জ্বালানি তেলের ব্যারেল ২৫ ডলারে নামতে পারে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে যে চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে, ইতিহাসে এমন পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। করোনা পরিস্থিতি রীতিমতো অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছে বিশ্বকে। একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ছে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। এমন নানামুখী সংকট সহসাই দূর হওয়ার নয়। ফলে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সংকট আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতন ঘটাতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব রাশিয়া। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ২৫ ডলারে নেমে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। খবর অয়েলপ্রাইসডটকম ও বিজনেস ইনসাইডার।
সেন্ট্রাল ব্যাংক অব রাশিয়ার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে প্রধানত দুটি বিষয় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের জন্ম দিতে পারে। প্রথমত, করোনা-পরবর্তী বিশ্বের আর্থিক নীতি। দ্বিতীয়ত, ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। দুটো ক্ষেত্রেই করোনা-পরবর্তী বিশ্ব চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সময় পার করবে। যা দীর্ঘমেয়াদে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণ হতে পারে। এর জের ধরে ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ২৫ ডলারে নেমে আসতে পারে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনে করোনা সংক্রমণ লাগামহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র হয়ে দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণকে মহামারী ঘোষণা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংক্রমণ এড়াতে দেশে দেশে ঘোষিত হয় লকডাউন। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকে। তবে সংক্রমণ পরিস্থিতির এখনো খুব একটা উন্নতি হয়নি।
জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতেও মহামারীর বিরূপ প্রভাব পড়ে। লকডাউনে কার্যত স্থবির হয়ে আসে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও পরিবহন খাত। এর ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ পতন দেখা যায়। চাহিদা রেকর্ড পরিমাণ কমায় মার্চে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম শূন্য ডলারের নিচে নেমে যায়। তবে করোনা মহামারীর মধ্যেও দেশে দেশে লকডাউন শিথিল হয়ে অর্থনীতির গতি ফিরতে শুরু করায় জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা ও দাম আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৪০ ডলারের ওপরে রয়েছে।
করোনা মহামারীর কারণে চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় মন্দা ভাব বজায় থাকতে পারে। জ্বালানি তেলের রফতানিকারক দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) জানিয়েছে, করোনা মহামারীর জের ধরে চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়াতে পারে দৈনিক গড়ে ৯ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেলে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯০ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল বা ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কম।
তবে আগামী বছর নাগাদ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ওপেক। এ সময় জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়াতে পারে দৈনিক গড়ে ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেলে, যা চলতি বছরের তুলনায় দৈনিক গড়ে ৭০ লাখ ব্যারেল বেশি।
চাহিদা বৃদ্ধির এ প্রবণতায় স্বাভাবিকভাবেই জ্বালানি পণ্যটির দাম বেড়ে যাওয়ার কথা। তবে বাস্তব পরিস্থিতি এমনটা নাও হতে পারে। রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, করোনা-পরবর্তী বিশ্বে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে দেশগুলো কেমন আচরণ করবে, তার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করছে জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য দাম। মন্দার চ্যালেঞ্জ এড়াতে দেশগুলো কঠোর ও আত্মকেন্দ্রিক নীতি গ্রহণ করতে পারে। একই সঙ্গে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধ আরো জোরালো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চীন-ভারত, উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও রয়ে যাচ্ছে। এসব পরিস্থিতিতে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।