হায়দরাবাদকে হারিয়ে প্রথম ফাইনালের স্বাদ দিল্লির

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ টস জিতলে এখানে প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়াটাই যেন অঘোষিত রীতি। কারণ রাতের শিশির পরে বোলিং করে ম্যাচ জেতার পথে বড় এক বাধা। দিল্লি ক্যাপিটালস টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে প্রথমেই দিয়েছে সাহসের পরিচয়। আর কথায় বলে না ভাগ্য সাহসীদেরই সঙ্গ দেয়! ওয়ার্নার-উইলিয়ামসনদের সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ১৭ রানে হারিয়ে আইপিএলের ফাইনালেই উঠে গেল দিল্লি। ১৩ বারের প্রচেষ্টায় প্রথম ফাইনালের স্বাদ! ১০ নভেম্বরের ফাইনালে চারবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মুখোমুখি তারা। ওপেনার হিসেবে একেবারেই ব্যর্থ পৃথ্বী শ’কে বাদ দিয়ে দিল্লি শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে পাঠায় মার্কাস স্টয়নিসকে। এটাই ছিল ‘মাস্টার স্ট্রোক’। ধাওয়ান-স্টয়নিস ওপেনিং জুটি ৮.২ ওভারে তুলে নেয় ৮৬ রান। দিল্লি ৩ উইকেটে ১৮৯ রানের বড় স্কোর গড়েছে ওই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। সঙ্গে কাজে লাগিয়েছে প্রতিপক্ষের মিস ফিল্ডিং ও ক্যাচ ফেলার সুবিধা। সেটি ধরলে দুশো পেরিয়ে যাওয়াই উচিত ছিল দিল্লির। সেটি হতে দেয়নি দুই পেসার সন্দীপ শর্মা ও নটরাজনের নিয়ন্ত্রিত ডেথ বোলিং। তাছাড়া আম্পায়ারের ভুল সিন্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করলে হয়তো বাকি ৯টি বল থেকে আরও কিছু রান করে তিন অঙ্কের কাছাকাছি যেতেন ধাওয়ান। ধাওয়ানই দিল্লির স্কোরের মূল নির্মাতা, সন্দীপের বলে এলবিডব্লিউ ঘোষিত হওয়ার আগে ম্যাচের সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেছেন ৬ চার ও ২ ছক্কায়। তিন রানে মাথায় সন্দীপের বলে মিড অনে জেসন হোল্ডার ক্যাচ ফেলেছেন স্টয়নিসের। সেই স্টয়নিস রশিদ খানের লেগব্রেকে বোল্ড হওয়ার আগে ২৭ বলে ৩৮ করেছেন ৫ চার ও ১ ছক্কায়। ধাওয়ানের পর ব্যাটিংয়ে বড় অবদান শিমরন হেটমায়ারের, ২২ বলে ৪ চার ও এক ছক্কায় ৪২ করে অপরাজিত থেকে গেছেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান।
হায়দরাবাদের দুঃখের নাম স্টয়নিস। নির্বাচকদের বিচারে এই অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডারই ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ৩৮ রানের অনুপ্রেরণাদায়ী ওই ইনিংসের পরে বোলিংয়ে ৩ উইকেট। পাওয়ার প্লের মধ্যে নেন প্রিয়ম গার্গ ও মনীশ পান্ডের উইকেট দুটি। মোক্ষম সময়ে ফেরান এলিমিনেটর ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও ব্যাটখানাকে চওড়া করে তোলা কেন উইলিয়ামসনকে। অফ স্টাম্পের বাইরে ওয়াইড অফ-কাটার করেন স্টয়নিস, তুলে মেরে ডিপ কভারে কাগিসো রাবাদাকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৪৫ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৭ রান করেন উইলিয়ামসন। যখন উইকেটে ছিলেন ১৯ বলে করতে হতো ৪৩ রান এবং সেটি খুবই সম্ভব মনে করাচ্ছিলেন কিউই অধিনায়ক। উইলিয়ামসন যাওয়ার পর গত রঞ্জি ট্রফিতে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারা আবদুল সামাদও চোখ রাঙাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯তম ওভারে সামাদের সঙ্গে রশিদ খান ও শ্রীবৎস গোস্বামীকে আউট করেন রাবাদা। ম্যাচটি ওখানেই শেষ। শেষ ওভারে ২২ রান তোলার অলৌকিক কাজটা করতে পারেননি শাহবাজ নাদিম ও সন্দীপ শর্মা। ১৭২ রানে থেমে যায় ১৩তম আইপিএলে হায়দরাবাদের সাহসী অভিযাত্রা। টানা চার ম্যাচ জিতে তারা উঠে গিয়েছিল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে। ২০১৬ সালের মতো আবারও দেখতে শুরু করেছিলে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। তবে হায়দরাবাদের বদলে দিল্লি ফাইনালে ওঠায় আইপিএলের আপামর দর্শক হয়তো খুশিই হয়েছে। দল তাদের কোনওবারই খারাপ হয় না। তারপরও ভারতের রাজধানীর নামের ফ্রাঞ্চাইজিটি আগে কখনও ফাইনালে উঠতে পারেনি! অবশেষে তরুণ অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের হাত ধরে সেখানে গেল প্রথমবারের মতো। কিন্তু প্রায় অজেয় চেহারার মুম্বাইকে টক্কর দিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিততে গেলে নিজেদের খেলাটাকে অনেক ওপরে তুলতে হবে দিল্লিকে। আবার কেইবা বলতে পারে ফাইনালে কী হয়! ২০ ওভারের ক্রিকেটে ফেবারিট বলে কিছু আছে নাকি?
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দিল্লি: ২০ ওভারে ১৮৯/৩ (ধাওয়ান ৭৮, হেটমায়ার ৪২*, স্টয়নিস ৩৮, আয়ার ২১, রশিদ ১/২৬, সন্দীপ ১/৩০) ও হায়দরাবাদ: ২০ ওভারে ১৭২/৮ (উইলিয়ামসন ৬৭, সামাদ ৩৩, পান্ডে ২১, গার্গ ১৭, রাবাদা ৪/২৯, স্টয়নিস ৩/২৬)।