ইভ্যালির অগ্রযাত্রার দুই বছর

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥দেশের ই-কমার্স খাতে কার্যক্রম শুরুর দুই বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে ইভ্যালি ডটকম ডটবিডি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যাত্রার খুব অল্প সময়ে ই-কমার্স খাতে এক ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানটি। তৃতীয় বছরে পদার্পণকে ঘিরে দেশের ই-কমার্স খাতে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে চায় ইভ্যালি। একই সঙ্গে গ্রাহকদের জন্য আরো চমকপ্রদ সব অফার দিতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
    ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর ‘ইভ্যালি ডটকম ডটবিডি’ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে ইভ্যালি। এর পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশে আলীবাবা কিংবা অ্যামাজনের মতো একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা। পণ্যের বিক্রেতা এবং গ্রাহকের মধ্যে দামের যে পার্থক্য, সেটিকে ই-কমার্সের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা। গ্রাহকদের সাধ্যের মধ্যে ভালো মানের পণ্য দেয়ার উদ্যোগের নাম আজকের ইভ্যালি। উদ্যোগটি শুরুর পেছনে বর্তমান সরকারের চেষ্টায় যে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটেছে, তার অংশ হওয়ার ইচ্ছে কাজ করেছে।
    ইভ্যালিতে এখন প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে (ইভ্যালি ও ই-ফুড মিলিয়ে)। প্রতি মাসে পণ্য বিক্রি হচ্ছে সাত লাখের বেশি। এসব পণ্যের মধ্যে গ্রোসারি আইটেম, খাবার, বাইক, মোবাইল, টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, এসি, ফ্রিজের মতো হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও ফ্যাশন আইটেম বেশি বিক্রি হয়। এখন শুধু গ্রোসারি এবং খাবার মিলিয়ে প্রতিদিন ১৫ হাজারের বেশি অর্ডার প্রসেস করছে ইভ্যালি।
    ইভ্যালির আজকের পর্যায়ে আসার লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না। কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
    এ বিষয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল বলেন, বাস্তবতা হলো ব্যবসা মানেই চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা সবসময় আমাদের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় শ্রেণীর সাহায্য পেয়েছি। তারা সব সময় সব পরিস্থিতিতে আমাদের সমর্থন করে গেছেন। তাই আমি প্রথমেই বলব যে গ্রাহক ও বিক্রেতাদের ইভ্যালি তথা ই-কমার্সের ওপর আস্থা আনাটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ, যা আমরা সম্ভব করেছি।
    তিনি বলেন, ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসে যেমন গ্রাহক থাকতে হবে, তেমনি বিক্রেতাও থাকতে হবে। এখানে একসঙ্গে গ্রাহক ও বিক্রেতা উভয় শ্রেণীকেই রাখতে হয়। গ্রাহক এসে যদি দেখে যে বিক্রেতা নেই, তাহলে তারা পণ্য কিনতে পারবে না এবং আমাদের প্লাটফর্মে আর আসবে না। তেমনি বিক্রেতা এসে যদি দেখে যে আমাদের এখানে গ্রাহক নেই, তাহলে তারাও আমাদের ভালো কোনো ‘ডিল’ অফার করবে না। আমরা এ চ্যালেঞ্জ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্লাটফর্মে ৪০ লক্ষাধিক নিবন্ধিত গ্রাহক বা ক্রেতা এবং ২৫ হাজারের বেশি বৃহৎ ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের বিক্রেতা রয়েছেন। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পেছনে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের অনেক গ্রাহক বা বিক্রেতা এখন প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে যুক্ত হচ্ছেন। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের ডিজিটাল উন্নয়নের ফলে।
    শুরুতে গ্রাহক আকৃষ্টে ব্যাপক পরিসরে ক্যাশব্যাক ফরম্যাট বেছে নিয়েছিল ইভ্যালি, যা নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এখন ইভ্যালি ক্যাশব্যাক ফরম্যাট আগের তুলনায় অনেকটাই কমিয়েছে। এ ক্যাশব্যাক অনেকটা ‘রিওয়ার্ড পয়েন্ট’ বা ‘বোনাস পয়েন্ট’ হিসেবে প্লাটফর্মের ক্রেতাদের অফার করা হতো। ক্যাশব্যাক অ্যামাউন্ট দিয়ে গ্রাহকরা ইভ্যালিতেই অন্যান্য পণ্য অর্ডার করতে পারেন। এমনকি ইভ্যালির ফুড ডেলিভারি সেবা ই-ফুডে ক্যাশব্যাকের অর্থ দিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের খাবার ঘরে বসেই অর্ডার করে সরবরাহ নিতে পারেন।
    দুই বছর আগে মাত্র সাত থেকে আটজন নিয়ে যাত্রা করেছিল ইভ্যালি। এখন সেই পরিবারে সদস্য সংখ্যা সাড়ে আটশর বেশি। এর বাইরে ই-লজিস্টিকস বিভাগের অধীন পাঁচ হাজারের বেশি ‘ইভ্যালি হিরো’ প্লাটফর্মটিতে ফ্রিল্যান্স ভিত্তিতে কাজ করছেন। গ্রাহকদের চাহিদা এবং ব্যবসা পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
    ইভ্যালির দাবি, বাংলাদেশ ই-কমার্সের অনেক বড় একটি বাজার। দেশে আগামীতে ফাইভজি আসছে। সেক্ষেত্রে দেশের ই-কমার্স বাজারের আকার আরো বড় হবে। যে কারণে নিজেদের আকর্ষণীয় ব্যবসা মডেল নিয়ে আপাতত দেশের বাজারেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে ইভ্যালি। এখনোই নিশ্চিত না হলেও ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইভ্যালি দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
    গত দুই বছরে ইভ্যালি নজরকাড়া প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। ৪০০ থেকে ৫০০ বর্গফুটের অফিস স্পেসে কার্যক্রম শুরু করে এখন ৪০ হাজার বর্গফুটের অফিস নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ দুই বছরে শুধু মার্কেটপ্লেসে ইভ্যালিই নয়; এর সঙ্গে আরো কয়েকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান চালু করেছে ইভ্যালি। এসব প্রতিষ্ঠান হলো ই-ফুড, ই-বাজার ও ই-কানেক্ট।
    ইভ্যালি কার্যক্রম শুরুর তৃতীয় বছরে পদার্পণকে সামনে রেখে অর্ডারকৃত পণ্যের সরবরাহ নিয়ে গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানে বিস্তৃত পরিসরে উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রাহকরা যাতে অর্ডারকৃত পণ্য বিষয়ে সহজে অভিযোগ করতে পারে সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে ইভ্যালি। গ্রাহকরা এখন অ্যাপ, ই-মেইল (support¦evaly.com.bd), হটলাইন নম্বর এবং অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/evaly.com.bd) ও গ্রুপে (https://www.facebook.com/groups/EvalyHelpDesk) তাদের সমস্যা জানাতে পারেন। এছাড়া প্রতিটি অর্ডারের সঙ্গে ‘রিপোর্ট ইস্যু’ নামেই একটি অপশন যুক্ত করেছে ইভ্যালি। এ অপশনের মাধ্যমে গ্রাহক যে অর্ডারটি নিয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেটি সরাসরি এবং দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জানাতে পারেন। এরই মধ্যে ইভ্যালির জনসংযোগ বিভাগ থেকেও একটি পেজ (https://www.facebook.com/evalyprd) পরিচালনা করা হয়। এসব মারফতে আসা বিভিন্ন সমস্যা বা ইস্যু সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সেবা বিভাগ কিংবা কাস্টমার কেয়ার ডিপার্টমেন্ট আছে। এর বাইরে ইভ্যালির ‘ইস্যু রেজল্যুশন’ নামে একটি বিশেষায়িত টিম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তা এ টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গ্রাহকদের সমস্যাগুলোকে প্রাথমিকভাবে ‘অ্যাড্রেস’ করার জন্য ইভ্যালি একটি সোস্যাল মিডিয়া টিম রয়েছে। শুধু ইস্যু রেজল্যুশন এবং সোস্যাল মিডিয়া টিমেই শতাধিক কর্মী কাজ করছেন। ইভ্যালি এখন এসব টিমকে আরো বড় করার চেষ্টা করছে। এর ফলে গ্রাহকদের সমস্যাগুলো আরো দ্রুত জানতে পারা এবং সমাধান দেয়া সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা।
    এ বিষয়ে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ইভ্যালির প্লাটফর্মে আসা গ্রাহকদের প্রতিটি অভিযোগ আমরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখি। অনেক সময় সমস্যার ধরন ও পরিস্থিতির কারণে কিছু সমস্যার সমাধান একটু বিলম্বিত হয়, যা আমরা স্বীকার করছি। কিন্তু সমাধান হয় না, এমন অভিযোগ সত্য নয়। অনেক সময় পণ্য সরবরাহ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে আমরা অফারের দামের বাইরে গ্রাহককে ফুল রিফান্ড করি।
    কার্যক্রম শুরুর দুই বছরে সমালোচনা যতটুকু হয়েছে, তার চেয়ে অর্জনের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে ইভ্যালি। কভিড-১৯ মহামারীর সময় ই-কমার্সের মাধ্যমে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য সম্প্রতি ‘ই-কমার্স মুভার্স অ্যাওয়ার্ড (ইকমা)’ অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এ পুরস্কার প্রদান করেছে। এছাড়া চলতি বছরের শুরুর দিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক এশিয়া ওয়ান সাময়িকী ইভ্যালিকে বাংলাদেশের দ্রুতবর্ধনশীল ব্র্যান্ড এবং ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ রাসেলকে দ্রুতবর্ধনশীল নেতা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।