জোয়ারে ভাসে মোংলার ১০ গ্রামের মানুষ

0

মোংলা সংবাদদাতা॥ সুন্দরবনের বুক চিরে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে মোংলা ও পশুর নদী। এ নদীটি উজানে ছুঁয়েছে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা, আর অপর পাড়ে খুলনার দাকোপ। পশুর নদী ছাড়াও বনের অপরপ্রান্ত হতে বয়ে আসা শাখা নদী শ্যালা ও মোংলা-ঘষিয়াখালী নদী প্রাকৃতিকভাবে ঘিরে রেখেছে মোংলার জনপদ। এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে চিলা, চাঁদপাই ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন ছুঁয়ে গেছে ওই তিন নদী। আর এসব ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে অনেক উন্নয়ন হলেও উপকূলীয় এ জনপথে সরকারিভাবে কোনও বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। এ অবস্থায় জোয়ারের পানি থেকে মুক্তির জন্য স্থায়ী বেড়বাঁধ চান স্থানীয়রা। জানা যায়, একটি বেসরকারি সংস্থা প্রায় একযুগ আগে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের সীমান্ত থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ের জয়মনির ঘোল পর্যন্ত আংশিক বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। বর্তমানে চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর আবাসন এলাকা থেকে শুরু করে জয়মনির ঘোল শ্যালার নদীর মোহনা পর্যন্ত বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই করুণ। কানাইনগর থেকে চিলা খাল পর্যন্ত যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল এখন তার চিহ্নও নেই। কোথাও কোথাও বাঁধের সীমারেখা একহাত। এ অবস্থায় পশুর নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের দুর্দশা লাঘবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, একের পর এক ঝড়-জলোচ্ছ্বাস আর নদীর স্রোত, পাড় ভাঙা-গড়ার খেলায় এ জনপদের বাসিন্দারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বছরের পর বছর ধরে বেড়িবাঁধ না থাকার দুর্ভোগ চললেও জেলা, উপজেলা কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেই। ফলে প্রতি বছর বর্ষা আর ঝড় জলোচ্ছ্বাসের মৌসুমে পশুর নদীর পেটে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও জনবসতি। লবণ পানি প্রবেশ করে ঘের ও পুকুর ভেসে কোটি কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হচ্ছে। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ফণি, বুলবুল পরবর্তী সর্বশেষ ছোবল হানা আম্পান এ জনপদের মানুষকে নিঃস্ব করেছে। উপজেলার কানাইনগরের বাসিন্দা ভ্যানচালক মো. হাবিবুর রহমান, জেলে আ. রহিম, মোখলেছুর রহমানসহ একাধিক ভুক্তভোগী ব্যক্তি জানান, পশুর নদীর জোয়ারের প্লাবনে ত্রাণ চাই না, মাথা গোঁজার ঠাঁই ও জনবসতি রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। চাঁদপাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, জলোচ্ছ্বাস এবং দুর্যোগের সময় এখানকার ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্থায়ীভাবে এখানে যদি কিছু না করা হয়, নদী ভাঙন থেকে এলাকা রক্ষা করা যাবে না। কাজেই এখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ একান্ত প্রয়োজন। মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পশুর নদীর তীরবর্তী মানুষের নিরাপত্তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কানাইনগর থেকে বড় একটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি আগামী বছর নাগাদ এ বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাগেরহাট জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলার জয়মনির ঘোল থেকে রামপাল ও মোড়েলগঞ্জের সন্ন্যাসী পর্যন্ত ৯৫ কিলেমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্প গৃহীত হলে লবণ পানি প্রতিরোধসহ কৃষকরা উপকৃত হবেন বলে জানান তিনি।