যশোরে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িতরা শনাক্ত, ৬ জন আটক ও ব্যাগ-চাকু উদ্ধারের খবর

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সামনে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। এমনকি তাদের পরিচয়ও মিলেছে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের কাউকে আটকের কথা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো দাফতরিকভাবে স্বীকার করা হয়নি। তবে পুলিশ টাকা ছিনতাইয়ে সরাসরি জড়িত একজনসহ ৬ জনকে আটক এবং টাকার ব্যাগ ও দুর্বৃৃত্তদের ব্যবহৃত একটি চাকুও উদ্ধারের খবর মিলেছে বিভিন্ন সূত্রে।
সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর তুষার কুমার মন্ডল জানান, ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন গতকাল বুধবার বিকেলে কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলাটি তিনি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তারা ছিনতাইয়ের সাথে সরাসরি জড়িত ৩ জনকে শনাক্ত, এমনকী তাদের পরিচয়ও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এই ছিনতাইকারীদের বাড়ি যশোর শহরের বিভিন্ন স্থানে। তারা একটি অপরাধী চক্র। তাদের আবার গডফাদার রয়েছে।

কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানান, তারা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত কাউকে এখনো আটক করতে পারেননি। তবে তাদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পর কোতয়ালি থানা, সদর ফাঁড়ি, চাঁচড়া ফাঁড়ি ও ডিবি পুলিশের একাধিক টিম দুর্বৃত্তদের ধরতে অভিযানে নামে। গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত অভিযানে অন্তত ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন সরাসরি টাকা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত ছিলো। অপর ৫ জন তাদেরকে (ছিনতাই মিশনে অংশ নেয়া দুর্বৃত্তদের) বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সূত্র জানায়, দুর্বৃত্তরা টাকা ছিনতাইয়ের পর প্রথমে তাদের একজন সহযোগীর বাড়িতে যায়। ওই বাড়ির ছাদে বসে ব্যাগ থেকে টাকা বের করা হয়। এরপর ব্যাগটি ছাদে ফেলে রাখা হয়। পুলিশ সেখান থেকে ব্যাগটি উদ্ধার করেছে। এছাড়া দুর্বৃত্তদের ব্যবহৃত একটি চাকু ওই বাড়ির পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। একটি সূত্র জানায়, পুলিশ ছিনতাই হওয়া ১৭ লাখ টাকার মধ্যে ১৩ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও পুলিশের পক্ষ এ তথ্য দাফতরিকভাবে স্বীকার করা হয়নি। পুলিশ যে ৬ জনকে আটক করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে তাদের মধ্যে ৪ জন হচ্ছে-যশোর শহরের বারান্দীপাড়ার লাল মিয়ার ছেলে নাসির, শংকরপুরের সোহাগ, ঝুমঝুমপুরের সোহেল এবং সজল নামে অপর এক যুবক। গত মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে নাসিরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে তার পিতা লাল মিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। গতকাল সকালে বাঘারপাড়া উপজেলার আলাদিপুর গ্রামে মামা ফারুকের বাড়ি থেকে আটক করা হয় সোহাগকে। অপর দুজন সজল ও সোহেলকে কোথা থেকে আটক করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, দুর্বৃত্তরা বাঘারপাড়ার দিকে পালিয়ে যায় বলে পুলিশের কাছে তথ্য ছিলো। এ কারণে বাঘারপাড়ার কয়েকটি স্থানে এমনকি নড়াইলের একটি স্থানে রাতে পুলিশ অভিযান চালায়। অপর একটি সূত্র জানায়, ছিনতাইকারীরা ও তাদের সহযোগীরা সকলে যশোর শহরের বাসিন্দা। এর মধ্যে বারান্দীপাড়া, ধর্মতলা ও পুরাতন কসবা কাজীপাড়ায় কয়েকজনের বসবাস। সূত্র জানায়, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ৩ জনকে দেখা গেলেও তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী ছিলো আশেপাশে। এদিকে স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, গুরুতর জখম এনামুল হকের অবস্থার এখনো উন্নতি হয়নি। খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশনের পর তাকে আইসিইউতে রেখেছেন চিকিৎসকরা। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরে শহরের মণিহার এলাকার ফলপট্টির আর আই ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফল ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের ভাই এনামুল হক ও শ্যালক ইমন জেস টাওয়ারে বিপরীতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ১৭ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা বোমা ফাটিয়ে ও এনামুল হককে ছুরিকাঘাত করে তার কাছ থেকে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সিটি প্লাজার সামনে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেখানকার সিসি ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধরা পড়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ৩ জন ছিনতাইকারীর মধ্যে একজনের কাঁধে টাকার ব্যাগ রয়েছে। অবশ্য ওই ৩ ছিনতাইকারীকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।