ভারতীয় পেঁয়াজ : ভোমরা দিয়ে ৭২১ মেট্রিক টন আসলেও বেনাপোল দিয়ে এলো না এক টনও

0

সুন্দর সাহা॥ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল ভারত থেকে পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি হয়েছে। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দুর দিয়ে ৩১ ট্রাকে ৭২১ মেট্রিক টন ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে ঢুকেছে। তবে, দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে গতকাল কোনো পেঁয়াজ আসেনি। সূত্র জানায়, ভারত সরকার কোনো ঘোষণা ছাড়াই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। অনেক দেনদরবার করার পর পূর্বে এলসি করা পেঁয়াজ রফতানিতে ছাড় দেয় ভারত। সে মোতাবেক গতকাল বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি হয়েছে। অন্য সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এলেও দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে এলো না কোন পেঁয়াজ।পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করার ফলে বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোলে আটকা পড়ে পেঁয়াজ ভর্তি প্রায় ১৫০টি ট্রাক। একই অবস্থা অন্যান্য স্থলবন্দরেও। একই ভাবে সাতীরার ভোমরা স্থল বন্দরের ব্যবসায়ীদের ১৬৫ ট্রাক পেঁয়াজ ভারতে আটকা পড়ে যায়। তবে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে আগে এলসি করা পেঁয়াজের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় গতকাল শনিবার দুপুর থেকে ভোমরা বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩১টি পেঁয়াজের ট্রাক দেশে প্রবেশ করেছে। ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মহসিন হোসেন বলেন, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩১ ট্রাকে ৭২১ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। ভারত কেন পেয়াজ রফতানি বন্ধ করেছিল সে বিষয়ে লিখিতভাবে কিছু জানায়নি। যে পেঁয়াজের ট্রাকগুলো দেশে প্রবেশ করেছে সেগুলো আগে এলসি করা ভোমরা সহ বিভিন্ন স্খল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় আটকে থাকা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকের লোড এক্সপোর্ট (লিইও) করা না থাকায় বেনাপোল বন্দরে পেঁয়াজ বোঝাই কোনো ট্রাক আসেনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানান, নিষেধাজ্ঞায় আটকে পড়া পেঁয়াজের একটি অংশ ভারত সরকার ছেড়ে দেয়ার সম্মতি দিলেও শনিবার বেনাপোলে কোনো ট্রাক আসেনি। কবে নাগাদ আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ওপারের রফতানিকারকরা। তারা জানান, শুক্রবার ভারতের সিবিআইসি যে নির্দেশনা দিয়েছিল শনিবার সকালে পেট্রাপোল কাস্টমকে তারা আরও একটি নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গত সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বন্দর এলাকার যেসব পেঁয়াজের ট্রাকের লোড এক্সপোর্ট (লিইও) করা ছিল শুধুমাত্র সেই ট্রাকগুলো বাংলাদেশে যাবে। তবে পেট্রাপোল বন্দর অভ্যন্তরে পাঁচটি পেঁয়াজের ট্রাক ছিল। এর মধ্যে একটি ট্রাকের লিইও করা ছিল। পেঁয়াজে পচন ধরায় বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রফতারিকারক সেই পেঁয়াজের লিইও বাতিল করে। এতে পেট্রাপোল বন্দরে লিইও করা কোনো পেঁয়াজের ট্রাক না থাকায় শনিবার ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে কোনো আসেনি পেঁয়াজের কোনো ট্রাক।
বেনাপোল দিয়ে কোন পেঁয়াজ না এলেও ভোমরা স্খলবন্দর সহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে গতকাল পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকেছে। এ বিষয়ে ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, অনুমোদন করা পেঁয়াজের ট্রাক ৪০-৪৫টি। ১২৫ ট্রাক পেঁয়াজ এলসি করা রয়েছে। ভারত সরকার ডকুমেন্ট পাস (অনুমোদন) করা ট্রাকগুলো ছেড়ে দিয়েছে। বাকিগুলো দেয়নি। পেঁয়াজ রফতানির বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি ভারত। ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্য মাকসুদ খান বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এরপর আগের ডকুমেন্ট পাস করা ট্রাকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। ভোমরাসহ তিনটি বন্দর দিয়ে ২৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে ভারত সরকার। সে অনুমতিতে ডকুমেন্ট পাসকৃত ট্রাকগুলো দেশে প্রবেশ করছে।
বাংলাদেশের আমদানিকারকদের দাবি ও সরকারি তৎপরতায় ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের রফতানিকারকরা পেঁয়াজ রফতানির আবেদন জানান। তারই প্রেেিত ১৮ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় শুল্ক অধিদফতর। তবে গত শনিবার সকালে বন্দর এলাকার যেসব পেঁয়াজের ট্রাকের লোড এক্সপোর্ট (লিইও) করা ছিল শুধুমাত্র সেই ট্রাকগুলো বাংলাদেশে যাবে এমন নির্দেশনা দেয়ার পর এই জটিলতা তৈরি হয়। এ বিষয়ে, ভারতের পেট্রাপোল কিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, পেঁয়াজ রফতানি বন্ধে ভারতের আদেশ প্রত্যাহার করতে আহ্বান জানানোর পর পূর্বের ঋণপত্রের (এলসি) পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানির নির্দেশনা দিয়ে শুক্রবার রাতে বন্দর ও কাস্টমসহ বিভিন্ন দফতরে পত্র দেয় সিবিআইসি। এদিকে নতুন করে লিইও করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে নতুনভাবে লিইও করার পর সেটি কার্যকর হবে কি-না সেটা নিশ্চিত করতে পারেননি কার্তিক চক্রবর্তী। বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমের কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আকসির মোলা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ভারত থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের সময় কাস্টম থেকে গেট পাস নিতে হয়। সকাল থেকে ভারতীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প থেকে কোনো গেট পাস গ্রহণ না করায় শনিবারও পেঁয়াজের কোনো চালান আসেনি বেনাপোল বন্দরে। কবে আসবে তা নিশ্চিত করে জানানো হয়নি।