২৪ তম প্রতীষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যার কবিতাগুচ্ছ

0

হারানো প্রেম
মিজানুর রহমান তোতা
বহুদিন পর পর পর তুমি পুরানো ডেরায় ফিরে এলে
ভালো হলো নতুন স্বপ্ন দেখবো দুজনে মিলে
রসবোধের ছবি
ধুয়ে মুছে আঁকি।
জীবনছন্দ চিন্তার সম্ভার রূপ প্রেম ভালোবাসা
বিস্তীর্ণ ভুবনে নীরবে নিভৃতে অনবদ্য রচয়িতা।
ক্লান্তিহীন দেহে সুখ স্বপ্নের বীজ বপনে মুগ্ধ
হৃদয়ের গহীনে নাড়া দেয় প্রেমগন্ধে সিক্ত
কবিতার প্রেম অফুরন্ত
খুঁজে পাওয়া যায় দিগন্ত।
হারানো কবিতাকে পেয়েছি ফিরে
ভাবছি জীবন কাটাবো তাকে ঘিরে
কবিতার প্রেম সত্যিই মধুর
ছন্দে ছন্দে শব্দের সমাহার।
রসের হাঁড়িটা ভরে দেয়
আপন করে কাছে নেয়
বোধ অবোধের নির্যাস কোথায় লুকিয়ে থাকে
শরীরে তুফান তোলে অমূল্য লাবণ্যে ঘিরে রাখে।
ব্যাথা বেদনা লাঘবে পারদর্শী
কবিতা করে তোলে মর্মস্পর্শী
কোনরূপ কার্পণ্য নেই হাতের ছোঁয়ায় অবিরত
মাথাভর্তি হাজারো শব্দ কথা জন্ম দেয় কবিতা।
কিলবিল করে সমস্ত অনুভুতি
ভাবনাহীন দর্শন দুঃস্বপ্নের স্মৃতি।
সুখানন্দে হারানো ভালোবাসার ডালিটা ভরপুর
নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম স্বাদ গন্ধেরপ্রেম।
ব্যতিক্রমী চিন্তার ফসল
নিখাঁদ ভালোবাসার দোল।
শিকলে বন্দি কবিতা হয়েছো মুক্ত
অটুট বন্ধনে কবিকে করো যুক্ত।
তুমি কবির কবিতা যুগ যুগ থাকো আপন ভুবনে
লেখনি শক্তির উৎসে দাও অফুরান অনুপ্রেরণা।
স্বাধীন চিন্তা মেধা চর্চা খ্যাতি দেবে
কবিতা মনের ক্ষুধা মিটাবে।
তোমার প্রেম ভালোবাসায় বাঁচতে চাই অনন্তকাল
কবিতা তুমি পথচলার সঙ্গী থেকো
হৃদয় নিংড়ানো প্রেম দিও
ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে রেখো
নিত্যরসদে জন্ম দিও জীবনের কবিতা।

অস্থির সময়ে চলে গেলে
শামিম বাদল
পিল পিল চলছে মানুষ…।
যেন পিপিলিকা সারি সারি,
গন্তব্য একটাই ঈদগাহ, ময়দান
সবাই ব্যস্ত, চলছে তড়িঘড়ি।
পূর্বে তসবির সিনেমা হল
উত্তরে বার ছাড়িয়ে দড়াটানা
দক্ষিণে জেলা স্কুল মোড়
পশ্চিমের ছিলো না সীমানা ।
যে যার নিজস্ব তাগিদে..।
দাঁড়িয়ে ছিলো কাতারে কাতারে,
ঐতিহাসিক সে জানাজায় মানুষ
গুনতির বাহিরে লক্ষের ঘরে।
সূর্য গেলো অস্তাচলে…
মায়াবী আভা ছড়িয়ে,
সবুজ পৃথিবীটা ধূসর হলো
অস্থির সময়ে তোমাকে হারিয়ে।
দু’দিন আগেও যার তোমায়….
ভুল বুঝেছিল চৌরাস্তা ও দড়াটানায়,
সজল চোখে তারাও এসেছিলো
শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তোমার জানাজায়।
জনতার বাঁধ ভাঙা সে স্রোত
তোমার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসার ফল,
নীরবে জানিয়ে গেলে তুমি
বাগিচার হরেক ফুলের মাঝে….
তুমিই সুশোভিত ফুল,
জননন্দিত নেতা তরিকুল।

শোক এবং শক্তি
[পরম শ্রদ্ধেয় মরহুম তরিকুল ইসলাম স্মরণে]
কাসেদুজ্জামান সেলিম
আমি আমার পূর্ব পুরুষের ঠিকানায় চলে গেলাম
আর কখনো কোনদিন ফিরবো না।
তাও বলে গেলাম।
আমার সুকীর্তি নিয়ে আলো জ্বেলো
কুকীর্তিকে ঘৃণা করো
প্রকাশ্য দিবালোকে।
মরেও বাঁচা যায় কে জানে না জগতে ?
ফুলের সুমধুর ঘ্রাণ কবে কখন
আকৃষ্ট করেনি মানুষকে ?
দলবাঁধা কাকের স্বরের কাছে জেনে নিও
কোনদিন বেওয়ারিশ মৃতদেহে পৌঁছানোর পথ
চিনিয়ে দিতে হয়নি
তাদের এবং শকুনদলকেও।
লোকালয় ছেড়ে এক নিঃশব্দ গৃহে যাচ্ছি
মায়ের কোলে শান্তির ঘুমে
স্বপ্ন দেখার মতোন।
ক্ষণকাল আলোর জগতে শিশুখেলা খেলে
অনন্ত ঘুমের ঘর অন্ধকার কবরে গেলাম।
জীবন ও মরণের মাঝে যতটুকু ফাঁক
সেই ফাঁকেই তোমাদের সাথে
ছিলো যত মাখামাখি
তোমাদের কাছে প্রার্থনা-
আমাকে ভুল বুঝোনা
যদি পারো…
তৈরি কোরো আমার এপিটাফ
আর সেখানে লিখে রেখো
একটি বাক্য-
মানুষটা ঘরের ছিলো না পরের ছিলো।

প্রতিশ্রুতি দিলাম
পদ্মনাভ অধিকারী
জনদরদী-কল্যাণকামী তরিকুল,
কোন পদক্ষেপ নিতে করোনি ভুল।
দেশ-জাতির জন্যে ছিলে নিবেদিত,
একজন অসাম্প্রদায়িক বন্ধু জনবিদিত।
তোমাকে হারিয়ে স্বজন হারা হলাম,
যে কথা ভুলিনি ভুলবো না কথা দিলাম।
তোমার দেখানো পথই হোক, চির শপথ,
যে সত্যকে ধারণ করে
সুগম করবে আগতের পথ।
জীবন জীবিকার জন্য যা-ই করি,
যেন আদর্শচ্যুত হয়ে অন্যপথ না ধরি।
ভরসা রেখ নিশিদিন এ কথার,
আজ প্রতিশ্রুতি দিলাম যে কথার।

প্রিয় নেতা
এ.ডি.এম রতন
ক্লান্ত শরীরে ঝিমিয়ে পড়েছিলো
তোমার চাওয়া পাওয়া।
পৃথিবী থেকে সৌন্দর্য দেখাও ছিল
ক্লান্তি-অবসাদ।
রূপোলী ঢেউয়ে পথচলা
ছিলো নিত্য অভ্যাস।
প্রেমের গভীরতা ছিল সীমাহীন।
খেটে খাওয়া প্রতি মানুষের আত্মার সাথে
নির্মল আত্মা ছিলো তোমার।
মনে ছিল পরিবর্তনের ছোঁয়া
তুমি ছিলে স্নিগ্ধ আঁধারের
পথ প্রদর্শক, উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তোমার মাঝে ছিলো…
যশোরকে গড়ার দৃঢ় সংকল্প
আজ এই পৃথিবী হতে…
তুমি অনেক দূরে।
শতাব্দীকে হার মানিয়ে শতকের আয়ু হতে কিছু দূরে
তুমি হারিয়ে গেলে।
অতীত থেকে প্রতিটা মানুষের কাছে
এখনো আছো আলোচনায়।
ভুলবার মতো মানুষ নও তুমি
গণমানুষের প্রিয়নেতা যশোরের অহংকার।
ইতিহাসের কঠিন নিয়মে চলে গেছো অনেক দূরে…..
না ফেরার দেশে,
পৃথিবীর আকাক্সক্ষা ত্যাগ করে।
তোমাকে জানাই হাজারো শ্রদ্ধা
শ্রদ্ধা জানাই তোমার কর্মকে।

চলতে চলতে তুমি পৌঁছে যাবে
(প্রয়াত জননেতা তরিকুল ইসলামকে)
ডা. মধুসূদন অধিকারী
চলতে চলতে তুমি পৌঁছে যাবে
তবু শেষ হবে না তোমার সফর
ব্যস্ত শহর গাড়ির বহর
ধনীদের কোলাহলে মানুষের চলাফেরা
দুখিনী মায়ের হাত থেকে
রাস্তায় পড়ে ছড়িয়ে যাবে
সাধের পাফর।
কুকুর আসবে ধেয়ে
কাক এসে যাবে খেয়ে
কেউতো দেবে না তাবড়।
বাইকে মাইক বাঁধা
প্রচার হচ্ছে মৃতের খবর
পাশ দিয়ে গাড়ি যাবে
বরের মাথায় সোলার টোপর,
কাঙ্গাল খোড়া ন্যুলোর সাথে
টোকাইরা ছোটে পাছে
হয়তো বা দূরে কাছে
খানা হবে মজার জবর।

উন্নয়ন
মনু মোঃ রকিবুর রহমান শাহীন
না বলা কথামালা বুভূক্ষেরেই মতো সঙ্গোপনে ইতিহাসে ঋণি
আদি অন্তের কৃতার্থের মজবুতি কালান্তরিতে।
প্রিয়জান প্রিয়জন লোকান্তরিতে নন্দিত নান্দনিক।
উজ্জীবিত উৎকষিতে প্রাকৃতজন হিসাবের কালান্তরে-
-মহিমান্বিত।
আর জাগরণ পূনর্জাগরণের বেদনার ঊর্ধ্বগামি-
-দৃঢ়তায় নতজানু প্রাণে প্রাণে।
আর জ্যোতি তীব্র রোশো ক্ষত-বিক্ষত তুমিও
আলোক সওয়ার আঁধারের বুকে,
জীবনের তরে, আলোক প্রত্যাশি।
প্রাকৃতার্থ হিংসুটে সত্তারা ক্ষতবিক্ষত যন্ত্রণায়
হিসাবের অস্তিত্বে সুখময় স্বাগত শুভেচ্ছায়।
নিরুপণ তুমি থার্মোমিটার পদার্থের অপদার্থের,
খবরের পর খবরের ক্লান্তি নাশিতে
স্মরণ + Í Ñ স্ট = ? % কি ।
গাড়িয়ালি তোমার দূরন্ত মিছিলের
দুলদুল ফসলের দিলবাহারি
ফুটন্ত ছুটন্ত ফসলের সম্ভার সম্ভারে।

শাহরিয়ার সোহেলের কবিতা
সবুজ আকাশ
সবুজ প্রশ্বাসে স্নিগ্ধ শান্তি
অহর্নিশ হৃদয়ের সীমানা বাড়ায়
প্রতি পলে মেলে ধরি সবুজ জীবন
সবুজ আগুনে পোড়ে দীর্ঘশ্বাস
দীর্ঘকালব্যাপী যাপিত প্রাচীর
ফিরে আসে স্বস্তি সবুজের সান্নিধ্যে
ঝিরিঝিরি সবুজ বাতাসে তনু-মন
রোমাঞ্চিত পুলকিত প্রতিক্ষণ
সবুজেই আশ্রয় সবুজেই দীর্ঘ ভ্রমণ
সবুজ চোখের মতো অনাদি আনন্দ।
সৃষ্টির ঘুম
সৃষ্টির ঘুমেতে মগ্ন থেকে
অপরাহ্ন উপস্থিত
ঘুরে ফিরে সেই পিছুটান
চলে যেতে হবে বলে
ফিরে আসতে ইচ্ছে করেনা
সমুদ্রের বিশালতায় ফোঁটা ফোঁটা
অমৃত বিষেদ বিস্বাদ
চলে যেতে হবে বলে
কাছে আসতে ভয় হয়
সাদা মেঘের তুফান ওড়ে
সৃষ্টির ঘুমেতে মগ্ন থেকে
ম্লান অপরাহ্ন ক্রমশ নিশ্চুপ
সব কিছু বুঝেও নির্বাক কাকাতুয়া
কাকে যেন খোঁজে অবিরত…।

দূরের খেয়া
আনোয়ারুল ইসলাম
আকাশ যখন পড়বে মাথায় ভেঙে
‘আহা’ বলার থাকবে না কেউ সাথে
আঁখির নীড়ে জাগবে ধুসর বেলা
জ্বলবে আগুন ব্যাথার অনুপাতে।
দীর্ঘ পথের শেষ যে কোথায় হবে
সেই ভাবনা আতাশবাজির মতো
সজীব আঁধার গিলবে অবিরত।
উদাস পথিক স্বপ্নগুলো ছিঁড়ে
ঘুরবে কেবল গোলক ধাঁধাঁর ঘোর
আকন্ঠ বিষ শুকনো ফুলের লাহান
ঝরবে তখন শুভ্র সবুজ জোরে।
দূরের খেয়া দূরেই যাবে ভেসে
ধরবে না কেউ হাত দু’খানা এসে।

মাহাবুবা লাকির কবিতা
আমাকেই খুঁজবে
খুলবে না কেউ আর দরজা
ধৈর্যের ভিক্ষে ভাষা বোবা কান্নায়,
তোমার এই হেলে পড়া সংসারে
সেদিন আমাকেই খুঁজবে।
বউ হয়ে এসেছিনু কবে এই ঘরে
পুতুল খেলার বয়সে,
লাল গোলাপের সুবাস নিয়ে
চৌকনার ওই বন্ধি টবে।
স্বপ্নের ঘোরে ইচ্ছের কত রঙ
ধুয়ে মুছে আজ সব একাকার,
আঁধারেই ঢেকেছে সব আলো
মরে গেছি আমি সেই কবে।
কেঁদে বলে মন এই ছিল ভাল
ভুলের ফুলগুলো চমকানো রাঙা,
বালুচরে বাঁধাঘর ক্ষণিকের খেলা
ছিল চাহিদার উৎসবে।
দুখের সাগরে শুধু ভেসে ভেসে
এইবুঝি ছিল সব ভালো,
প্রয়োজনে পাহারার অভিমান রক্ষি
কষ্টে চোখ শুধু কাঁদবে।
মেঘে ঢাকা চাঁদ লুকায়ে হাসে
তোমার ওই হেলে পড়া সংসারে,
চিরতরে হারাবে যেদিন ওই গোলাপ
কেঁদে কেঁদে আমাকেই জানবে।

ক্ষমা মাহমুদের কবিতা
চিঠি
শব্দটাই গেল হারিয়ে
অথচ কবিতার মত
ছন্দময় ছিল তার আসা যাওয়া
সেই বর্ণহীন জীবনে!
নানান ডাক টিকেট গায়ে জড়ানো
একটা চিঠির প্রতীক্ষায় কেটে যেত
যেনবা একটা গোটা জীবন!
এতটাই ছিল তার দাম
অন্তহীন প্রহর কেটে যেত
অপেক্ষায়…
একটা হলুদ বা নীল খাম!
এখন তো সহজলভ্য সবই
শুধুই স্পর্শের দূরত্ব!
অনুভূতিগুলো হয়েছে
বহুব্যবহারে নিহত!
চিঠি নেই…খাম নেই…নেই টিকেট!
টুংটাং বেল বাজিয়ে ডাক হরকরা
আর যায় না বিলি করে চিঠি!
ডাকবাক্স গুলো রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকে
আদিম যুগের মমির মত
হতশ্রী!
সেই বর্ণহীন দিনগুলো বুঝিবা এখন অনেক রঙিন!
এক স্পর্শেই সবকিছুতে পৌঁছে যাওয়া-
শুধু ভুলিয়ে দিয়েছে অনুভূতির সেই তীব্রতা!
জাগেনা এখন আর আগের সেই ব্যাকুলতা
কৃষ্ণের জন্য রাধার ছিল যা!

সে এমনই একজন
জহির সাদিক
সে এমনই একজন
যাকে খুব কাছের কেউ মনে হয়
মনে হয় জনম জনম ধরে দুজনের পরিচয়।।
সে এমনই একজন
যাকে শুধু একটা নীলপদ্ম দিলে
কয়েকশত বছর নিশ্চিন্তে থাকা যায়।।
যাকে শুধু বলতে হবে
আজ ভরা জোসনা, তুমি কি সাথে যাবে??
তারপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।।
হয়তো দেখা যাবে
বাড়ির ঘাট বাঁধানো পুকুর পাড়ে বসে
পা ভিজিয়ে জোসনার সাথে লুকোচুরি করছে।।
যদি তাকে বলা যায়
আজ চাঁদনীরাত, চলোনা ছাদে যাই
দুজনে মিলে তারাভরা আকাশ দেখি।।
কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে
সপ্তর্ষি আর কালপুরুষের খোঁজে
দুর আকাশে হাজার তারার ভিড়ে
সেই মেয়েটি পলকহীন চেয়ে আছে।।
যাকে দেখলে মনে হয়
বৃষ্টি নামার সাথে সাথে
বাড়ির খোলা ছাদে উঠে ভিজবে
রিকশার হুড ফেলে ঘুরতে বেরুবে
ভেজা কাপড়ে সর্দি কাঁশি নিয়ে ঘরে ফিরবে।।
যাকে দেখে মনে হয়
চুপিচুপি এসে বলবে, চলোনা সমুদ্রে যাই
খালি পায়ে বালুকাবেলায় একটুখানি হাঁটি।।
এরপর দেখা যাবে
সমুদ্র জলে পা ভিজিয়ে হাঁটবে
আর গুনগুন করে জলের গান গাইবে।।
আবার এটাও মনে হয়
বঙ্কিম কিংবা শরত পেলে
এক নিমিষেই শেষ করবে
একলা দুপুরে নির্জনতায় রবীন্দ্রনাথ শুনবে।।
তাকে দেখলে মনে হবে
সন্ধ্যা নামলে এক মগ চা নিয়ে
বারান্দার ওই ইজিচেয়ারে বসবে
টবে ফোটা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে
না জানা অনেক কথাই বিড়বিড় করে বলবে।।
আবার মন ভালো থাকলে
কোন কারন ছাড়াই টেলিফোনে
একের পর এক প্রিয় মানুষের সাথে
মনের সবকটি জানালা খুলে কথা বলবে।।
কখনও কখনও দেখে মনে হয়
খুব অল্পতে চোখদুটো ভিজিয়ে ফেলবে
মনের গহীনে সব কষ্টগুলো চাপিয়ে রাখবে
নিজের অজান্তেই দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়বে।।
তবে খুব বেশী মনে হয়
কেউ হয়তো তার জন্যে
অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করবে
সারাটা জীবন ধরে মায়া করবে
হয়তোবা একটু বেশিই মায়া করবে।।
অথবা তাকে ভালোবেসে
কে যেন নিরবে নিভৃতে
সারাটা জীবন কষ্ট পাবে
হয়তোবা একটু বেশিই কষ্ট পাবে।।

বৈষম্য
শেখ মফিজুর রহমান
যে শিশু জন্ম নিল ফুটপাতে
জানে না তার পিতৃ পরিচয়
জন্মে তার নেই কোন দায়
তবু তার প্রতি আমাদের অসীম ঘৃণা !
আর যে শিশু জন্মালো সুরম্য অট্টালিকায়
কিংবা ভালোবাসার গৃহকোণে
সে শিশুর প্রতি কী স্নেহ মায়া ভালোবাসা
কিন্তু এই শিশুও কি জানতো
কোথায় হচ্ছে তার জন্ম ?
ছিল কি তার পিতা-মাতা বেছে নেয়ার অনুমতি ?
তবে কেন একজন পাবে
ভালোবাসার পরম যত্মের স্পর্শ
আর একজন শুধুই অবহেলা , ঘৃনার দৃষ্টি ?
তবে কি ভালোবাসাতেও বৈষম্য ?
জাত-পাত, অর্থের দৌরাত্ম !
বৈষম্য , বৈষম্য , ভালোবাসাতেও বৈষম্য !
ফুল বেচে যে টোকাই, ঠিক করে দেখ দেখি
সেকি নিজেও একটি জীবন্ত ফুল নয় ?
তবু চলার পথে তাকে ধাক্কা দিতে একটুও ভাবিনা
কিন্তু তাকেই যদি পরিয়ে দাও দামি পোশাক
ভদ্র ঘরের সভ্য ছেলে ভেবে
সবাই করবে তোষামোদ ।
বৈষম্য , বৈষম্য , ভালোবাসাতেও বৈষম্য ।
দামি হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেয়া প্রসূতি
যদি মা হয় , তবে ফুটপাতে সন্তান জন্ম দেয়া
পাগলিনী মা নয় কেন ?
আছে কোন উত্তর ?
আছে কোন ভাবনা আমাদের ?
বৈষম্য, বৈষম্য, ভালোবাসাতেও বৈষম্য !
যে ফুল বনে ফোটে অনাদরে , চোখের অন্তরালে
এই জগতে তার নেই কোন কদর
টবে লাগানো ভালোবাসার গাছই পায় যত আদর
ভালোবাসার ছোঁয়া ঘিরে বেড়ে উঠা তাদের
কিন্তু অভিধান বলে বনের ফুলও ফুল
টবের ফুল ও ফুল , নেই কোন ভিন্ন পরিচয়
গৃহকোণে জন্ম নেয়া শিশু মানব শিশু
আর ফুটপাতে পাগলিনীর কোলে জন্ম নেয়া
শিশুও সেই একই মানব শিশু !
তবু একের প্রতি প্রেম আর
অপরের প্রতি আমাদের কী ঘৃনা
বৈষম্য , বৈষম্য , ভালোবাসাতেও বৈষম্য !
অর্থের জন্য বৈষম্য, বর্ণের জন্য বৈষম্য
আকার ও প্রকারের জন্য বৈষম্য
মানুষে মানুষে বৈষম্য
ভালোবাসাতেও বৈষম্য !

এক হৃদয়হীনের কাব্য
মমতাজ উদ্দিন।
একটা ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে
বিশাল ক্ষেতের মাঝে,
সেই দাঁড়ানোর নেই যে বিরাম
সকাল,দুপুর সাঁঝে।
ঝড়,বৃষ্টি,তপ্ত রোদে
দাঁড়িয়ে থাকে ঠাঁই,
তার দিকেতে তাকিয়ে দেখার
গরজ কারো নাই।
পরণেতে প্যান্টটা ছেঁড়া
রং চটা এক জামা,
এ সংসারে নেই যে তার
বাপ-মা,চাচা,মামা।
কিষাণেরা চাষ করে আর
ফসলে মাঠ ভরে,
পাকলে পরে ধানের আঁটি
ওঠে তাদের ঘরে।
সেই ছেলেটা তাকিয়ে দেখে
কেউ দেখেনা তাকে,
একই ভাবে শূন্য মাঠে
দাঁড়িয়ে সে যে থাকে।
হাত,পা,চোখ সবই আছে
নেই যে হৃদয় খানা,
তাই তো কারো ভালোবাসা
পেতে যে তার মানা।
এ জগতে একাকী সে
নেই জীবনের দাম,
নগণ্য আর তুচ্ছ অতি
কাকতাড়ুয়া নাম।

চৌক্ষর জ্বালা
সা’দ সাইফ
তোমার হস্তখানি রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল আমার চৌক্ষরে।
পরক্ষণ; তথা অস্থির আকুতি,
কুন্তল ছেঁড়া আফসোস-আর্তনাদ।
অস্ফুট স্বরের ভাবানুভূতির প্রাণপরাগ।
তৃতীয় চোখে আটক মর্মস্পর্শী কথা আর ক্রোধ।
আর কায়াতে ছিল চন্দনকাঠ নিবিষ্ট টান।
অচেনা পথের চাতক হয়ে অধীরতাকে আলিঙ্গন করার নির্মম প্রয়াস।
রাতজাগা কুহকের কর্ণে বাজা অদ্ভুত শব্দ।
অবশেষে রিক্ত আঁধারের কেদারায় সন্ধান।
ব্যঙ্গ অনুরসে মিটে যায় পিয়াসি মনের
দরজায় টোকা দেওয়ার স্বাদ।
নির্মমতা ভেদ করে আজ কত দূরে,
অথচ সেই আমি এই অচেনা নগরে।
ঠিক অচেনা হয়ে।
দর্শনে অনুরণন জাগাতে ব্যর্থতায়,
বিচ্ছিন্ন হয়েছি এ যন্ত্রনগরে।
ঠিক থাকব আমৃত্যু।