বিস্ফোরণের ভয়াবহতা কারণ নিয়ে অনুসন্ধান

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো গতকালও গ্যাস লিকেজের সন্ধানে খনন কাজ পরিচালনা করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে দুটি ছিদ্র পাওয়া গেছে। তবে গ্যাস লিকেজ থেকেই দুর্ঘটনা ঘটেছে কি-না তা আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য খনন কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। ওদিকে এ ঘটনায় তদন্তের বাইরেও বিভিন্ন সমস্যার কথা উঠে এসেছে বিষেশজ্ঞ ও জনসাধারণের মতামতে। তদন্তে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থাও। এখন পর্যন্ত তাদের ধারণা, গ্যাস লিকেজ থেকেই এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকেই দায়ী করছেন তারা। বলছেন, রাজধানীতে এমন অনেক গ্যাস লিকেজ এবং অবৈধ সংযোগ রয়েছে।
অনেক জায়গায় এমনও আছে যেখানে গ্যাস বের হতে দেখা যায়। যা থেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবেই গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট মোতাহার হোসেন খান বলেন, এই দুর্ঘটনাটি গ্যাস লিকেজ থেকে ঘটতে পারে কি-না সেটা নিয়ে আমাদের গবেষণা এখনো চলছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে এটিই আসল কারণ। আমাদের একটি টিম এটি নিয়ে কাজ করছে। সেখানে তারা গিয়ে বিষয়টি দেখছেন। পরবর্তীতে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবো। তবে এ ধরনের দর্ঘটনা রোধে প্রথমত করণীয় হলো- এই অব্যবস্থাপনাকে আগে বন্ধ করা। রাজধানীসহ অনেক জায়গায় এমন আরো অনেক গ্যাস লিকেজ আছে। যা থেকে এমন আরো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দ্বিতীয়ত অভিজ্ঞ লোক দিয়ে কাজ করাতে হবে। তিনি বলেন, গ্যাস লিকেজ থেকে এতো বড় একটি ঘটনা ঘটতে পারে এটা ভাবনার বিষয়। তাই বিস্তারিত তদন্ত করেই এ বিষয়ে বলা যাবে। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, রাজধানীতে অগ্নিদুর্ঘটনার এক-তৃতীয়াংশ গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে হয়। গত এক বছরে সংঘটিত এক হাজার অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী এই ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সংযোগ ও লাইন। বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাসের হিসাবে- রাজধানী ও আশেপাশের এলাকায় মোট ১০ লাখ রাইজার রয়েছে। এরমধ্যে ৭ ভাগ রাইজারে লিকেজ পেয়েছে তারা। তবে অসংখ্য অবৈধ সংযোগের হিসাব এর বাইরে। তিতাস গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী আবদুল ওয়াহাব বলেন, আমাদের ক্যারিয়ার গ্যাসে বিস্ফোরক থাকে তাই আমরা এমএস পাইপটা ব্যবহার করি। এই পাইপ আবার মাটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যেটা অল্প সময়ে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। যার জন্য আমরা পাইপের ওপর র‌্যাপিং করে দেই। এই র‌্যাপিংটা যদি থার্ড পার্টি ড্যামেজ করে দেয়, তখন তো আমরা মাটির ভেতর থেকে এটাকে সেভ করতে পারি না। অপরিকল্পিত বাড়িঘরে অপরিকল্পিত এই ইউটিলিটি লাইনগুলো বসানোর জন্যই আমরা আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রায় ৪ লাখ রাইজার আমরা অনুসন্ধান করেছি। এরমধ্যে ৭ শতাংশের বেশি রাইজারে আমরা লিকেজ পেয়েছি। আর কোনো লিকেজ আছে কি-না তার জন্য এই ৪ লাখ রাইজারকে আমরা মনিটরিং করছি। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক সামসুল আলম বলেন, একটা রাইজার থেকে ১০-১২টা কানেকশন দিয়ে তারা পয়সা নিচ্ছে। ৭০ হাজার লিকেজ থাকলে তারা শুধু জনগণকেই গ্যাস দিচ্ছে না, ঢাকার বায়ুমণ্ডলেও তারা গ্যাস বিলিয়ে দিচ্ছে। যে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমাদের সেবা করার কথা, সেই নেটওয়ার্কের এ রকম মৃত্যুফাঁদ করে আমাদের জীবন দিতে হচ্ছে।