ছোট ভাইয়ের মামলা, তার সনদ ও নাম ব্যবহার করে চাকরি বড় ভাইয়ের!

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছোট ভাই মো. আসাদুজ্জামান। তিনি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তারই শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় নানা সংস্থার উচ্চপদে চাকরি করেন বড়ভাই মো. সামসুজ্জামান। ছোটভাই মো. আসাদুজ্জামানের জাতীয় পরিচয়পত্র ও নাগরিক সনদপত্রও জাল করে ব্যবহার করেছেন তিনি। কর্মস্থলে এতোদিন নিজেকে মো. আসাদুজ্জামান হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন মো. সামসুজ্জামান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বড়ভাই মো. সামসুজ্জামানের প্রতারণা ধরতে পেরে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। গত সোমবার যশোরের আদালতে তিনি এই মামলা করেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছেন।
মো.আসাদুজ্জামান যশোর শহরের বকচর হুশতলার মো. আব্দুর রশিদের ছেলে। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে বর্তমানে তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুরে কর্মরত। তার বড় ভাই মো. সামসুজ্জামান বর্তমানে শার্শা উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামে শ্বশুর মো. সামছুল আলমের বাড়িতে বসবাস করছেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আসাদুজ্জামানের অভিযোগ, তার বড় ভাই মো. সামসুজ্জামানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। অপরদিকে তার নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি। বড়ভাই মো. সামসুজ্জামান জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তার (বাদী) এইচএসসি, বিএসসি ও এমএসসি পরীক্ষার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ব্যবহার করে এবং নিজেকে মো. আসাদুজ্জামান পরিচয়ে জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেডে টেরিটোরি ম্যানেজার পদে চাকরি নেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। এর আগে ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৬ জুন পর্যন্ত মো. সামসুজ্জামান একইভাবে জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড যশোর ডিপোর অধীন ঝিনাইদহের মহেশপুর-২ মার্কেটে সিনিয়র ফিল্ড অফিসার পদে চাকরি করেন। এছাড়া একইভাবে জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ইসকাইয়েফ বাংলাদেশ লিমিটেডে (এসকেএফ) মেডিকেল সার্ভিসেস অফিসার হিসেবে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত চাকরি করেন মো. সামসুজ্জামান। শুধু তাই নয়, মো. আসাদুজ্জামানের নাগরিক সদনপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে নিজেকে ‘মো. আসাদুজ্জামান’ পরিচয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক যশোর শাখায় একটি হিসাব নম্বর খোলেন মো. সামসুজ্জামান। এই হিসাব নম্বরের মাধ্যমে তিনি ব্যাংক থেকে বেতনের টাকা উত্তোলন করতেন। বিষয়টি জানতে পেরে ২০১৮ সালের ২৬ জুন মো. আসাদুজ্জামান লিখিতভাবে অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই হিসাব নম্বর বন্ধ করে দেয়। অপরদিকে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডে কর্মরত থাকাকালীন মো. আসাদুজ্জামান পরিচয়দানকারী মো. সামসুজ্জামান ওই কোম্পানির টাকা আত্মসাত করেন। এ জন্য গত ২ অক্টোবর গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কর্মকর্তারা বকচরের বাড়িতে গিয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করেন। এ সময় মো. আসাদুজ্জামান নিজেকে প্রকৃত ‘মো. আসাদুজ্জামান’ হিসেবে পরিচয় দিলে বড়ভাই মো. সামসুজ্জামানের সকল জালজালিয়াতি ফাঁস হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর বকচরের বাড়িতে মো. সামসুজ্জামানকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ছোটভাই মো. আসাদুজ্জামানের কাছে তার অপরাধের কথা স্বীকার করেন।