অ্যাপলকে হটিয়ে স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষ তিনে শাওমি

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥ বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আইফোন নির্মাতা অ্যাপলকে হটিয়ে শীর্ষ তিন নম্বরে উঠে এসেছে চীনভিত্তিক শাওমি। বাজারটিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং ও চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর ইয়াহু টেক।
    বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে গত প্রান্তিকে ডিভাইস সরবরাহ ৩৬ কোটি ৬০ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা এক প্রান্তিক আগের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি। তবে প্রান্তিকভিত্তিক ডিভাইস সরবরাহে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির দেখা মিললেও এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে স্মার্টফোন বাজারে সরবরাহ কমেছে ৪ শতাংশ।
    গত বছরের শেষদিকে কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর প্রাদুর্ভাব স্মার্টফোন বাজারের জন্য তীব্র অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল চীন হওয়ায় স্যামসাং ব্যতীত অ্যাপলসহ অন্য ডিভাইস নির্মাতাদের উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। কারণ ভাইরাসটির উত্পত্তিস্থল চীনের উহান প্রদেশ হলেও তা শুরুতে খুব দ্রুত চীনের অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চুক্তিভিত্তিক ডিভাইস নির্মাতা ফক্সকন ও পেগাট্রন কর্মীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল, যা উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত করে। পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে স্যামসাংয়ের দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের উৎপাদন কারখানার কর্মীরা আক্রান্ত হতে থাকেন। বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানটিও উৎপাদন কার্যক্রম সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল। যে কারণে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে সরবরাহ ও চাহিদা দুটোই কমে যায়।
    এ বিষয়ে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর তরুণ পাঠক বলেন, কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর ভয়াবহতা কমতে শুরু করায় চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে চীন এবং ভিয়েতনামে স্মার্টফোন উৎপাদন কার্যক্রম অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৮০ শতাংশ উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছিল। যে কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোবাইল ডিভাইসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনেকটা পূরণ সম্ভব হয়েছে।
    কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৭ কোটি ৯৮ লাখ ডিভাইস সরবরাহ করে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষ অবস্থান পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে স্যামসাং। তৃতীয় প্রান্তিকে ডিভাইস সরবরাহে দ্বিতীয় প্রান্তিকের চেয়ে ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং আগের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের চেয়ে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্যালাক্সি নোট ২০ ও ‘এ’ সিরিজের ডিভাইস দিয়ে ভারত ও পশ্চিম ইউরোপের মতো বাজারগুলোতে ভালো ব্যবসা করেছে স্যামসাং। ভারতের বাজারে টানা কয়েক প্রান্তিক শীর্ষ অবস্থান দখলে রেখেছিল শাওমি। তৃতীয় প্রান্তিকে শাওমিকে হটিয়ে ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন বাজারটিতেও শীর্ষ অবস্থান পুনরুদ্ধার করেছে স্যামসাং।
    বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে খারাপ সময় পার করছে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রান্তিকভিত্তিক ডিভাইস সরবরাহে ঘাটতি দেখা গেছে। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে হুয়াওয়ের ডিভাইস সরবরাহ কমেছে ২০ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ডিভাইস সরবরাহ কমেছে ১৪ শতাংশ।
    চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে একমাত্র উদীয়মান স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে নজরকাড়া প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে রিয়েলমি। ব্র্যান্ডটির প্রান্তিকভিত্তিক সরবরাহ প্রবৃদ্ধি ১৩২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে শাওমি জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৭৫ শতাংশ সরবরাহ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ১৩ শতাংশ দখলে নিয়েছে। এর সুবাদে ব্র্যান্ডটি স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপলকে হটিয়ে শীর্ষ তিনে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে।
    আফ্রিকা সাশ্রয়ী স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ বাজার। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আফ্রিকায় এককভাবে স্মার্টফোন সরবরাহ বাড়লেও সামগ্রিকভাবে মোবাইল ফোন সরবরাহ কমেছে ৬ শতাংশ। এছাড়া একই প্রান্তিকে বাজারটিতে ফিচার ফোন সরবরাহ ১১ দশমিক ২ শতাংশ কমে ২ কোটি ৯৪ লাখ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে। আফ্রিকার বৃহৎ দুই স্মার্টফোন বাজার হলো নাইজেরিয়া ও মিসর। উভয় বাজার জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে গত প্রান্তিকে স্মার্টফোন সরবরাহ কমতে দেখা গেছে।
    আফ্রিকার স্মার্টফোন বাজারে সাশ্রয়ী ডিভাইস সরবরাহ করে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে ট্রানশান। বাজারটিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে স্যামসাং ও হুয়াওয়ে। অঞ্চলটিতে এ দুই ব্র্যান্ডের বাজার দখল পৌঁছেছে যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৯ এবং ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
    শুধু আফ্রিকায় নয়; ভারত, রাশিয়া, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশসহ ক্রমবর্ধমান বাজারগুলোতে কার্যক্রম শুরু করেছে ট্রানশান। গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে কয়েকটি ব্র্যান্ডে ডিভাইস সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এগুলোর মধ্যে টেকনো ও আইটেল অন্যতম। লাগোস, নাইরোবি ও আদ্দিস আবাবার মতো শহরগুলোয় ট্রানশানের ফ্ল্যাগশিপ ব্র্যান্ড টেকনোর ফোন বিক্রি হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, চীনে ব্র্যান্ডটির কোনো কার্যক্রম নেই। যেখানে চীনের অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে হুয়াওয়ে, শাওমি প্রথমে তাদের নিজ দেশের বাজারে প্রভাব তৈরির পর অন্যান্য দেশে কার্যক্রম সম্প্রসারণে সফলতা পেয়েছে। অথচ নিজ দেশেই অচেনা ট্রানশান সেখানে সম্পূর্ণ আলাদা কৌশল অবলম্বন করে পেয়েছে সাফল্য।