দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি বাসদের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনায় দুর্দশাগ্রস্ত গরিব-মধ্যবিত্তের জন্য রেশনব্যবস্থা চালু ও লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, নারী-শিশু ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচার, দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারক লিপি দিয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী)। উল্লিখিত দাবির পাশাপাশি দলটির পক্ষ থেকে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ বাজেয়াপ্ত, শ্রমিক ছাঁটাই-বেতন কর্তন বন্ধ, রাষ্ট্রীয় পাটকল চালু, চাষিদের ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় ক্রয় বাড়ানো, রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক ক্রসফায়ার-গুম-নির্যাতন বন্ধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিপীড়নমূলক ধারা বাতিল এবং করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি মওকুফসহ ১২ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রঘোষিত ‘দাবি মাস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার (১ নভেম্বর) রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং সারাদেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জহিরুল ইসলাম, নাঈমা খালেদ মনিকা, মাসুদ রানা, জয়দীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ। সমাবেশের পর একটি মিছিল পল্টন-গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করে। দলের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল শেরেবাংলা নগরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাসে দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা আজ বিপর্যস্ত। সংক্রমণ মোকাবিলায় ব্যর্থ সরকার জনগণকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছে, যারা মরার মরবে ও যারা বাঁচার বাঁচবে। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো প্রধান শহরেই বেশিরভাগ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই-এর মতো প্রাথমিক জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থা নেই, আইসিইউ-এর জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। দুই মাস লকডাউনেই দেশের বেশিরভাগ পরিবার অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। কাজ বন্ধ থাকলে অল্প কিছুদিন চলার মতো সঞ্চয় নেই বেশিরভাগ মানুষের। করোনাজনিত অর্থনৈতিক মন্দার অজুহাতে ছাঁটাই-বেতন কর্তন চলছে, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বাড়ছে। প্রবাসীরা অনেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসছেন।
তারা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ২৫টি রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ করে দিয়ে ৬০ হাজার শ্রমিককে এক ধাক্কায় বেকার করে দিয়েছে, পাটচাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ভুতুড়ে বিদ্যুৎবিলের বোঝা, বর্ধিত পানির বিল-গাড়িভাড়ায় মানুষ দিশাহারা। অর্থনৈতিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমজীবী মানুষ-কৃষক-নিম্নবিত্তকে সহায়তা দেোয়ার পরিবর্তে সরকার প্রধানত শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে। এই মহামারির সময়েও যে লাগামহীন দুর্নীতি-প্রতারণা ও জালিয়াতি হতে পারে, সেই নজির স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনাকারীদের দমনে গ্রেফতার-নিপীড়ন চালাচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত ২ বছরে হাজারের বেশি মামলা হয়েছে, দেড় হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর সিনহার মৃত্যু, মাদক দমনের নামে শুধুমাত্র ওই জেলায় ‘ক্রসফায়ারে’ দুই শতাধিক মানুষ হত্যা, এসব ঘটনায় উঠে এসেছে— এদেশে সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে মানুষের জীবন কতটা নিরাপত্তাহীন। বেআইনি আটক, গুম, হয়রানিমূলক মামলা, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন, মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়, সভা-সমাবেশে বাধাদান- এসব চলছেই।