সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৬ টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নারায়ণগঞ্জের পাইকারি বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। লাফিয়ে বাড়ছে ভোজ্যতেলটির দাম। এ ধারাবাহিকতায় গত ১০-১৫ দিনের মধ্যে জেলার নিতাইগঞ্জ পাইকারি বাজারে খোলা বিক্রি হওয়া সয়াবিন তেলের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১৬ টাকা বেড়েছে। মণে বেড়েছে ৬৪০ টাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও সয়াবিন তেল—দুটো পণ্যের দাম বাড়তির পথে রয়েছে। একই সঙ্গে শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় পাম অয়েল বেচাকেনা কমে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে সয়াবিন তেলের পাইকারি বাজারে। নিতাইগঞ্জে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ভোজ্যতেলটির দাম।
গতকাল নিতাইগঞ্জ পাইকারি বাজার ঘুরে প্রতি মণ (৪০ কেজি) সয়াবিন তেল ৪ হাজার ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। সেই হিসাবে প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের দাম পড়ে ১০৪ টাকা। ১০-১৫ দিন আগেও স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৩ হাজার ৫২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কেজিপ্রতি ভোজ্যতেলটির দাম ছিল ৮৮ টাকা। অর্থাৎ নিতাইগঞ্জ পাইকারি বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে মণে ৬৪০ টাকা। কেজিপ্রতি ১৬ টাকা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পোপীনাথ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী দিলীপ সাহা বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে চাহিদা বাড়লেও মিল গেটে সয়াবিন তেলের কোনো সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেলটির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এর পরও দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের বাড়তি দামকে চিহ্নিত করেন তিনি। দিলীপ সাহা আরো বলেন, করোনা মহামারীর কারণে চলতি বছরের বড় একটা সময়জুড়ে সয়াবিন আমদানি বিঘ্নিত হয়েছে। জুলাই-আগস্ট নাগাদ আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হলে কৃষিপণ্যটির চাহিদা বেড়ে যায়। এর জের ধরে বাড়তি দামে সয়াবিন আমদানি করতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে সয়াবিন তেলের পাইকারি দামে।
নিতাইগঞ্জে ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ী ও মনির স্টোরের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বলেন, আর্ন্তজাতিক বাজরে কাঁচামালের বাড়তি দামের কথা বলে মিল গেটে আগের তুলনায় কিছুটা বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। তাই পাইকারি পর্যায়েও ভোজ্যতেলটির দাম বেড়েছে। তবে প্রতি বছরই শীত মৌসুমে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ে। কেননা শীতে পাম অয়েল জমে যায়। ফলে ক্রেতারা এ সময় পাম অয়েল কিনতে চান না। স্বাভাবিকভাবেই পাম অয়েলের বিকল্প হিসেবে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। বাড়ে ভোজ্যতেলটির দামও। এবারও শীতের শুরুতে চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী থাকায় পাইকারি বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে।
তবে এ যুক্তি মানতে নারাজ নিতাইগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী আরিফিন রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম বেড়েছে, এটা সত্য। আবার শীত মৌসুমে প্রতি বছরই সয়াবিন তেলের বাজার চাঙ্গা হয়—এমন যুক্তি ফেলে দেয়া যায় না। তবে প্রতি বছর শীতের সময় ভোজ্যতেলটির দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৪-৫ টাকা বাড়ে। এবার এক ধাক্কায় ১৬ টাকা বেড়েছে। এটা অস্বাভাবিক। ভোজ্যতেলটির সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারা ভূমিকা রাখছে তা খুঁজে বের করা দরকার।
এ পরিস্থিতিতে পাইকারি বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে সরকারি নজরদারি জোরদার করার আহ্বান জানান আরিফিন রহমান। তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার পর সরকার তত্পর হয়ে নজরদারি জোরদার করেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ রকম ব্যবস্থা সয়াবিন তেলের বাজারেও করা প্রয়োজন। মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি কেউ যাতে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য সয়াবিন তেলের বাজারে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। তা নাহলে খুচরা ব্যবসায়ীরাও এর সুযোগ নেবেন।
বাজার ঘুরে এমন আশঙ্কার সত্যতা মিলেছে। নিতাইগঞ্জ পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ১০৪ টাকায় বিক্রি হলেও নারয়ণগঞ্জের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল ১২০-১২২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে আসতে আসতেই সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ১৬-১৮ টাকা বেড়ে গেছে।