যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে রক্তপাত এবং সম্পদহানি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চীন একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জের প্রতিনিধিত্ব করে। আমি বহু শ্রমঘণ্টা চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ব্যয় করেছি এবং আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমাদেরকে কিসের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে। বৈশ্বিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর বিস্তার ঘটিয়ে চীন দীর্ঘ খেলা খেলছে। এজন্য তারা চীনের বাইরে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক মডেলের বিস্তার ঘটাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে। এদিকে ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যারা ঘনিষ্ঠতম মিত্র, সেটা কানাডা থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত সবাই তার চোখে হয়ে উঠেছে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আর সেটা করতে গিয়ে তিনি এসব মিত্র দেশের সঙ্গে অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং নৈরাজ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করেছেন। এভাবে আমাদের অংশীদারদের কাছ থেকে মার্কিন অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার পরিধিকে সংকুচিত এমনকি বিচ্ছিন্ন করার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প আমাদের দেশের পক্ষে প্রকৃত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক হুমকি মোকাবিলা করার সামর্থ্যকে কমিয়ে দিয়েছেন। চীনের বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখানোর কোনো দরকার নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। চীন যদি তার পথেই চলতে থাকে, তাহলে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তি এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি হরণ করবে। তারা একই সঙ্গে তাদের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকি দেবে। এর ফলে চীনা কোম্পানিগুলো একটা অন্যায্য সুবিধা পেয়েই চলবে। এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি এবং শিল্পে তারা তাদের খবরদারি বজায় রাখার চেষ্টা করবে।
চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং তার পীড়নমূলক আচরণ প্রতিরোধের জন্য মিত্রদের নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে। এটাই হবে চীনকে মোকাবিলার সব থেকে কার্যকর কৌশল। যদিও জলবায়ু পরিবর্তন, পরমাণু বিস্তার রোধকরণ এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কেও মার্কিন অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জিডিপি’র প্রতিনিধিত্ব করে। এরপর আমরা যখন আমাদের সহযোগী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একত্রিত হবো, তখন আমাদের শক্তি বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হবে। আর তখন সেই বৈশ্বিক অর্থনীতির অর্ধেকের বেশি শক্তিকে চীন অগ্রাহ্য করে পার পাবে না। আর সেটা আমাদেরকে পরিবেশ থেকে শ্রম, বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং ট্রান্সপারেন্সি বা স্বচ্ছতার বিষয়গুলোতে নিয়মনীতি অনুযায়ী চলার ক্ষেত্রে আমাদেরকে উল্লেখযোগ্য সুযোগ-সুবিধা এনে দেবে, যাতে এসব বিষয়গুলোয় গণতান্ত্রিক স্বার্থ এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটতে পারে।
টেবিলের সম্মুখভাগে প্রত্যাবর্তন
আমাদের পররাষ্ট্রনীতির এজেন্ডা এমনভাবে নির্ধারণ করা হবে, যা কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরায় টেবিলের সম্মুখভাগের আসনে নিয়ে যায়। যাতে বৈশ্বিক হুমকিসমূহকে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের অবস্থানে থেকে তার মিত্র এবং অংশীদারদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করার কৌশল প্রণয়ন করতে পারে। বিশ্বের একার পক্ষে এটা সংগঠিত করা সম্ভব নয়। গত ৭০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি, আইন, বিধি-বিধান, চুক্তি সম্পাদন, জাতি রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির গাইড লাইন দেয়া এবং সম্মিলিতভাবে বিশ্বের জন্য নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির রূপরেখা তৈরি করতে ভূমিকা রেখেছে কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা ট্রাম্পে এসে থমকে গেছে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতকাল সারা বিশ্বে যে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেটা যদি আজ ট্রাম্পের মতো করে অপহৃত হতে দেয়া হয়, তাহলে দুটো বিষয় ঘটবে। প্রথমত, অন্য কোনো রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে নিবে। কিন্তু সেটা এমনভাবে নিশ্চয়ই হবে না, যা আমাদের স্বার্থ এবং মূল্যবোধকে এগিয়ে নিয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, কারো পক্ষেই হয়তো সেই শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব হবে না। আর তখন বিশৃঙ্খলা সেই জায়গা পূরণ করবে। এর যেকোনো একটাই ঘটুক না কেন, সেটা আমেরিকার জন্য ভালো হবে না। আমেরিকান নেতৃত্ব অবশ্যই অভ্রান্ত নয়। তারা ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারা অনেক রকমের ভুল-ভ্রান্তি করেছেন। অনেক বেশি ক্ষেত্রে আমরা একেবারেই আমাদের সামরিক শক্তির উপরে বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। আমরা নিজস্ব শক্তিসমূহকে পুরোপুরি আহরণ এবং তাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা না করে আমরা সামরিক শক্তির ওপর ঝুঁকেছি। ট্রাম্পের বিপর্যয়কারী পররাষ্ট্রনীতি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অসঙ্গতিপূর্ণ যাত্রাপথ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। যা কিনা মার্কিন কূটনীতির ভূমিকাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। আমি মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষায় কখনোই দোদুল্যমান হবো না। যখন প্রয়োজন পড়বে তখন শক্তি প্রয়োগ করবো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যতো ভূমিকা আছে, তার পুরোটাই পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু তারমধ্যে সর্বাধিনায়কের যে ভূমিকা সেটার মতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনোটিই নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে বিশ্বের সব থেকে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। এটা যাতে অব্যাহত থাকে, আমি তা নিশ্চিত করবো। এই শতাব্দীর যত চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবিলায় আমরা আমাদের সামরিক বাহিনীতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করবো। এই শতাব্দীই শেষ শতাব্দী নয়। কিন্তু শক্তি প্রয়োগ হবে সর্বশেষ হাতিয়ার, কোনোভাবেই প্রথম নয়। এটা কেবলমাত্র প্রয়োগ করা হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক স্বার্থকে রক্ষায়, যখন সেই লক্ষ্য হবে স্পষ্ট এবং অর্জনযোগ্য। আর সেটা আমেরিকান জনগণের বোঝাপড়া এবং সম্মতির ভিত্তিতে। যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে অকথিত রক্তপাত এবং সম্পদহানি। যেমনটা আমি দীর্ঘকাল ধরে এই যুক্তি দিয়ে আসছি যে, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধ থেকে আমাদের অধিকাংশ সৈন্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এবং সেখানে আমাদের মিশনকে সংকীর্ণ গণ্ডিতে নিয়ে আসতে হবে। যেমন আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট বা আইসিসকে পরাজিত করা আমাদের উচিত হবে। কিন্তু ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের প্রতি মার্কিন সমর্থন তুলে নিতে হবে। দেশে এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে আমাদেরকে অবশ্যই সন্ত্রাস দমনে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যে সংঘাতে জয়ী হওয়া যাবে না, তার কাছ থেকে আমরা দূরে থাকবো। কারণ তা আমাদেরক অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ, যাতে আমাদের বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার, তা থেকে মনোযোগী হতে আমাদের সামর্থ্য কমিয়ে দেয়। এবং আমেরিকান শক্তির অন্যান্য উপাদানগুলোর পুনর্গঠন, যা খুবই দরকারি, সেটা করা থেকে আমাদের নিবৃত্ত করে।
আমরা একই সঙ্গে শক্তিশালী এবং স্মার্ট হতে পারি। আমাদেরকে অবশ্যই ব্যাপকভিত্তিক, উন্মুক্তনীতির ভিত্তিতে হাজার হাজার আমেরিকান সেনাকে বিদেশে মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। তার পরিবর্তে আমাদেরকে অভিন্ন শত্রুর মোকাবিলায় স্থানীয় অংশীদারদের সমর্থনে মাত্র কয়েকশ’ স্পেশাল ফোর্স মোতায়েন এবং গোয়েন্দা শক্তি ব্যবহার করতে হবে। এই দুই অবস্থা বজায় রাখতে পারার মধ্যে পার্থক্য অনেক। কারণ ছোট পরিসরে যদি সামরিক মিশন মোতায়েন করা হয়, তাহলে তা টেকসই হয়। শুধু সামরিকভাবেই নয়, অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবেও সেটা আমাদের জাতীয় স্বার্থের অগ্রগতি অধিকতর ভালোভাবে নিশ্চিত করে। অবশ্যই কূটনীতি হওয়া উচিত আমেরিকান শক্তির প্রথম হাতিয়ার। ওবামা-বাইডেন প্রশাসনে কূটনীতির ক্ষেত্রে যে বিরাট অর্জন ঘটেছিল, সেজন্য আমি গর্বিত। কারণ আমরা তখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি কার্যকর করতে পেরেছি। পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা মহামারির অবসানে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পেরেছি। এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ইরানকে বাধ্য করতে মাইলফলক অর্জনসহ বহুক্ষেত্রে বহুজাতিক সমঝোতা করতে পেরেছি। কূটনীতি এমন একটি বিষয়, যা কেবল ধারাবাহিক করমর্দন এবং ক্যামেরায় ঘনঘন ক্লিক নয়। এটা এমন একটা ক্ষেত্র যা আন্তঃদেশীয় সম্পর্ককে মজবুত এবং গঠন করে। অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করে। আর সংঘাতের জায়গাগুলোকে এড়িয়ে চলতে এবং তাকে একটা ভালো ব্যবস্থাপনার মধ্যে এনে দেয়। উত্তম কূটনীতির জন্য দরকার শৃঙ্খলা। একটি সমন্বিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া এবং অভিজ্ঞ ও সামর্থ্যবান পেশাদারদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিকেই সমস্যা সমাধানের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলবো। কূটনৈতিক কোরের সদস্যদের উপরে আরো বেশি বিনিয়োগ করবো, যা ট্রাম্প প্রশাসন বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকে পুনরায় প্রকৃত পেশাদারদের হাতে ফিরিয়ে দেবো।
কূটনীতিতে দরকার গ্রহণযোগ্যতা, তার বিশ্বাসযোগ্যতা, যার প্রতি ট্রাম্প আমাদেরকে বিমুখ করেছে। পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সংকটকালীন সময়ে একটি জাতির মুখের কথা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ট্রাম্প সাহেব কি করেছেন? তিনি একের পর এক ট্রিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নীতির পর নীতি বদলে ফেলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার ঐতিহ্যগত দায় দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে এনেছেন। বড় কিংবা ছোট সব বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন এবং বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারকে দেউলিয়া করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প একইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত গণতান্ত্রিক মিত্র, যাদেরকে তার প্রয়োজন সব থেকে বেশি, তাদের থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। তিনি মিত্র জোটকে বিরক্ত ও বিব্রত করেছেন। তিনি এমনভাবে ন্যাটোর সঙ্গে আচরণ করেছেন, যাতে মনে হবে এটা একটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত গ্যাং। ন্যাটোকে আমাদেরকে অবশ্যই ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। যেমনটা আমি ওবামা প্রশাসন পরিচালনার সময় গর্বের সঙ্গেই আশ্বস্ত করেছি যে, ন্যাটো সদস্যদেরকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে। অবশ্য এই পদক্ষেপটির কৃতিত্ব ট্রাম্প এখন নিজের বলে দাবি করছেন। জোটকে ডলার এবং সেন্ট দ্বারা পরিমাপ করতে বসেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার অবশ্যই পবিত্র। এটা আংশিক বা খণ্ডিত হতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার হৃদয়ে অবস্থান করছে ন্যাটো। এবং এই জোট উদার গণতান্ত্রিক আদর্শের একটি চালিকাশক্তি। এটা মূল্যবোধের জোট, টেকসই এবং শক্তিশালী। এটা এমন কোনো অংশীদারিত্বের নয়, যা কিনা জবরদস্তি কিংবা অর্থের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি আমাদের এই ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব পুনরুজ্জীবনের থেকেও বেশি কিছু করতে চাই। আমি তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এই বিশ্বের জন্য এমন কিছু করতে চাই, যা হবে এক নতুন কল্পনা। ক্রেমলিন ভয় পায় একটি শক্তিশালী ন্যাটোকে। কারণ আধুনিক ইতিহাসের সব থেকে কার্যকর রাজনৈতিক সামরিক জোটের নাম হচ্ছে ন্যাটো। আমাদেরকে অবশ্যই এই জোটের সদস্যদের সামরিক সামর্থ্য জিইয়ে রাখতে হবে। একই সঙ্গে তারা যাতে অপ্রথাগত হুমকি মোকাবিলায় সামর্থ্য রাখে, সেটাও দেখতে হবে। অপ্রথাগত হুমকির মধ্যে রয়েছে- দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয় হাতিয়ারকরণ, মিথ্যা তথ্য এবং সাইবার চুরি। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘনের যে প্রকৃত মূল্য, তার দায়ভার আমাদেরকে অবশ্যই রাশিয়ার ওপর আরোপ করতে হবে। রুশ নাগরিক সমাজের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে হবে। এই নাগরিক সমাজ পুনঃপুনঃ সাহসিকতার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন ক্লেপটোক্র্যাটিক (যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আড়ালে জনসম্পদ পাচার করে) কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বারংবার উঠে দাঁড়াচ্ছে। আমাদেরকে অবশ্যই অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। যারা কিনা আমাদের মূল্যবোধ রক্ষা করে চলে, এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয় বোকা বনে যাবে না। এটা বরং আমাদেরকে অধিকতর নিশ্চয়তা দেবে। দেবে অধিকতর সাফল্য। আমরা আমাদের নিজেদের শক্তির অধিকতর বিকাশ ঘটাবো। গোটা বিশ্ব জুড়ে আমাদের উপস্থিতির আরো সমপ্রসারণ ঘটাব। এবং ইচ্ছুক অংশীদারদের সঙ্গে বৈশ্বিক দায়িত্বশীলতাকে আমরা আরো তাৎপর্যমণ্ডিত করব। আমাদের দরকার হবে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বাইরের গণতান্ত্রিক বন্ধুদের সঙ্গে যৌথভাবে সামর্থ্য বৃদ্ধির চেষ্টায় শামিল হওয়া। এবং এটা করতে গিয়ে আমাদেরকে অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিতে পুনরায় মনোযোগ দিতে হবে। ইন্ডিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত আমাদের অংশীদারিত্বকে গভীরতর করতে হবে। এর লক্ষ্য হবে অংশীদারিত্বমূলক মূল্যবোধ জোরদার করা, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। আমাদেরকে অবশ্যই ইসরাইলের নিরাপত্তায় ইস্পাত দৃঢ় অঙ্গীকার বজায় রাখতে হবে এবং লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় আমাদের বন্ধুদেরকে সংহত করতে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যাতে তারা বৃহত্তর গণতান্ত্রিক নেটওয়ার্কের মধ্যে আসতে পারে। এবং ওইসব অঞ্চলের সহযোগিতামূলক সুবিধার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সারা বিশ্বের প্রতি আস্থার পুনরায় জাগরণ ঘটাতে হবে। আর এটা চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই প্রমাণ দিতে হবে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা বলে, তারা তা করে এবং যা তারা করে, সেটা তারা বলে। এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যখন আমাদের এই সময়ের বিষয়গুলোকে যখন সংজ্ঞায়িত করার প্রশ্ন আসে। আর এসবের মধ্যে অবশ্যই রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিক যুদ্ধের নতুন হুমকি এবং ধ্বংসাত্মক প্রযুক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই মানবজাতির অস্তিত্বগত হুমকি- জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে হবে। আমরা যদি এটা যথাযথভাবে না করতে পারি, তাহলে অন্য আর কোনো কিছুই ম্যাটার করবে না। আমি অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক এবং জরুরি বিনিয়োগ নিশ্চিত করবো যাতে করে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন গ্যাস নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় আসে। এবং গঠিত হয় একটি ক্লিন এনার্জি অর্থনীতি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবল মাত্র ১৫% বৈশ্বিক নিঃসরণ সৃষ্টি করে। তাই আমাদের অর্থনৈতিক এবং নৈতিক কর্তৃত্ব দিয়ে বিশ্বকে আমরা এই বিষয়ে যথা পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে এগিয়ে নেব। বাইডেন প্রশাসনের প্রথম দিনই আমি এটা করবো এবং তারপর বিশ্বের যারা শীর্ষস্থানীয় কার্বন নিঃসরণকারী তাদেরকে একটা শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাব। রাষ্ট্রগুলোকে তাদের অভিপ্রায় জাগিয়ে তুলবো এবং অগ্রগতির দিকে ধাবমান করবো। আমরা নিজেদেরকে প্রয়োগযোগ্য অঙ্গীকারসমূহের মধ্যে আবদ্ধ করবো, যা কিনা বৈশ্বিক নৌ পরিবহন এবং বিমান চলাচলের মাধ্যমে তৈরি হওয়া নিঃসরণ হ্রাস করবে। অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর দিকে নজর রাখবো যাতে যখন আমরা নিজস্ব অঙ্গীকার রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকবো, তখন তারা যাতে আমাদের ক্ষতি না ডেকে আনতে পারে। এরমধ্যে অবশ্যই থাকবে চীনের উপরে এই চাপ প্রয়োগ করা, তারাই যেহেতু বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী রাষ্ট্র, তাই তাদেরকে অবশ্যই কয়লা রপ্তানিতে ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই অন্য দেশে দূষণের আউটসোর্সিং বন্ধ করতে হবে। কারণ তারা বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে নোংরা জীবাশ্ম জ্বালানি সংক্রান্ত আউটসোর্সিং প্রকল্পে অর্থ ঢালছে।
[ফরেন পলিসি (মার্চ-এপ্রিল ২০২০ সংখ্যা) থেকে নেয়া]