বাংলাদেশ থেকে ৫৯ কোটি ডলারের পোশাক কম কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশের মোট রফতানির সিংহভাগ হয় তৈরি পোশাক। আর একক দেশ হিসেবে এ পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। চলতি ২০২০ সালের প্রথম আট মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ হিসাবে আট মাসে বাংলাদেশ থেকে ৫৯ কোটি ৪১ লাখ ৬৯ হাজার ডলারের পোশাক কম কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র।
৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীন অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৩৪৮ কোটি ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ৪০৭ কোটি ৯৫ লাখ ২২ হাজার ডলার।
পোশাক রফতানিকারক বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো থেকেও পোশাক আমদানি কমিয়েছে মার্কিন ক্রেতারা। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম থেকেও পোশাক আমদানি কমেছে মার্কিন ক্রেতাদের। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ভিয়েতনাম থেকে ৮১৭ কোটি ৬০ লাখ ৪৩ হাজার ডলারের পোশাক কিনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা।
বাংলাদেশের পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম সব সময়ই এগিয়ে ছিল। কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, চীন সব দেশ থেকেই পোশাক আমদানি কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের। আর এ পরিস্থিতি আরো দীর্ঘমেয়াদে অব্যাহত থাকবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্টে গোটা বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কমেছে ২৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। চীন থেকে আমদানি কমেছে ৪৮ শতাংশ। ভিয়েতনাম থেকে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে কভিড-১৯-এর প্রভাব পড়তে শুরু করে, এপ্রিল-জুন সময়ে তা বিপর্যয়ে রূপ নেয়, জুলাই থেকে আবার পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। মে মাসে ৬০ শতাংশ নেতিবাচক বা ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও আগস্টে উন্নতি হয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয় ২২ শতাংশ। এ ধারা মার্কিন খুচরা বিক্রি পরিস্থিতির যথার্থ প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্র সেনসাস ব্যুরোর তথ্য বলছে খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধি মে মাসে ছিল ঋণাত্মক ৬২ শতাংশ এবং আগস্টে ছিল ঋণাত্মক ২০ শতাংশ। আগস্টে খুচরা বিক্রির পুনরুদ্ধারে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। আগস্টে বাংলাদেশ ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে, যা জুনে কারখানা পুনরায় চালুর পর জুন-জুলাইয়ে জাহাজীকরণ শুরুর সঙ্গে যুক্ত।
বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ দেশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কমেছে বলে দেখা যাচ্ছে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে। পোশাক পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান গন্তব্যগুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে চীন। জানুয়ারি থেকে আগস্ট এ আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে পোশাক আমদানি কমেছে ৪৭ শতাংশ। ভিয়েতনাম থেকে কমেছে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও পোশাক আমদানি কমেছে মার্কিন ক্রেতাদের। দেশটি থেকে জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ৩২ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি যথাক্রমে কমেছে ২০ দশমিক ৮৯ ও ৪০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শুধু কম্বোডিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের আমদানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
ডিসেম্বরে চীনে উত্পত্তির পর জানুয়ারি-এপিলের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে কভিড-১৯। আক্রান্ত দেশগুলোর পদক্ষেপ অনুসরণ করে মার্চের শেষে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটির নামে শুরু হয় অঘোষিত লকডাউন। দেশে তৈরি পোশাক পণ্যের রফতানিকারকরা বলছেন, বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশকে দেয়া ৩১৮ কোটি ডলারের রফতানি ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছেন।