কর্মসংস্থানে আরও উদ্যোগ দরকার

0

কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ দেশে যে হারে কর্মম জনশক্তি বাড়ে কাজের সুযোগ সে হারে বাড়ে না। তাই প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক জনশক্তি বেকার হয়। দিন যত যায় বাড়তেই থাকে এর সংখ্যা। রাজনৈতিক দলগুলো বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করে। বর্তমান মতাসীন দলও মতায় আসার আগে ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুত দিয়েছিল। বাস্তবে এমন প্রতিশ্রুতির কোনো ভিত্তি ছিল না ; সেটি অর্জিতও হয়নি। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি ল্য নেয়া হয়। এর সাথে আসলে সরকারের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের কোনো সামঞ্জস্য থাকে না। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, বাংলাদেশের বেকার যুবকদের জন্য হয় কৃষিকাজ, না হয় বিদেশে যাওয়াই কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হয়ে থেকেছে। বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশন অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি ল্য নির্ধারণ করেছে বলে খবরে জানা যায়।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি ১৯ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ল্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে দেশে ৮৪ লাখ ২০ হাজার এবং বিদেশে ৩৫ লাখ। প্রথম অর্থবছর ২০২০-২১ কর্মসংস্থান হবে ২২ লাখ ৮০ হাজার। পরের তিন বছরে গড়ে ২৩ লাখের বেশি করে এবং শেষ বছরে ২০২৪-২৫ কর্মসংস্থান হবে ২৫ লাখ ১০ হাজার বেকারের। জিইডি এই ল্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে একটি নির্ধারিত হারে জাতীয় আয় (জিডিপি) অর্জিত হবে ধরে নিয়ে। তাদের হিসাবে, গড়ে ৮ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি অর্জিত হবে এবং শেষ অর্থবছরে গিয়ে সেটি সাড়ে আট শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের পর বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধস নেমেছে। গত অর্থবছরে সরকার ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখায়। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এতটা হলে জাতীয় জীবনে এরকম দুরবস্থা নেমে আসার কথা নয়। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছে। অনেকের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সাধারণভাবে মানুষের আয় কমে গেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে।
২০১৬-২০ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মোট কর্মসংস্থানের ল্য ছিল এক কোটি ২৯ লাখ। পাঁচ বছর শেষে দেখা গেল, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৯৫ লাখ। সরকারের হিসেবে, পুরো পাঁচ বছরে দেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কাগজ-কলমে অন্তত দেখা গেছে, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলছে। অথচ মানুষের জীবনে অথনৈতিক উন্নতির ছাপ নেই। এই সময়ে ৩৫ লাখ মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে প্রবাসে না গেলে ল্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জিত হতো না। বাকিদের মধ্যে ২৫ লাখ ৮০ হাজার কৃষিতে নিয়োজিত হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের সাথে এ সংযোগ খুব সামান্য। ব্যক্তি উদ্যোগে বর্ধমান সেবা খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২১ লাখ ৪০ হাজার। শিল্প খাতে ১১ লাখ ৫০ হাজার বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা খুব ক্রিয়াশীল এমন দেখা যাচ্ছে না।
সম্ভবত মহামারি আক্রান্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে সরকার এবার আগের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় কর্মসংস্থানের ল্যমাত্রা ১০ লাখ কম নির্ধারণ করেছে। বর্তমান সরকার বেকার যুবকদের লোভনীয় আশ্বাস দিয়েছিল যদিও এখন সরকারের আগের সেই সুর আর নেই। সরকার বেশি করে বেকার যুবকদের স্ব-কর্মসংস্থানে উৎসাহী করছে। প্রত্যেকটি যুবককে একেকজন উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রকৃতপে একজন বেকারের প্রাথমিক ল্য এমনই হওয়া উচিত। তাকে এমনভাবে এগোনো দরকার যে, সে নিজে আয়ের ব্যবস্থা করবে। পারলে এর দ্বারা আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি যাতে হয়। অন্য দিকে, সরকারের উচিত, এই বিপুলসংখ্যক বেকার নিয়ে ভাবা। ব্যক্তি উদ্যোগে মানুষ যেভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সরকারকেও এসব উদ্যোগের সাথে সহযোগী হতে হবে। প্রবাসীদের প্রতি সরকারের বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার, তারা যাতে দেশের জন্য আয়-রোজগার করতে গিয়ে দেশের অন্যায্য ব্যবস্থার শিকার না হয়ে যান। একই সাথে বেকার সমস্যার সমাধানে দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে সরকারকে।