমিল্লা সিটাগাং থেকে লোক আসে , তারা এখানে বনভোজন করে। আমার ইনশাল্লাহ ভাল ইনকাম হচ্ছে। গোপনে বিদেশী মাল বিক্রি করি। চেয়ারম্যান চাচা এখানে জায়েদ্দের বাড়ি ছিল না?
বুঝলে আনিস সবই বুদ্ধির খেলা, আমার তোমাদের মত প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নাই। ডিগ্রি না থাকলে কী হয়েছে ব্রেন তো আছে। ব্রেনের জোরে জালাল মাষ্টারের বাড়ি আজ আমার শখের বাগান। প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বড় কথা না। আমাদের প্রধান মন্ত্রীর কথা ধর, তাঁর কি কোন ডিগ্রি আছে, না নাই। অথচ প্রধান মন্ত্রী, কত ডক্টরেট, ব্যারিস্টার তাঁর ধামাধরা মন্ত্রী। তোমরা যারা ধর্ম ধর্ম করে লাফালাফি কর, তাদের কথাই ধর , ইসলামে নারী নেতৃত্ব নেই, তোমার নিজামই সাইদই পীর সাহেবরা কার নেতৃত্বে চলছে? মহিলা প্রধান মন্ত্রীকে কি তেল দিচ্ছেনা ? দিচ্ছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে দিচ্ছে। স্বাধীনতার ৩০ বছর পরও কি এসব রাজাকার ধর্ম ব্যবসায়ীরা দেশের মন্ত্রী হচ্ছে না। আসলে ওরা জানে কাকে কখন কী পরিমাণ তৈল দিতে হবে। ধর্মের নামে তৈল, বড়ই ধনা ণতরী , ১০০% কার্যকারিতা গ্যারন্টেট। তৈলের জোরেই ওরা টিকে আছে টিকে ঠাকবে। যুগে যুগে ওরা তৈল প্রদানে পারদর্শিতা দেখিয়েছে ভবিষ্যতে সে রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখবে। ওদের টিকি ছেড়ে কোন শালায়? দর্পণ কবিরের মত লেখকরা লেখনীর মাধ্যমে ওদের অণ্ডকোষ চেপে ধরলেও বাস্তবে ওদের অণ্ডকোষ চেপে ধরা অত সহজ নয়। আসল কথা হচ্ছে ব্রেন। নদীর এই আবহাওয়ায় আমার একটা বাগান করার শখ হল/ দাবার চাল চাললাম । এসব কাজে বেশী মাথা ঘামান লাগে না। জালাল মাষ্টারের একটা জোয়ান বউ ছিল। তা বোধ হয় তুমি জান। মাস্টারের ছেলে জায়েদ তো তোমার ক্লাশ মেট ছিল তাই না।
বুড়া মানুষের জোয়ান বউ, বুঝলে আনিস জোয়ান বউ হচ্ছে তোমার আগুনের ঢেউ। আমি এই ঢেউ নিয়ে খেলা করলাম। দিলাম মাগীরে কু পরামর্শ। বললাম শোন, শাহানা তুই হচ্ছিস উঠতি বয়সী মেয়ে, সামনে তোর সারা জীবন পড়ে আছে। তোর বুড়া নাগর আজ বাদে কাল যাবে কবরে। তখন তোর অবস্থা হবে কী? বুড়ার জোয়ান ছেলেপুলে তোকে তো কুত্তার মত তাড়িয়ে দিবে। আমার কথা মত কাজ কর/ বুড়োর সব সম্পত্তি ফাঁদে ফেলে তোর নামে লিখে নে।
পরের দিন ভোরবেলা নদীর ঘাটে বউটার হাত পা বেঁধে ফেলে রাখলাম। দিলাম জালাল মাস্টার ও তার বউ ছেলেমেয়ের নামে অঞঞঊগচঞ ঞঙ গটজউঊজ ঈঅঝঊ
আর যায় শালা কোথায়? একবারেই স্যালাইনের মত কাজ করল। মামলা মোকাদদমা থানা পুলিশের খরচ যোগাতে জালাল মাস্টার আমার কাছে পানির দামে জমি বিক্রি করতে লাগল।
কয়েকমাস পরে আসাদ গুণ্ডারে ৫০০ টাকা দিয়ে বউটারে খুন করালাম। দোষ চাপল জালাল মাস্টার ও তার ছেলেমেয়ের উপর। খুনের মামলায় বসত বাড়ি সব আমার কাছে বিক্রি করে দিয়ে কোথায় গেছে জানি না । শুনেছি হাজত খাঁটার পর বুড়াটা শহরে ভিক্ষা করে খায়। তাও নাকি শালা ইংরেজিতে ভিক্ষা মাগে।বুঝলে আনিস সবই তার কপালে ছিল। বুড়া বয়সে জোয়ান বউ, ভীমরতি সাঁই ভীমরতি। তোমাদের ঞঐজঊঊ ড আর কি। ডঊঅখঞঐ, ডওঘঊ আর ডঙগঊঘ সব ধবংশের মূল। আফসোস লাগে একই গ্রামের মানুষ, মুরব্বী বড় ভাইয়ের মত। পোলাপানগুলো অযথা জেল খাটছে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল,বাড়ির দিকে রওনা হলাম। চেয়ারম্যান বললেন বিদেশে থাক, টানার অভ্যাস আছে নাকি, আমার কাছে বিদেশী মাল আছে। ইচ্ছা হলে আর কিছুক্ষণ থাক। এক গ্লাস টেনে যাও।
বিদেশে থাকলেও ওটার অভ্যাস করতে পারি নাই।
তাজ্জবের কথা শোনালে, পানিতে থেকে পানি খাও না।
বাড়ির দিকে হেঁটে চললাম, কাকীমার মুখটা হৃদয়ে ভেসে ঊঠল,কানে বাজতে ছিল, পিপীলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে।