ছিনতাইকারীদের গডফাদার ও রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে বোমা ফাটিয়ে ১৭ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের গডফাদাররা কারা এবং তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কী তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। ‘গডফাদারদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে’ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেনের দেয়া এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে জোর আলোচনাও হচ্ছে যশোর শহরে। তবে এসব গডফাদার ও তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে মিলেছে নানা তথ্য। অপরদিকে ১৭ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় গতকাল শুক্রবার ৩ সহোদর সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই সাক্ষীদের একজনের বাড়িতে বসে টাকা ভাগ করেছিলো ছিনতাইকারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, লুটের পর টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া আরাফাতের ডাক নাম রাজু। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা তার গডফাদার (আশ্রয়দাতা)। পুরাতন কসবা কাজীপাড়ায় সাবেক এই নেতার বাড়ি হলেও শহরের গাড়িখানা রোড ও বড়বাজারে অপরাধজগৎ কেন্দ্রিক তার একটা প্রভাব সম্প্রতি গড়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগে সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়ায় তিনি রাজধানী ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকও হয়েছিলেন। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা আশ্রিত বড়বাজার ও পূর্ব বারান্দীপাড়ার দুর্বৃত্তরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। সূত্র জানায়, টাকা লুটের সাথে জড়িত ধর্মতলার সোহেল ও ভাগ্নে বিল্লাল নামে অপর দুজন খোলাডাঙ্গার আলোচিত সন্ত্রাসী শাওনের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। সন্ত্রাসী শাওন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত বলে ধর্মতলা এলাকার একটি সূত্র জানায়। সূত্রটি আরও জানায়, ধর্মতলা ও খোলাডাঙ্গা এলাকায় আলোচিত সন্ত্রাসী শাওনের আশ্রয়ে থাকা সোহেল ও ভাগ্নে বিল্লালসহ অন্যরা নানা অপরাধের সাথে জড়িত। সম্প্রতি এই সন্ত্রাসী চক্র ধর্মতলা কাঁচাবাজার এলাকায় বোমাবাজি করে।
সূত্র আরও জানায়, আবার কেউ তাঁতীলীগের আলোচিত এক নেতার আশ্রিত সন্ত্রাসী। কয়েক বছর আগে সাংবাদিদের ওপর হামলার ঘটনায় তাঁতীলীগের ওই নেতা পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। সূত্র জানায়, যশোরে আলোচিত একজন পরিবহন শ্রমিক নেতার ছেলে ওই অপরাধী চক্রের একজন সদস্য। টাকা লুটের সাথে শ্রমিক নেতার ছেলে জড়িত কি-না তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। এদিকে ১৭ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় গতকাল ৩ সহোদর আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরা হচ্ছেন-পূর্ব বারান্দীপাড়া খালপাড় এলাকার শাহাজানের ছেলে কালু, বিল্লাল ও শুকুর আলী। এর মধ্যে কালু ডাকাতির সাথে জড়িত আরাফাত ওরফে রাজুর বন্ধু। তার বাড়িতে বসে দুর্বৃত্তরা লুটের টাকা ভাগাভাগি করেছিলো। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহাদী হাসান ওই ৩ সহোদরের জবানবন্দি গ্রহণ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর তুষার কুমার মন্ডল। অপরদিকে ধর্মতলা এলাকার একটি সূত্র জানায়, আরাফাত ওরফে রাজুর পিতার নাম লিটন। ধর্মতলা কাঁচাবাজারে তিনি (লিটন) কাঁচামালের ব্যবসা করেন। আরাফাত ওরফে রাজু পূর্ব বারান্দীপাড়ায় তার মা মেহেরুন নেছার সাথে বসবাস করে। টাকা ডাকাতিতে অংশ নেয়া তার ফুফাতোভাই সোহেল খোলাডাঙ্গা গাজীপাড়ার তবিবর রহমানের ছেলে। তবে পুলিশ এখনো পর্যন্ত তাকে আটক করতে পারেনি। তদন্ত কর্মকর্তা তুষার কুমার মন্ডল জানান, জড়িত অপর দুর্বৃত্তদের আটক ও লুণ্ঠিত বাকি টাকা উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দিনদুপুরে শহরের এমকে রোডস্থ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সামনে বোমা ফাটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে এনামুল হক নামে এক যুবকের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে আটক ও লুণ্ঠিত প্রায় আড়াই লাখ টাকা উদ্ধার করেছে।