২৪ তম প্রতীষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যার একগুচ্ছ লেখা-৪

0
শুধু আবেগ নিশ্চিত করবে না ধর্ষণের বিচার
রুমিন ফারহানা
১. ধর্ষণ পৃথিবীর সবখানে হয়।
২. স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মতো অতি নারীবান্ধব দেশেও … সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
৩. ধর্ষণ কোনও নতুন বিষয় নয়। অমুক সরকারের সময় এর চেয়েও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
৪. পর পর এতগুলো ধর্ষণের ঘটনা মানেই এর মধ্যে কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, খতিয়ে দেখছি।
৫. সন্ধ্যার পরে যে মেয়ে বাইরে থাকে তার সাথে এমন ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক।
৬. পোশাকের ‘শালীনতার’ অভাবই মেয়েটির ধর্ষিত হওয়ার কারণ।
৭. মেয়েটির অনেক ছেলে বন্ধু আছে।
এর কোনোটির একটিও যদি কোনও নারী নির্যাতিত হওয়ার পর আপনার মনে হয় তাহলে এই ধরনের অপরাধে আপনার মৌন সমর্থন আছে।
বাংলাদেশের নারীদের দুর্ভাগ্য তারা যে কেবল পুরুষতান্ত্রিক পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র কাঠামোতে বাস করে তাই না, এই সমাজ এবং রাষ্ট্র অতি নারীবিদ্বেষী। এর একটা প্রমাণ হলো, কোনও অপরাধে নারী এবং পুরুষ একত্রে যুক্ত থাকলে নারীর বয়স, চেহারা, পোশাক, ব্যক্তিগত জীবন এই সবকিছু অপরাধকে ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে এবং এই সবকিছুর নিচে চাপা পড়ে যায় পুরুষের পরিচয়টি, এমনকি তাদের মূল অপরাধ পর্যন্ত। আবার সামান্য অপরাধে একজন নারীকে, তার পোশাক, চেহারা এবং ব্যক্তি জীবনকে যে রসালো ভাষায় ব্যবচ্ছেদ করা হয় সেটি একজন খুনের পুরুষ আসামির ক্ষেত্রেও কখনও করা হয় না। যতদিন কেবল মূলধারার গণমাধ্যম ছিল, ততদিন পর্যন্ত পত্রিকার মানের কথা চিন্তা করে হলেও এসব ক্ষেত্রে কিছুটা রাখঢাক ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেহেতু মান রক্ষার কোনও বিষয় নেই সে কারণে নারী ব্যবচ্ছেদ এখন অনেক সহজ এবং হচ্ছেও প্রচুর।
কথাগুলো আসছে এই কারণেই যে স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও যেখানে একজন পুরুষের জন্য একটি নিরাপদ রাষ্ট্রের নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারিনি সেখানে এই মানসিকতার একটা সমাজ নারীর জন্য কতটা বীভৎস হতে পারে সেটা বলাই বাহুল্য। আর তাই প্রতিদিনের গণমাধ্যম কিংবা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট যে পরিসংখ্যানই দিক, নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা কিংবা ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা যে তার কয়েকগুণ বেশি সেটি বলাই বাহুল্য।
প্রথমত ধর্ষণের মতো জঘন্য একটি অপরাধের সঙ্গে আমাদের দেশে নারীর ‘সম্ভ্রম’ বা ‘ইজ্জত’কে যুক্ত করে একটি ভিন্নমাত্রা দেওয়া হয় যা, ভিকটিম বা তার পরিবারের ওপর নতুন চাপ তৈরি করে। অনেক নারী শুধু এই ট্যাবুর কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অনেক পরিবার মামলা করে না শুধু এই ভেবে যে নির্যাতনের কথা প্রকাশ পেলে পরিবারের সম্মানহানি হবে। অথচ সম্মান বা ইজ্জত যদি কারো নষ্ট হয় সেটা হওয়ার কথা ধর্ষকের যে এই নোংরা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কিংবা তার পরিবার ও সমাজের, যে এমন বীভৎস অপরাধী তৈরি করেছে।
ধর্ষিতার প্রতি সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু যে নারীর জীবনহানির কারণ হয় তাই না; এটা নারীদের ধর্ষণের বিচার চাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে। মামলা করার পর সমাজ একজন ধর্ষণের শিকার নারীকে যে চোখে দেখে, মামলা চলার সময় আদালতে প্রতিপক্ষের আইনজীবীর যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি তিনি হন, সেসব বিষয় এমন মামলা করা এবং সেটা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভিকটিম বাধ্য হয়ে আপসের পথ বেছে নেয়। আর ধর্ষণের সঙ্গে যেহেতু ক্ষমতা সরাসরি যুক্ত, হতে পারে সেটা অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক ক্ষমতা, তাই অনেক সময়ই তথাকথিত সমাজপতি বা রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপে নারী বাধ্য হয় মামলার পরিবর্তে আপসে যেতে।
সাহস করে যে নারী মামলার পথ বেছে নেন তার ক্ষেত্রে পথটি বড় বন্ধুর। আছে বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা এবং জনমনে পুলিশের দক্ষতা আর সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন। মামলা জট আমাদের এক পুরনো সমস্যা। ধর্ষণের মামলাও তার ব্যতিক্রম নয়। বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘোরার পর একজন নারীর না থাকে আর্থিক, না মানসিক শক্তি। এক পর্যায়ে সে যদি নাও চায়, পরিবারের চাপে বাধ্য হয় মামলা তুলে নিতে। দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে নিম্ন আদালতে রায় পাওয়া গেলেও উচ্চ আদালতে গিয়ে ভিকটিম পড়ে আরও বড় বিপদে। সেখানে মামলা জটে বছরের পর বছর ঘুরতে থাকে, বিচার হয় না।
আর দুঃখজনক হলেও সত্য বেশিরভাগ মামলা বা বিচার হয় সেসব ঘটনার ক্ষেত্রেই যেখানে সেটি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং পরে মূল ধারার মিডিয়াতে। আবার এমন ঘটনাও আমরা জানি যেটি সামাজিক মাধ্যমে কিছু দিন তোলপাড় তোলার পর থিতিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে সময়ের সাথে, যেমন তনুর ঘটনাটি।
১৩০ বছরের পুরনো ব্রিটিশ আমলের আইনে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা ছিল, এখনও সেটাই ভিত্তি ধরে বিচার করা হয়। যদিও ২০০০ সালে কঠোর অনেক ব্যবস্থা রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন করা হয়েছে। এটি ধর্ষণের শিকার ক্ষতিগ্রস্তকে জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বেশ কিছু ধারায় নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য অনেক কঠিন সাজার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণের যে সংজ্ঞা সেটি খুঁজতে ঠিকই দ্বারস্থ হতে হয় ১৮৯০ সালের দণ্ডবিধির। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো যে সংজ্ঞা সেটি যে কেবল বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে বেমানান তাই নয় এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যৌন অপরাধের যে সংজ্ঞা তার সঙ্গেও যায় না।
পুরনো সংজ্ঞার কারণে ভিকটিমের মেডিক্যাল রিপোর্টের ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ার ফলে দেখা যায় যদি নারীর শরীরে কোনও ইনজুরি না থাকে কিংবা এমন কোনও চিহ্ন না থাকে যাতে বোঝা যায় যে নারী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে তখনই মামলা দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে নারী ভয়ে জ্ঞান হারান অথবা ঘটনার আকস্মিকতায় বাধা দেওয়ার অবস্থাতেও থাকেন না। সেসব ক্ষেত্রে মামলা প্রমাণ বাদীর জন্য আরও অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
পুরো বিষয়টির সঙ্গে ‘ইজ্জত ট্যাবু’ এমনভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে ভিকটিম ঘটনা ঘটার দ্রুততম সময়ের মধ্যে গোসল করে যেটি তার মেডিক্যাল রিপোর্টকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে এবং ভিকটিমের জন্য নেগেটিভ হিসাবে কাজ করে। পুরনো এই সংজ্ঞার কারণে এমনকি ছেলে শিশু ধর্ষণের শিকার হলে তাকে ধর্ষণ না বলে বলাৎকার বলতে হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতনে বিশেষ আইন থাকা সত্ত্বেও ছেলে শিশু ধর্ষণের ঘটনা পেনাল কোডের আওতায় নিতে হয়। নারী সংগঠনগুলো কিংবা মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার এই পুরনো সংজ্ঞার পরিবর্তন চাইলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অবশ্য এতে কোনও সমস্যা দেখছেন না। তার মতে আইন যুগোপযোগী।
শুধু ধর্ষণের সংজ্ঞাই নয়, বিপত্তি আছে সাক্ষ্য আইনেও। এই আইনের ১৫৫ ধারার ৪ উপধারা অনুযায়ী বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ধর্ষণের শিকার নারীকে ‘কুচরিত্রা’ প্রমাণের চেষ্টা করে থাকে। এর অনেক ইমপ্যাক্ট আছে। এই ধারা বহু নারীকে এমন ভীতির মুখোমুখি দাঁড় করায় যে বহু নারী মানসিকভাবে মামলা চালানোর শক্তি হারিয়ে ফেলে। ‘কুচরিত্রা’ প্রমাণ করতে পারলেই ধর্ষক ধর্ষণের অভিযোগ থেকে বেঁচে যেতে পারে।
এই আইনের সুযোগ গ্রহণ করে মামলায় জেরা করার সময় ধর্ষণের শিকার নারীকে অনেক সময় অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রাসঙ্গিক এমন অনেক প্রশ্ন করা হয়, যার সঙ্গে বিচারাধীন মামলার কোনও সম্পর্ক নেই। এতে নির্যাতনের শিকার নারী ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়। সে কথা মাথায় রেখেই ভারতীয় আদালত স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছে যাতে আদালত অবশ্যই নিশ্চিত করে যে ধর্ষণের শিকার নারীকে হয়রানি বা অপমানিত করার জন্য জেরা করা হচ্ছে কিনা। এই ধরনের জেরা ইংল্যান্ডের আদালতেও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেখানে এমন কোনও প্রশ্ন করা যাবে না যাতে নির্যাতনের শিকার নারীর অতীত যৌন জীবন আলোচনার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়।
আইনের ফাঁকফোকর বাদ দিলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। কারণ, কোথাও দেখা যাচ্ছে পুলিশি তদন্তে ত্রুটি থাকছে আবার কোথাও পাবলিক প্রসিকিউটর ঠিকভাবে ভূমিকা রাখছেন না। অনেক ক্ষেত্রে মামলা দিনের পর দিন পড়ে থাকছে।
অনেকেই ধর্ষণের সমাধান হিসাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা বলছেন, বলছেন ক্রসফায়ারে দেওয়ার কথা। এই কথাগুলো প্রমাণ করে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার কিংবা সুশাসনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার কথা। ধর্ষণ ভয়ঙ্কর ফৌজদারি অপরাধ– এটি যেমন সত্য, তেমনি সত্য একটি অপরাধ দিয়ে কখনই আর একটি অপরাধ দমন করা যায় না। কেউ কেউ বলছেন ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড করার কথা। সাজা মৃত্যুদণ্ড হোক কিংবা যাবজ্জীবন, যদি তদন্ত সঠিক না হয়, নির্যাতনের শিকার নারীকে বিচার চাইতে এসে দ্বিতীয়বার নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়, সাজার হার যদি ৩-৪ শতাংশেই আটকে থাকে, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা যদি না কাটানো যায়, নির্যাতনের শিকার নারীকে যদি ভয়ভীতি দেখিয়ে আপসের চাপ দেওয়া হয় কিংবা সমাজপতিরা সমঝোতার দিকে নিয়ে যায় তাহলে কখনোই ধর্ষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।
কোনও বীভৎস ঘটনার কথা জেনে বা সেটা দেখে আমাদের আবেগাপ্লুত করে। সে কারণে আমাদের মধ্যে তীব্র আবেগনির্ভর প্রতিক্রিয়া হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়, যেমনটা হচ্ছে এখন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু ধর্ষণ নয়, যেকোনও অপরাধের দ্রুত, সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন, আইন এবং বিচারিক কাঠামোটিকে শুদ্ধ করার জন্য কাজ করতে হবে।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য
মূল্যবোধের অবক্ষয় ও আমাদের বাঙালি সমাজ
কাজী মারুফুল আলম
ঘোর লাগা অদ্ভুত এক সময়ে বাস আমাদের। খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে আমাদের আশেপাশের পরিবেশ, সঙ্গে সঙ্গে চেনা মানুষগুলো। এতদিনের জেনে আসা সবকিছু মুহূর্তেই হয়ে উঠছে অচেনা। যে বিষয়গুলোকে এতদিন ঘুষ বলে জেনেছি তা কোথাও হয়ে উঠছে ‘স্পিড মানি’, কোথাও হয়ে উঠছে ‘তদবির খরচ’। ন্যায়-অন্যায় বোধের দোলাচলে এখন আমরা এতটাই দ্বিধান্বিত যে, আলো কোনটা আর অন্ধকার কোনটা তা বোঝা আমাদের জন্য কষ্টকর। এখন তো এমন অবস্থা যে অন্ধকারকেই আলো বলে ভুল হয়। সততার আলো এখন আমাদের চোখ ঝলসে দেয়, বাদুড় পেঁচার মতো রাতের অন্ধকার আমাদের জন্য বেশি আরামদায়ক। সততা এখন করোনায় আক্রান্ত, একটু নিঃশ্বাসের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে করছে।
মানব জীবনের অদ্ভুত এক দিক হলো আমাদের প্রত্যেকের নীতি নৈতিকতা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। শৈশব ও কৈশোরে আমরা যে আর্দশকে লালন করে বেড়ে উঠি, কঠিন বাস্তবতা প্রতিনিয়ত তার পরীক্ষা নেয়। এ যেন ভেঙে গড়ার এক অদ্ভুত খেলা। জীবনটাকে মাঝে মাঝে মনে হয় ‘চামুচে মার্বেল’ দৌড়ের প্রতিযোগিতার মতো। এখানে শুধু মার্বেলের পরিবর্তে চামুচে রয়েছে আমাদের সততা। খুব সাবধানে আমরা কেউ কেউ দৌড়াচ্ছি তারপরও একটু একটু করে আমাদের সততা চামুচের ফাঁক গলে পড়ে যাচ্ছে। যদিও এ বিষয়টি কেউ কেউ একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। আবার কেউ প্রতি মুহূর্তে নিজেকে হারাবার বেদনায় পুড়ছে।
আমাদের শিক্ষাঙ্গন যা কিনা হওয়ার কথা ছিল নৈতিকতা তৈরির কারখানা, তা নিজেই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে শিক্ষক নিয়োগে দলবাজি আর ‘তেলবাজি’র কাছে মেধা ও মেরুদণ্ড পরাজিত। আর স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগে অর্থ অথবা তদবির ঠিক করে দিচ্ছে কারা আমাদের শিশুদের ন্যায়নীতির পাঠ পড়াবে। এ অবস্থায় যে শিক্ষকের নিয়োগই হচ্ছে অসততার মাধ্যমে, তার কাছে ছাত্র -ছাত্রীরা অন্যায়ের সামনে নতজানু হওয়া ছাড়া আর কী শিখতে পারে?
আরও মজার বিষয় হচ্ছে যাদের কিনা হওয়ার কথা ছিল সততার ধ্রুবতারা, যারা কিনা সবাইকে দিক নির্দেশনা দেবে, তারাই আজকে সবচেয়ে বড় ভন্ড, প্রতারক, মুনাফিক। আর তাই শিক্ষকদের হাতে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়, কিছু মসজিদ মন্দিরে আর গির্জায় মানব প্রেমের বদলে চাষ হয় সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের, আর রাজনীতির নামে চলে অর্থ সংগ্রহের মহা উৎসব। এ কারণে আমাদের তরুণ তরুণীরা বলিউড স্টারদের তাদের রোল মডেল বানিয়ে ফেলেছে আর টিকটক স্টার হয়ে সারা বিশ্বে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তুলছে।
আমাদের পরিবার ছিল আগে প্রতিটি শিশুর নৈতিকতা শেখার সুতিকাগার কিন্তু সেখানে আমাদের শিশুরা এখন শিখছে শুধুই প্রতিযোগিতা। কীভাবে পাশের বাসার ভাবির ছেলেকে টপকে ছেলেকে প্রথম করা যাবে, কীভাবে কেন সামাজিক আলোচনায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা যায় সেই প্রতিযোগিতায় বিভোর আমরা ভুলেও ভাবছি না যে- কীভাবে আমরা আমাদের নিজের মনুষ্যত্বকে বিক্রি করে তথাকথিত শ্রেষ্ঠত্ব কিনে নিচ্ছি। আমরা অভিভাবকরা আমাদের শিশুদের শুধু দৌড়াতেই শেখাচ্ছি, কিন্তু হাত ধরে হাঁটতে শেখাচ্ছি না। আমাদের অন্ধভাবে অনুসরণ করতে করতে আমাদের শিশুরা আজকে শুধু ছুটেই চলেছে, জীবনকে অনুধাবন করা বা উচ্চতর বিষয়ে চিন্তা করার অনাবিল আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত।
আগে সামাজিকভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে খোঁজ নেওয়া হতো পাত্র যে আয় করে তা সাদা নাকি কালো? তার চরিত্র কেমন? আর এখন পাত্রী পক্ষ এটা জানতে পারলেই খুশি যে-পাত্র ‘সরকারি চাকরি’ করে। তার বাড়ি, গাড়ি আছে। মজার বিষয় হচ্ছে, সরকারি ৪/৫ বছর চাকরি করে কারও পক্ষে বাড়ি গাড়ি করা সম্ভব না জেনেও, পাত্রী পক্ষ জেনে বুঝে চুপ করে থাকেন। এমনও দেখা গেছে পাত্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত চলছে, অথচ তারই বাড়ির সামনে পাত্রীপক্ষের লাইন রেললাইনের মতোই লম্বা হয়েই চলেছে। না পাত্রীর পরিবার, না পাত্রী নিজে এটি খোঁজ নিতে আগ্রহী যে তার হবু জীবন সঙ্গি কতটা সৎ!
তার মানে, একজন ব্যক্তি সৎ নাকি অসৎ তা আমাদের ব্যক্তি জীবনে আর কোনও প্রভাব বিস্তার করছে না। এমনকি নতুন প্রজন্মের মন ও মগজেও এ বিষয়টা কোনোভাবেই রেখাপাত করছে না। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য একটি অশনিসংকেত, কারণ এ থেকে বোঝা যায় আমাদের নতুন প্রজন্মের মন থেকে ন্যায় অন্যায় বোধ নষ্ট হয়ে তার জায়গায় জন্ম নিয়েছে ভোগবাদী মানসিকতা আর লালসা।
একথা স্বীকার করতে অনেকে লজ্জা পাবেন, কিন্তু সহজ সত্য হচ্ছে আমাদের সমাজে এখনও গুটিকয়েক যে কয়জন মানুষ ‘ভালো মানুষ’ হওয়ার দাবি করেন বা সততার গৌরবে যাদের বক্ষ স্ফীত হয়ে ওঠে, তাদের বেশিরভাগই সাহস অথবা সুযোগের অভাবে তথাকথিত ‘ভালো মানুষ’। সুযোগ পেলে অথবা একটু সাহস কারও কাছ থেকে ধার করতে পারলেই এদের ভেতর লুকিয়ে থাকা নেকড়ে বাঘ হালুম করে বেরিয়ে আসবে। এ ধরনের সৎ মানুষ আরও বেশি বিপজ্জনক কারণ এরা লুকিয়ে থাকে আমাদের খুব কাছেই। কখনও বন্ধু, কখনও আত্মীয়, কখনও সমব্যথি বা কখনও সময়ের চাহিদা রূপে।
জীবন আর বাস্তবতা এখন একটু একটু করে আমাদের আত্মাকে কলুষিত করে তুলছে। আমরা হয়ে উঠছি ‘করপোরেট দাস’। অর্থ আর স্বার্থ এখন ভালোবাসা বা বন্ধুত্বের চেয়ে দাড়িপাল্লায় অনেক ভারী। মাঝে মাঝে মনে হয় এই কলুষতাকে অতিক্রম করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেননি।
মানুষকে মনুষ্যত্বের ট্রেনিং দেওয়া যায় কিনা, নাকি এটা একান্তই একটি গবেষণার বিষয়। একজন সিরিয়াল কিলারের ডিএনএ-তে কি প্রোথিত রয়েছে তার রক্ত পিপাসা? উপযুক্ত পরিবেশ পেলে সে কি হয়ে উঠতে পারতো এক অনবদ্য মানুষ? যদি তাই হয়ে থাকে তবে সুন্দর পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষের মাঝে আমরা কেন অসম্ভব অসুন্দরকে খুঁজে পাই?
মজার বিষয় হচ্ছে আমরা যতই নীতিহীন হইনা কেন, নিজেদের নীতিবান প্রমাণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা ক্ষেত্র বিশেষে নোবেল পুরস্কারের দাবি রাখে। নিজেকে নীতিবান প্রমাণের সবচেয়ে সোজাপথ হচ্ছে ধর্মীয় লেবাস ধারণ। ধর্মের প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে ব্যবহার করার জন্য আজকাল অনেক নেতারা দুর্নীতির পয়সায় ঘন ঘন হজে যান, সরকারি অফিসের ঘুষখোরদের মুখ থাকে দাড়ি আর টুপিতে ঢাকা। এভাবে হয়তো আমরা অন্য মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারছি, কিন্তু আমরা নিজেরা নিজেদেরকে কী বলে ভুলিয়ে রাখবো?
নীতি নৈতিকতাকে যদি কোনও মানুষের রূপ দেওয়া যেতো তবে তাকে হয়তো আজকে গুম করে ফেলা হতো অথবা চিড়িয়াখানায় সাজিয়ে রাখা হতো। সৃষ্টির আদিম লগ্ন থেকেই নীতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক। যুগে যুগে কালে কালে কখনও মানুষরূপী অবতার আবার কখনও নবী রাসুলরা এই হতভাগা মানব জাতিকে ন্যায় নীতির পথে আহ্বান করেছেন।
হতাশার এই কালো রাত্রিতে যখন হার মেনে নেওয়াটাই স্বাভাবিক, তখন কিছু কিছু মানুষ তাদের অতি মানবীয় আচরণ দিয়ে আমাদের হতভম্ব করে দেয়। আমরা নিজেদের দীনতা আর হীনতায় তাদের সামনে দাঁড়াতেও লজ্জাবোধে আড়ষ্ট হয়ে উঠি। অদ্ভুত ভালো লাগায় মন ভরে যায় যখন দেখি,করোনার যে সময়ে পুত্র, কন্যা পিতা বা মাতার লাশ নিতে অস্বীকার করছে, তখন একদল পাগল ছুটে বেড়াচ্ছে মৃত্যুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অজানা অচেনা কোনও হতাভাগার লাশ দাফনের জন্য। এমনও মানুষ আছে যে বছরের পর বছর হাসপাতালে সেইসব মানুষের সেবা করে বেড়াচ্ছে যাদের মুখে পানি তুলে দেওয়ার কেউ নাই। এই কলিকালে এরাই যেন ঈশ্বরের অবতার। সৃষ্টিকর্তা হয়তো এদের মাধ্যমেই আমাদের সঙ্গে দেখা করে যান আর আমাদের মুখের সামনে একটা আয়না ধরেন যেখানে আমাদের কুৎসিত স্বার্থপর রূপটা ফুটে ওঠে। এদের দেখলে মনে হয় আশাহীন পৃথিবীতে এখনও আশা বেঁচে আছে।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং খণ্ডকালীন শিক্ষক, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
ধর্ষণ, মাদক এবং তৃণমূলের রাজনীতি
বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার ৩৫ বছর বয়স্ক এক নারীকে যৌন হয়রানিসহ নির্মম নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সারা দেশে এখন ধর্ষণ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মিডিয়ায় যা আসছে তাতে মনে হয় এদেশে ধর্ষণ যেন এখন নিত্য দিনের ঘটনা। এর আগেও নোয়াখালীর সুবর্ণচরে অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা ঘটার পর সপ্তাহখানেক উত্তেজনা থাকে, তারপর ধামাচাপা পড়ে যায়। কোনও তড়িৎ বিচার হয় না। অনুরূপ হতাশাজনক পরিস্থিতিতে ধর্ষকদের জোর বাড়ে, আর ক্রমে ক্রমে ধর্ষণ এখন সংস্কৃতিতে রূপান্তর হয়েছে।
এটি এমন বিকৃত রুচিতে রূপান্তর হয়েছে যে ৫/৬ বছরের শিশুকে যেমন ধর্ষণ করছে, ৭০ বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আইনের শাসনের শিথিলতাই এই ব্যাধি ছড়ানোর মূল কারণ। বেগমগঞ্জে যে ঘটনা ঘটলো তার ভিডিও দেখলে মনে হয় এ ঘটনা সব বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। নোয়াখালী সদরের এমপি একরামুল হক চৌধুরী ঘটনার দৃশ্য দেখে এত মর্মাহত হয়েছেন যে তিনি বিচার-আচার স্থগিত রেখে দোষীদের ক্রসফায়ারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ধর্মেও ধর্ষণের শাস্তি নির্মম ধরনের।
এবার নিশ্চয়ই তারা বেগমগঞ্জের ঘটনার ভিডিও দেখেছেন। এটাকে কোন যুগের বর্বরতা বলেন কি জানি! আসলে এই ঘটনাকে নেতারা সুন্দর সুন্দর বয়ান দিয়ে দূর করতে পারবেন না। বর্বরতাকে পাল্টা বর্বরতা দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। অন্যথায় অচিরেই আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগ শুরু হবে। বেগমগঞ্জের যুবকদের আচরণ পশুর আচরণের চেয়েও নিকৃষ্টতম। নোয়াখালীতে পিন্টু বাহিনী, মামা জাবেদ বাহিনীসহ বহু বাহিনী রয়েছে। বেগমগঞ্জের দেলোয়ার বাহিনী, পিন্টু বাহিনী, মামা জাবেদ বাহিনীর শাখা-প্রশাখা। এরা নাকি মূলত ইয়াবা কারবারি। মাদক এখন গ্রাম-গ্রামান্তে ঢুকে পড়ছে। শেষ পর্যন্ত মাদক সমাজেরই ভিন্ন রূপান্তর ঘটবে বলে মনে হয়। সরকার মাদক কারবারিদের নিয়ে একবার কঠোর হয়েছিল, কিন্তু কক্সবাজারে নিরপরাধ কাউন্সিলর একরামকে ক্রসফায়ারে দিয়ে কঠোর সমালোচনায় পড়ার পর মনে হচ্ছে তা গতিহারা হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় পুলিশ নিজেও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে বলে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। মাদকের ব্যাপারে সরকার যদি কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন না করে তবে দেশকে ভয়ানক অরাজকতা থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুসারে গত নয় মাসে দেশে ধর্ষণ হয়েছে ৯৭৫ জন। তার মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২০৮ জন, ধর্ষণের পর খুন করেছে ৪৩ জন, শিশু ধর্ষিত হয়েছে ৬২৭ জন এবং ধর্ষিতা আত্মহত্যা করেছে ১২ জন। ঘরের ভেতরে ঢুকে বেগমগঞ্জে যেভাবে নারীটিকে নির্মম নির্যাতন করা হলো তা থেকে অনুমান করা গেছে যে নারীদের সম্মান, নিরাপত্তাও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবন্ধী, বোবা কিছু বাদ যাচ্ছে না। নারী হলেই ধর্ষণ করেই ছাড়ছে। এর সঙ্গে অশ্লীলতা, নৈতিক মূল্যবোধের অভাব সবকিছুই আছে।
আমরা একটা বিষয় লক্ষ করেছি যে ধর্ষণের পরে যাদের নাম আসছে তারা সিংহভাগ সরকারি দল বা তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগ একটা প্রাচীন সংগঠন। তাদের এ অবস্থা হলো কেন! দু’মাস আগে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেছেন যে আওয়ামী লীগের ওপর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে কারণে সম্ভবত সংগঠনের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে বখাটেরা, সুবিধাভোগীরা। সুতরাং আওয়ামী লীগ তার প্রকৃত ভূমিকা হারিয়ে ফেলেছে। অথচ গত ১২/১৩ বছর দেশ খারাপ চালায়নি। অভাব অনটন কিছুই তো ছিল না। প্রচুর উন্নতিও হচ্ছে। আমরা ইতিহাসে পড়েছি রোমে বিশৃঙ্খলাও ছিল আবার সম্প্রসারও হতো। এ যেন ঠিক তদ্রƒপ। কিন্তু একটা জাতি তার চারিত্রিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেললে তার গৌরব করার তো আর কিছু থাকে না।
আমরা আরেকটি বিষয় গভীরভাবে লক্ষ করেছি, পূর্বে সমাজে মাতব্বর শ্রেণির লোক ছিল। সাধারণত তারাই সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষা করতো। তাদের ভয়ে বখাটে শ্রেণির প্রাদুর্ভাব হতে পারতো না। কিন্তু স্বাধীনতার পর নানা কারণে এই শ্রেণিটি ধীরে ধীরে নির্মূল হতে থাকে। সমাজ কাঠামো পরিবর্তনের পর ধীরে ধীরে অরাজকতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সর্বশেষ এখন দলীয় প্রতীক নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করায়, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন দেওয়ায় সমাজে প্রভাবশালী মাতব্বর শ্রেণির ভদ্রলোকেরা নির্বাচন থেকে দূরে সরে গেছে।
প্রতীক পেয়ে নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে আশ্রয় করে দলীয় মাস্তানেরা গ্রুপে গ্রুপে আত্মপ্রকাশ করছে। এদের সঙ্গে আছে ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে সরকারি দলের নামে নানা সংগঠনের কমিটির আড়ালে গ্রুপ-শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতি। বিএনপিরও এমন সংগঠনের অভাব নেই, কিন্তু ক্ষমতার অভাবে তারা এখন চাঁদাবাজি, মাস্তানির সুযোগ পাচ্ছে না বললে চলে। ক্ষমতা পেলে তারাও জেগে উঠবে। সব মিলিয়ে তৃণমূলের রাজনীতির নামে সামাজিক অবস্থা এখন ভয়াবহ।
ইউনিয়ন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। পূর্বের সে নিয়ম শৃঙ্খলায় সমাজ আবদ্ধ ছিল দীর্ঘদিন প্রয়োগের মাধ্যমে তার ত্রুটিগুলো বাদ পড়ে সুন্দর নিয়ম শৃঙ্খলার মাঝে তার প্রয়োগ হচ্ছিল। এখন আবার দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সমাজে শৃঙ্খলার ব্যবস্থা করা ঠিক হয়নি। দলীয়ভাবে করার ফলে রাজনৈতিক বিভক্তিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছছে এবং বিশৃঙ্খলা ইউনিয়ন পর্যায়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে। তাতে আগামীতে আরও অশান্তির সৃষ্টি হবে।
আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় মার্কা ভিত্তিক নির্বাচন স্থগিত রাখা হোক। কেউ কেউ হয়তো পশ্চিম বাংলার দৃষ্টান্ত দিতে পারেন এ বিষয়ে। পশ্চিম বাংলায় গিয়ে দেখে আসুন সমাজ ব্যবস্থা পশ্চিম বাংলায় ভেঙে পড়ে পচন ধরেছে। হ্যাঁ একটা দলীয় সুবিধা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে-যারা ক্ষমতাসীন তারা পেশিশক্তির জোরে নির্বাচনে জিতে আসে।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক