আরও সহজ হচ্ছে নীতিমালা ঋণ বিতরণের সময়ও বাড়ছে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও আর্থিক খাতের ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজগুলোর মধ্যে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে নীতিমালা সহজ এবং ঋণ বিতরণের সময়সীমা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’। নীতিমালা সহজ করতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে সোনালী ব্যাংক সংশোধিত নীতিমালার একটি খসড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি চূড়ান্ত করবে। একই সঙ্গে ঋণ বিতরণের সময়সীমা এক মাস বাড়ানো হতে পারে এবং মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে। সিএমএসএমই খাতে প্রণোদনা ঋণ বিতরণের সংশোধিত নীতিমালা ও সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই নতুন নির্দেশনা জারি করবে। প্রণোদনা ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দ্বিতীয় দফা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়র ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ‘পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন’ (পিকেএসএফ)-এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, বৈঠকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রণোদনা ঋণ বিতরণের চিত্র বিশেষভাবে পর্যালোচনা করা হয়। ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গত ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে প্রণোদনা ঋণ বিতরণের চিত্র পর্যালোচনা করা হয়েছিল।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও আর্থিক খাতের ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় ১ লাখ ৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে দেশের ব্যাংক খাতের মাধ্যমে ৮৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ৮টি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর এসব প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে তারল্যের যোগান দিতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমও চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই খাতে প্রণোদনা ঋণ বিতরণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অতি সামান্য।
সিএমএসএমই খাতে চলতি মূলধন ঋণ বিতরণে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ তহবিল ঘোষণা করেছিল সরকার। এ খাতে ঋণ বিতরণে গত ১৩ এপ্রিল নীতিমালা ঘোষণা এবং ২৭ এপ্রিল ১০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅথায়ন স্কীম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে গত ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ৫০ জন উদ্যোক্তার অনুকূলে ৩ হাজার ৫২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এটি ঘোষিত প্যাকেজের মাত্র ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ।
বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্যমতে, গত ১৫ সেপ্টেস্বর পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ মাসে সিএমএসএমই খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ হচ্ছে সব মিলিয়ে মাত্র ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। দুই হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয়টি ব্যাংক মোট ৯৬ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। অন্যদিকে বড় শিল্প ও সেবা খাতে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৬৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। চার হাজার ১০১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকওয়ারি হিসাবে, সিএমএসএমই খাতে ৫৩৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক ১০ কোটি ৮১ লাখ টাকা (২.০১%), ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা (০.৮১%), ৮৪৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক ৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা (৭.৬৪%), ২৬৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা (৩%), ২৭০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বেসিক ব্যাংক ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা (১.১৬%) ও ২০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা (৫.৯%) ঋণ বিতরণ করেছে বিডিবিএল।
সূত্রমতে, বৈঠকে সিএমএসএমই খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণের অগ্রগতি ‘হতাশাব্যঞ্জক’ বলে মন্তব্য করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
সূত্র জানায়, সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে নীতিমালা ও নতুন গ্রাহককে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার উদ্বেগের কথা জানিয়েছে ব্যাংকগুলো।
প্রণোদনার ঋণ যাতে খেলাপি না হয়ে পড়ে, সেজন্য ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ রয়েছে। কারণ কোনো কারণে ব্যাংকগুলো প্রণোদনা ঋণের অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষিত ব্যাংকগুলোর নগদ জমা থেকে তা কেটে রাখা হবে। এক্ষেত্রে ঋণ আদায়ের বিপরীতে অর্থ কেটে রাখার সুপারিশ করেছে ব্যাংকগুলো।