স্ত্রীকে উচ্চ শিক্ষিত করে নিজের স্বপ্নপূরণ করছেন নিরক্ষর ভ্যানচালক জামাল

0

এইচ. এম শফিউল ইসলাম, কপিলমুনি (খুলনা) ॥ জামাল গাজী হতদরিদ্র পরিবারে অভাবের মধ্যে মানুষ হয়েছেন। শিক্ষার সুযোগ পাননি, তবে তার আগ্রহ ছিল। তাই যখন তার বিয়ে হয় নবম শ্রেণির ছাত্রী রোকেয়ার সাথে,তখন স্ত্রীকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির রেজাকপুর গ্রামের ভ্যানচালক জামাল গাজী। তার স্বপ্ন স্ত্রী রোকেয়াকে নিয়ে শিক্ষা অর্জনের শেষ ভাগ পর্যন্ত যাবেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে যেন আকাশ ছুঁতে চান তিনি। টাকার অভাবে ভ্যানে সবার মটর থাকলেও জামাল গাজী পায়ে (প্যাডেল) ভ্যান চালান। বুঝতে শিখে ভ্যান চালানো ছাড়া অন্য কিছু করতে পারেন না জামাল। লেখাপড়া তিনি অন্যকে করতে দেখেছেন, কিন্তু নিজে করতে পারেননি। মনের ভিতর তার বাসনা ছিল একটি স্বপ্নের, তা হলো ভালবাসার বধূকে নিয়ে। জামাল গাজী পাইকগাছার কপিলমুনি ইউনিয়নের নাছিরপুর গ্রামের বিধবা রশিদার ছোট মেয়ে রোকেয়াকে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। এসময় জামাল তার পড়াশুনার স্বপ্নের কথা রোকেয়াকে বলেন। রোকেয়াও হতদরিদ্র বিধবা মায়ের সন্তান। তিনি স্বামীকে বলেন, ‘আমাকে স্কুলে যেতে দাও, তোমার স্বপ্ন আমি পূরণ করবো।’ সেখান থেকে ভ্যানচালক জামাল গাজীর সংসার সামলিয়ে রোকেয়া পড়াশুনা করতে শুরু করলেন স্কুলে। এখন সেই রোকেয়া বিএ পরীক্ষার্থী এবং এক সন্তানের জননী। করোনা কালীন পরীক্ষা বন্ধ, তাই রোকেয়া এলাকার গরিব ঘরের শিশুদের নিয়ে জামাল গাজীর বাড়িতে সকাল-বিকেলের পাঠশালা খুলে বসেছেন। এখানে ফ্রি শিক্ষা দান করা হয়। জামাল বলেন, ‘আমার পিতা ঈমান আলী গাজী খুবই গরিব। ইচ্ছা থাকলেও স্কুলে যেতে পারিনি। আমি যখন ভ্যানে করে শিক্ষার্থীদেকে স্কুল কলেজে নিয়ে যাই, তখন আমার মনে হতো আমি তো পারলাম না, আমার বিয়ে হলে তাকে পড়াশুনা করাবো। আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন রোকেয়ার একটা কাজ হলে আর ভ্যান চালাবো না, খুবই কষ্ট হয়।’ কপিলমুনি মেহেরুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার শম্পা ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, ‘ আমরা অনেকে সিনেমা বা নাটকে দেখি স্বপ্ন জয়ের গল্প। বাস্তবে জামাল-রোকেয়া দম্পতি আমাদের এলাকার দৃষ্টান্ত।’