‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্রতিবাদ বিক্ষোভ আজ মহাসমাবেশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ধর্ষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি থেকে আওয়াজ উঠছে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের। সেই সঙ্গে ধর্ষকদের প্রশ্রয়দাতাদেরও বিচার দাবি করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ অংশ নেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। রাজধানীর শাহবাগ, ধানমণ্ডি, সিদ্ধেশ্বরী, বারিধারার প্রগতি সরণিসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে গতকাল। সকাল ১১টার পর থেকেই শাহবাগে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধে সরকারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মহাসমাবেশে’র ডাক দিয়েছে ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’র নেতৃবৃন্দ। তার আগে একই ইস্যুতে মহাসমাবেশ’র ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র জনতার মঞ্চ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একইভাবে আজ বিকালে সারা দেশে সব শহীদ মিনারে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’র গতকালের কর্মসূচি থেকে সবাইকে আজকের মহাসমাবেশ সফল করার আহ্বান জানানো হয়। এ সময় জননিরাপত্তা দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যর্থ উল্লেখ করে অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, আমরা এখানে বিচারহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে এসেছি। এমন নিশ্চয়তা নেই যে, কাল আমাদের মা, বোন বা অন্য কেউ ধর্ষণের শিকার হবে না। এ সময় দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। বক্তারা বলেন, আমাদের ওপর যতই পুলিশি হামলা, মামলা করা হোক না কেন, আমরা রাজপথ ছাড়বো না। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে আছি এবং থাকবো। গত বুধবার বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত এক শিক্ষার্থী বলেন, লাঠিয়াল বাহিনী আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। আমাদেরকে আহত করেছে। আমাদের চারপাশ থেকে এভাবে হামলা করা হলেও আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে। একইভাবে সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিচারের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ করেছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। আন্দোলনে সিদ্ধেশ্বরী স্কুল, সেন্ট জোসেফ স্কুলের শিক্ষার্থীরাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। বেলা ১২টায় বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠানটির কলেজ গেটের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা। বিক্ষোভে ধর্ষক ও নারী নিপীড়কদের দ্রুত বিচারের দাবি জানানো হয়। এ সময় নারী নিরাপত্তায় প্রশাসনের ব্যর্থতার ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা।
একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, যারা ধর্ষণ করছে, তাদের পেছনে গডফাদাররা আছে, তাদের কিন্তু বিচারের আওতায় আমরা নিয়ে আসছি না। আমরা লক্ষ্য করছি, রাজনীতির একটি অংশ যারা, দুর্বৃত্তায়ন করছে, তাদের আশ্রয়ে বারবার এই ধর্ষকরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে যে দেনা-পাওনার রাজনীতি, সেটা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। ধর্ষণ বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়ার কারণে, সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ার কারণে ধর্ষণ আজ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে এক হাজার ধর্ষণের মধ্যে চারজন বিচার পাচ্ছে। অর্থাৎ সামাজিক সমস্যার সঙ্গে আইনগত সমস্যাগুলো আছে, সেগুলোও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমান বলেন, ধর্ষকরা প্রভাবশালী। তারা রাজনৈতিক এবং পেশীশক্তির মাধ্যমে এসব কাজ করে বেড়ায়। ধর্ষণের আইন সংশোধন করতে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করলে ধর্ষণের মাত্রা কমবে। ছাত্র সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যেভাবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, সেভাবে আমাদের সবার জেগে ওঠা উচিত। মানববন্ধনে অংশ নেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মঈন, ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, থিয়েটার অ্যান্ড পাফরমেন্স স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসরাফিল শাহীন, রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিন্নাত হুদা প্রমুখ। এক হাতে জাতীয় পতাকা, অন্য হাতে ‘হ্যাং দ্যা রেপিস্টস’ লেখা ‘প্ল্যাকার্ড নিয়ে বারিধারার প্রগতি সরণি এলাকায় বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।’ গতকাল দুপুরে মূল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শত শত শিক্ষার্থী। এ সময় হ্যান্ডমাইক হাতে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেয় তারা।