ভাসমান এক্সেভেটরের অভাবে শুরু হচ্ছে না ভৈরব নদের যশোর শহর অংশে খনন কাজ!

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সহসা শুরু হচ্ছে না ভৈরব নদের যশোর শহরের মূল অংশের খনন কাজ। বর্ষা পেরিয়ে শুকনো মৌসুমের প্রায় মাঝামাঝি সময় চলে আসলেও এখনও দৃশ্যমান হচ্ছে না নদের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশের খনন কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ বলছে, ভাসমান এক্সেভেটরের অভাবে খনন কাজ শুরু হচ্ছে না। তবে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কীনা তা নিয়ে সন্দেহ ভৈরব সংস্কার আন্দোলনকারীদের।
২০১৮ সালে নদের পূর্বাংশে কনেজপুর গ্রাম থেকে খনন কাজ শুরু হয়। এরপর থেকে মানুষের মাঝে বিশ্বাস জাগতে থাকে ভৈরব নদ আবার প্রাণ খুঁজে পাচ্ছে। কিন্তু খনন কাজ যখন শহর অংশে এসে পৌঁছায় তখন অজ্ঞাত কারণে এর গতি শ্লথ হয়ে যায়। নদের শহর অংশের দড়াটানা ব্রিজের পশ্চিম অংশে খনন কাজ শুরু করলেও তা কয়েকদিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় বৃষ্টির অজুহাতে। অন্যদিকে এখনো পর্যন্ত ব্রিজের পূর্বের অংশে কোনো খনন কাজ শুরু করতে পারেনি পাউবো। বর্ষার আগে এই অংশে এক্সেভেটর দিয়ে মাঝে মধ্যে খোঁড়াখুঁড়ি করলেও শুকনো মৌসুমে এখন আর সেই তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ফলে আগামী ২১ সালের মধ্যেও প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ার শঙ্কা এখন সবার মাঝে প্রবল হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ভৈরব নদ খনন কাজে কোন ধরনের গাফিলতি করা হচ্ছে না। নদের শহর অংশের বাইরে কয়েক জায়গায় ড্রেজার মেশিং নামানো হয়েছে। এই অংশের খনন কাজ শুরু করতে এখন প্রয়োজন ভাসমান এক্সেভেটর। সেটি আনার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। আশা করছি, দু’এক সপ্তাহের মধ্যে ভাসমান এক্সেভেটর চলে আসবে। আর তখন খনন কাজ শুরু করা হবে। নদী আইনে শহরের এই অংশের খনন কাজ শুরু হবে কীনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিএস ম্যাপ রেকর্ড অনুযায়ী নদের যে অংশ খননের জন্য প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে সেই অনুযায়ী খনন করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অপর এক প্রশ্বের জবাবে তিনি বলেন, অনেক আগেই এ অংশে আমরা খনন কাজ করতে পারতাম। কিন্তু নদের এই অংশে বাসাবাড়ির ব্যবহৃত সব পানি এসে পড়ার কারণে পানি জমে কাদা সৃষ্টি হওয়ায় বর্ষার আগে সম্ভব হয়নি। যে কারণে চলতি মৌসুমে আগেভাগেই ভাসমান এক্সেভেটর দিয়ে খনন কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ। তিনি বলেন, এ ধরনের বক্তব্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত এই মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে যে ধরনের আধুনিক সরঞ্জামের প্রয়োজন তা সরবরাহ না করেই খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। ফলে এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বড় ধরনের ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। এর ফলে প্রকল্পের কাজ শ্লথ হয়ে যাচ্ছে আর সরকারের টাকা অপচয় হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের খনন কাজ কালক্ষেপণ হলে একদিকে যশোরের মানুষ তার কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবে, ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত এই বৃহৎ উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কোনো টালবাহানা না করে দ্রুত খনন কাজ শুরুর জন্য আহবান জানান। যশোরের ভৈরব নদ খনন ও নদের পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে যশোরের মানুষের দাবি দীর্ঘদিনের। এ দাবির প্রেক্ষিতে ২৭২ কোটি টাকা ব্যয় ধরে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব নদ অববাহিকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় নদের ৯২ কিলোমিটার এলাকা খনন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে (এলজিইডি) সাথে নিয়ে নদের দুই তীরে ইকো পার্ক ও ফুটপাত নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পাউবো। ইতিমধ্যে শহর অংশে ভৈরব নদের তীরে সৌন্দর্য বর্ধন ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে খনন কাজের শ্লথগতি সবাইকে হতাশ করছে।