নির্মাণের দুইদিন পর ভেঙে পড়ল গরিবের ঘর

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ॥ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ’ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে উপজেলার হাবিবপুর গ্রামে প্রকল্পের একটি ঘরের কাজ সম্পন্ন হওয়ার দুইদিন পর দেয়াল ধসে পড়েছে। দেয়াল ধসে রাজন নামের এক নির্মাণশ্রমিক আহত হন। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণকাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে। মজবুত করে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে না। ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সরকারের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। তবে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, নির্মাণ শ্রমিকদের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। ঘর হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত কোনো ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করে দেবেন শ্রমিকরা। কাজ শেষে ঘর বুঝে নেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৭টি ঘরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরু থেকে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ হেল আল মাসুম বলেন, আমার অফিসে এ সংক্রান্ত কোনো তালিকা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এককভাবে প্রকল্পের দেখভাল করছেন। এমনকি কোন গ্রামের কোথায় ঘর তৈরি হচ্ছে সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। হাবিবপুর গ্রামের নির্মাণাধীন ঘর ধসে পড়ার বিষয়ে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুর রহমান বলেন, দায়সারাভাবে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হচ্ছে। গরিবের ঘরে ইউএনওর প্রভাব পড়েছে। সরকারি অর্থ লুটপাট হচ্ছে।
নিম্নমানের ইট-বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করায় ঘরগুলো শুরু থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। ঘরের ছাউনিতে মেহগনি কাঠের ফ্রেম ও রেলিংয়ে রডের পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে জিআই তার। ফলে ঝড়বৃষ্টিতে ঘরগুলো উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। মনোহরপুর, নাকোল, দিগনগর, কাঁচেরকোলসহ বিভিন্ন এলাকায় গরিবদের জন্য নির্মিত এসব ঘর খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক ঘরে ফাটল ধরেছে। কিছু ঘরের পলেস্তারা খসে পড়ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গরিবদের এসব ঘর পেতে একটি দালাল সিন্ডিকেট কাজ করেছে। অনেক এলাকায় ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে ঘরের তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রকল্পের সভাপতি ইউএনও। পিআইও সদস্য সচিব হলেও অফিস সহকারী মিন্টুকে দিয়ে ইউএনওর তত্ত্বাবধানে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ চলছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসরাম বলেন, নির্মাণশ্রমিকদের অব্যবস্থাপনার কারণে হাবিবপুর গ্রামে ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে। ঘরগুলো সরকারি বিধি মোতাবেক নির্মিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট, বালু ব্যবহারের বিষয়টি ঠিক নয়। ঘরগুলো হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত ভেঙে পড়লে পুনরায় মেরামত করা হবে।