বন্দুকযুদ্ধে নিহত স্কুলছাত্র জয়নাল, যা জানান দিলো আসল জয়নাল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন জয়নাল। ঘটনার পর একটি দেশীয় এলজি, কিরিচ ও চারটি কার্তুজের খোসা উদ্ধার করা হয়। ওই বন্দুকযুদ্ধে আহত হয়েছেন চট্টগ্রামের বায়েজীদ থানার এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিম হোসেন ও কনস্টেবল মাসুদ রানাও। এমন ভাষ্য ছিল তখন পুলিশের। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় আসামি জয়নালকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানান তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা। আদালতও সেই অনুযায়ী যথারীতি অব্যাহতি দেন জয়নালকে। কিন্তু আইনজীবীর মাধ্যমে হঠাৎ ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দেন জয়নাল। তখন প্রশ্ন ওঠে তাহলে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়া জয়নাল কে? খোঁজ নিয়ে মেলে বন্দুকযুদ্ধে নিহত জয়নাল দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
নোয়াখালীর মাইজদী এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে সে। ওই মামলার কোনো আসামি নয় সে। মামলার আসল আসামি জয়নাল চট্টগ্রাম নগরীর রৌফাবাদ পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার আবদুল জলিলের ছেলে। যাদের একে অপরের কোনো সম্পর্ক নেই। নিহত জয়নালের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর মোবারক আলীর পিএস সামসু বাসা থেকে যাওয়ার পরই ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর কাউন্সিলর মোবারক আলীর কাছে গিয়ে তার হাতে-পায়ে ধরেছি। তবুও তার মন গলেনি। কাউন্সিলর বলেছে আমার ছেলের নামে নাকি বহু অভিযোগ। তার জন্য কিছু করতে পারবেন না। তিনি জানান, ২০১৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর রাত ১টায় বায়েজীদ এলাকায় নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের মাঠেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় জয়নাল। বায়েজিদ পুলিশ তখন বরাবরের মতোই গণমাধ্যমকে বলেছিল নিহত জয়নাল বেশ কয়েকটি মামলার আসামি ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। জয়নাল নিহত হওয়ার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দীপংকর চন্দ্র রায় আসামির তালিকা থেকে আসল জয়নালের নামটি বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গত বছরের ১৫ই অক্টোবর।
অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন এজাহারের ২ নম্বর আসামি মো. জয়নাল, পিতা আবদুল জলিল পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার নিহত হওয়ার সব বিষয় ও কাগজপত্র মামলার কেস ডকেটে (সিডিতে) নোট রাখি। একাধিকবার চিঠি দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছ থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট (এমসি) সংগ্রহ করেছি। এই চার্জশিট আদালতে দাখিল করার পর আদালত ওই মামলার দুই নম্বর আসামি মৃত জয়নালকে অব্যাহতি দেন। কিন্তু এরপরই আদালতে হাজিরা দিতে আসেন আসল আসামি জয়নাল। মোট তিন দফা শুনানিতে হাজিরা দেন প্রকৃত আসামি জয়নাল। মূলত এ সময়ই স্পষ্ট হয়ে ওঠে আসল আসামির বদলে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন অন্য এক জয়নাল।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩রা নভেম্বর বায়েজিদ থানার রৌফাবাদ পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার শাহ আলম নামে এক ব্যক্তির বাসায় ঢুকে মারধর, হত্যাচেষ্টা ও চুরির ঘটনায় ৭ জনের নামে মামলা হয়। এতে স্থানীয় বখাটে মো. জয়নালকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। নানা নাটকীয় ঘটনার পর চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে বিচারাধীন এই মামলার কার্যক্রম বর্তমানে রয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দীপংকর চন্দ্র রায় বলেন, মারা যাওয়া জয়নাল খুবই বেপরোয়া ছিল। তার বিরুদ্ধে দু-তিনটি মামলা রয়েছে বলে শুনেছি। তবে সে ছাত্র কিনা জানি না। মামলার তদন্তভার যখন নিই, তখন বায়েজিদ থানায় নতুন যোগদান করেছি। বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়া জয়নালকে ভুল করে এ মামলার আসামি জয়নাল ভেবে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছি। এদিকে আসল আসামি জয়নালকে বন্দুকযুদ্ধে মৃত উল্লেখ করে মামলা থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগে দীপংকর চন্দ্র রায়কে গত ১লা সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বায়েজিদ থানা থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানায় এসআই হিসাবে বদলি হন। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ঘটনাটি তদন্তের জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনারকে (উত্তর) নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, মামলার ২ নম্বর আসামি আবদুল জলিলের ছেলে মো. জয়নালের বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার তথ্য চার্জশিটে তুলে ধরা হয়েছে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্রও সিডিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে এখন দেখছি, মৃত আসামি জয়নাল আদালতে হাজিরা দিচ্ছে। আগামী ৬ই অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারিত আছে। ওইদিন আদালতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি আসলে কী ছিল, তার জুডিশিয়াল তদন্তের জন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। এদিকে আসল আসামি জয়নাল জীবিত আছে এবং বন্দুকযুদ্ধে অন্য জয়নাল মারা গেছেন শুনে মামলার বাদী শাহ আলম মূল জয়নালকে আবার চার্জশিটভুক্ত করতে গত ৩রা সেপ্টেম্বর আদালতে আবেদন করেছেন বলে জানান এই আইনজীবী।