কর্মক্ষম ‘ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট’ প্রযুক্তি দেখালেন মাস্ক

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥ কথা রেখেছেন ইলন মাস্ক। ‘মুনশট’ নামের কর্মক্ষম ‘ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট’ প্রযুক্তি দেখিয়েছেন তিনি। মানুষের বদলে গারট্রুড নামের শুকরের মাথায় বসানো হয়েছে ওই প্রযুক্তির চিপ।
    নতুন প্রযুক্তির ব্যাপারটি লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে সবার কাছে তুলে ধরেছেন তিনি। সিএনএন জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে শুরু হওয়া ওই লাইভিস্ট্রিমে তিনটি শুকরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন মাস্ক।
    শুকর তিনটির একটির মাথায় মাস্কের ব্রেইন ইন্টারফেস প্রতিষ্ঠান ‘নিউরালিংকের’ ইমপ্ল্যান্ট ছিল না, একটির মাথায় অতীতে বসানো হয়েছিল, এবং গারট্রুড নামের অবশিষ্টটির মাথায় বর্তমানে চিপ রয়েছে।
    নিজ খোঁয়াড়ে ঘুরে বেড়াতে, খাবার খেতে এবং মাটিতে গন্ধ শুকতে দেখা গেছে দেখা গেছে গারট্রুডকে। কিন্তু একই সময়ে প্রতিটি কর্মকাণ্ড সশব্দে রেকর্ড হচ্ছিল এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রমের হিসেব ‘রিয়েল টাইম’-এ দেখা যাচ্ছিল। মাস্ক জানান, দুই মাস হয়েছে গারট্রুডের মস্তিষ্কে ইমপ্ল্যান্ট জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাণীটির নাকের নিউরনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে চিপটি।
    ফলে নাক দিয়ে কোনো কিছু স্পর্শ করলেই তা এক হাজারেরও বেশি ইলেকট্রোডের মাধ্যমে শনাক্ত হয়ে নিউরাল স্পাইকের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষকে লক্ষ্য করে তৈরি হতে থাকা প্রযুক্তি শুকরে প্রয়োগ করা হলো কেন?“শুকরের সঙ্গে মানুষের মিল রয়েছে। আমাদের যদি মানুষের জন্য কোনো কিছু খুঁজে বের করতে হয়, তাহলে শুকর ভালো একটি পছন্দ “ – প্রশ্নের উত্তরে জানান মাস্ক।
    তিনি আরও জানান, “শুকরে ডিভাইসটি দুই মাস ধরে যেভাবে চলছে এবং দৃঢ়ভাবে কাজ করছে, তাতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ডিভাইসটি মানুষের ভেতরেও ভালোভাবে কাজ করবে।”
    মাস্ক নিজ পরিকল্পনা সবাইকে জানানোর বছর খানেক পর প্রযুক্তিটি সবাইকে দেখালেন। গত জুলাইয়ে এক আঁকা সংস্করণে মাস্ক দেখিয়েছিলেন, একটি কম্পিউটার চিপে খুব সরু কিছু ইলেকট্রোড রয়েছে যা ব্যক্তির মস্তিষ্কে সার্জিক্যাল রোবটের মাধ্যমে সংযুক্ত করা যাবে। ইমপ্ল্যান্টটি কানের পেছনে থাকা তারবিহীন রিসিভারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, যা কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।
    এ ধরনের ‘ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেইস’ ধারণা নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে কাজ করছেন। বানর এবং মানুষের মধ্যেও এ ধরনের ডিভাইস বসানো হয়েছে এবং পরীক্ষা করা হয়েছে। ‘ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ও এ ধরনের কিছু ‘গভীর-মস্তিষ্ক’ স্টিমুলেশন ডিভাইসে অনুমোদন দিয়েছে। অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের ডিভাইস তৈরিতে কাজ করছে।
    মার্কিন সোশাল জায়ান্ট ফেইসবুক এমন একটি ডিভাইস তৈরি করতে চাচ্ছে, যার মাধ্যমে শুধু চিন্তা করেই টেক্সট পাঠানো সম্ভব হবে।
    তবে, এ প্রচেষ্টাগুলো এখনও গবেষণাগারের গণ্ডি পার হতে পারেনি বেশ কয়েকটি কারণে। প্রথম কারণটি হচ্ছে, এ ধরনের প্রযুক্তি অসম্ভব দামি, এখনও বৃহৎ, এবং ব্যবহারকারী ও কম্পিউটার উভয়েরই এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যাপারে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
    মস্তিষ্কে এ ধরনের ডিভাইস বসানোর প্রক্রিয়াটিও জটিল। বর্তমানে খুলি কেটে মস্তিষ্ক অংশেবিশেষকে অরক্ষিত করে চিপ ইনস্টল করা হয়। পরে কানেক্টরকে খুলির সঙ্গে জোড়া দিয়ে দেওয়া হয় এবং সেলাইয়ের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। মাস্ক গত বছর দাবি করেন, নিউরালিংক রোবট রক্ত বাহক এড়িয়ে সুতার মতো করে ‘ওয়্যার’ বসাতে পারবে এবং এতে “ক্ষতি কম হবে”।
    ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউরালিংক এর আগেও নিজেদের ইমপ্ল্যান্ট ইঁদুরে প্রয়োগ করেছে। শুক্রবার মাস্ক জানান, তারা এফডিএ “ব্রেকথ্রু ডিভাইস” উপাধি অর্জন করেছেন জুলাইয়ে, এবং সামনে প্রথম মানব ইমপ্ল্যান্টের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
    গত বছর মাস্ক জানিয়েছিলেন, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ মানব পরীক্ষা শুরু করতে পারেন তারা, সে সময় প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় এফডিএ অনুমোদন ছিল না।