যশোর ডিবি পুলিশের অভিযান : ছিনতাই চক্রের তিন জন আটক, ১৮ ইজিবাইক উদ্ধার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তঃজেলা ইজিবাইক চোরচক্রের ৩ সদস্যকে আটক করেছে যশোরের ডিবি পুলিশ। গোপালগঞ্জ ও কুষ্টিয়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় ১৮টি চোরাই ইজিবাইক ও ৭০ পিস চেতনানাশক ওষুধও উদ্ধার হয়। এছাড়া আটক চোরচক্রের সদস্যদের কবল থেকে ইমরান শেখ (২০) নামে একজন ইজিবাইক চালককে উদ্ধার করা হয়েছে। ইজিবাইক চুরির জন্য যাকে কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন চোরচক্রের সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন।
আটক ইজিবাইক চোরচক্রের সদস্যরা হচ্ছেন-বরগুনার তালতলী উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ওহাব ফরাজির ছেলে আলম ফরাজি ওরফে মহারাজ (৪৪), যশোর সদর উপজেলার সীতারামপুর মধ্যপাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে রবিউল ইসলাম (৪৮) ও কুষ্টিয়ার চৌড়হাস ফুলতলার মতিমিয়া সড়কের মৃত কুতুব উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান ওরফে মেজর (৩৮)।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এই চোরচক্রের সদস্যরা অত্যন্ত বিপদজনক। তারা চালককে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত খাবার খাইয়ে ইজিবাইক চুরি করে থাকে। যশোরে এদের ফাঁদে পড়েছিলেন রফিজ গাজী (৪০) নামে একজন ইজিবাইক চালক। তিনি নড়াইলের চাকই গ্রামের মৃত নওশাদ গাজীর ছেলে। গত ২৭ জুলাই সকালে তিনি ইজিবাইক চালিয়ে অভয়নগরের শংকরপাশা থেকে দেয়াপাড়া ব্রিজে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত পরিচয় দুজন যাত্রীর সাথে তার পরিচয় হয়। এ সময় যাত্রীদ্বয় নিজেদেরকে মাছের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নম্বর চেয়ে নেন। পরদিন ২৮ জুলাই সকালে ওই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন তাকে মোবাইল ফোন করে ইজিবাইক ভাড়া নেওয়ার কথা বলে দেয়াপাড়া ব্রিজে যেতে বলেন। যথারীতি রফিজ গাজী ইজিবাইক নিয়ে সেখানে যান। এ সময় পূর্বেকার যাত্রীদের মধ্যে একজন সেখানে এসে তার ইজিবাইকে ওঠেন। তিনি তাকে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের একটি দোতলা ভবনের নিচতলার ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। সেখানে রফিজ গাজীকে মাংস ও ডাল দিয়ে ভাত খেতে দেয়া হয়। খাওয়ার পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরই ফাঁকে যাত্রীবেশী চোরচক্রের সদস্যরা তার ইজিবাইকটি নিয়ে চম্পট দেন। ওই ঘরে রফিজ গাজী অচেতন হয়ে থাকার বিষয়টি ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় টের পান স্থানীয় লোকজন। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে তাকে ঘরের ভেতর পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পরে বসুন্দিয়া ক্যাম্পের পুলিশ ঘরের তালা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। গত ২ আগস্ট হাসপাতালে রফিজ গাজীর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি স্বজন ও পুলিশকে সকল ঘটনা খুলে বলেন। তিনি বলেন, শুধু ইজিবাইক নয়, তার আড়াই হাজার টাকাও নিয়ে গেছে চোরচক্র। পরে সুস্থ হলে গত ১১ আগস্ট রফিজ গাজী এ সংক্রান্তে অভয়নগর থানায় একটি মামলা করেন। ওই ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিবি পুলিশ তদন্তে নামে। এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে নিশ্চিত হয় চোরচক্রের সদস্যরা গোপালগঞ্জ সদরের গোলাবাড়িয়া এলাকায় অবস্থান করছে। এরই প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশের ওসি সোমেন দাশের নেতৃত্বে একটি টিম গত ১২ আগস্ট বুধবার ওই এলাকায় যায়। তারা এ সময় চোরচক্রের সদস্যদের ধরতে তাদের ভাড়া নেয়া একটি ঘরের আশেপাশে ওৎ পেতে থাকেন। দুপুর একটার দিকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা দেখতে পান চোরচক্রের সদস্যরা ঘরে ঢুকে খেতে বসেছেন। সাথে সাথে ডিবি পুলিশ ঘরে ঢুকে সেখান থেকে চোরচক্রের দু জন সদস্য আলম ফরাজি ওরফে মহারাজ ও রবিউল ইসলামকে আটক করেন। ঘরের ভেতর থেকে এ সময় ফাঁদে ফেলা ইমরান শেখ নামে আরেকজন ইজিবাইক চালককে উদ্ধার করা হয়। ইমরান শেখ গোপালগঞ্জের কালজিয়া গ্রামের আব্দুস সামাদ শেখের ছেলে। এছাড়া আটক দুজনের কাছ থেকে রফিজ গাজীর মোবাইল ফোন সেটসহ ৮টি মোবাইল ফোন সেট, ৭০ পিস চেতনানাশক ওষুধ ও খাবার খাওয়ার প্লেট উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আটক দুজনের স্বীকারোক্তিতে একইদিন রাতে কুষ্টিয়ার চৌড়হাস ফুলতলার মিজানুর রহমান ওরফে মেজরের গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে ১৮টি চোরাই ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে রফিজ গাজীর ইজিবাইকও ছিলো। এ সময় ডিবি পুলিশ মিজানুর রহমান ওরফে মেজরকে আটক করে। আটকের পর মেজর স্বীকার করেন তিনি চোরাই ইজিবাইক কম দামে কিনে থাকেন।
পুলিশ সুপার বলেন, তাদের এই অভিযানের বিষয়টি ডিআইজি ছাড়াও সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার তাকে জানিয়েছেন, এই চোরচক্রের খপ্পরে পড়ে অজ্ঞান হওয়ার পর একজন ইজিবাইক চালকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই চক্রের সদস্যরা বিপদজনক। তারা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে অল্প কয়েকদিনের জন্য ঘর ভাড়া নেন। চালককে ঘরের ভেতর খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করার পর ইজিবাইক নিয়ে তারা ওই সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে পরে চম্পট দেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিকদার সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম (বিশেষ শাখা), ডিবি পুলিশের ওসি সোমেন দাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আটক ৩ জনকে পরে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঞ্জুরুল ইসলাম দুজনের এবং সাইফুদ্দীন হোসাইন একজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।