ঈদ পরবর্তী দ্বিতীয় হাটেও চামড়ার দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি

0

আকরামুজ্জামান ॥ দেশের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে ঈদ পরবর্তী দ্বিতীয় হাটে রেকর্ড পরিমাণ চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। তবে দাম নিয়ে হতাশা ছিলো আগের মতই। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। আর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া বিক্রি হয়েছে। ফলে এ বছর চামড়া নিয়ে যে বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কা ছিলো তা অনেকটা কেটে গেছে। রাজারহাটে সপ্তাহে দুইদিন বসে চামড়ার হাট। গত মঙ্গলবার ছিলো ঈদ পরবর্তী প্রথম হাট। অন্যান্য বছরে ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে হাটে পা ফেলা যেত না। কিন্তু এবার ঠিক তার উল্টো চিত্র। চামড়ার দাম কম ও হাটে পাইকার ব্যবসায়ীরা না আসায় বেচাকেনায় ধস নামে। গতকাল শনিবার হাটে বিপুল পরিমাণ চামড়া উঠায় বেচাকেনাও জমে ওঠে। তবে কাঙ্খিত দাম নিয়ে ঠিক আগের মতো হতাশা ছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
শনিবার হাটে কথা হয় চামড়া ব্যবসায়ী কানাই বিশ্বাসের সাথে। তিনি একজন পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ী। নড়াইলের বাসিন্দা এই চামড়া ব্যবসায়ী প্রায় ১৫ বছর ধরে এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত। কয়েকবছর ধরে চামড়ার দাম না পেয়ে এ বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ব্যবসা ছাড়ার। কিন্তু বাজারে তার টাকা আটকে থাকায় ফের কোরবানির চামড়া কিনে বাজারে তুলেছেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, সরকার এ বছর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও বেপারিরা সে দামে কিনছেন না। যে কারণে লোকসানেই চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। প্রতিপিস গরুর চামড়া মান ভেদে ১০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ২০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কানাই বিশ্বাসের মতো একই অভিযোগ অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর। তাদের মতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উপায়ন্ত না পেয়ে বাধ্য হয়ে হাটে চামড়া তুলেছেন। দ্বিতীয় হাটে পর্যাপ্ত চামড়া উঠলেও দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। বর্তমান বাজারদরে চামড়া বিক্রি করে আসল রক্ষা করা দায় হয়ে পড়েছে। তরিকুল ইসলাম নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, তিনি খুলনার ফুলতলা থেকে ২শ পিস গরুর চামড়া ও ১শ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে হাটে এসেছেন। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনে এখন প্রতিপিস গরুর চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫০ টাকা আর ছাগলের চামড়া ১৫-২০ টাকা। এ দামে চামড়া বিক্রি করে তিনি সর্বস্ব হারিয়েছেন বলে দাবি করেন।
একই কথা বলেন, মাসুদ রানা নামে আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করায় অনেক আগেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন তারা। লাভের আশায় এবারও চামড়া ক্রয় করছেন। ট্যানারি মালিকরা দাম না বাড়ালে এবারও পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন বলে তিনি আশঙ্কা করেন।  ঢাকার এক ব্যাপারি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি চামড়ায় ২০০ টাকা বেশি। গ্রেড অনুযায়ী চামড়ার দাম নির্ধারণ হয়। সেহেতু যে চামড়ার যেমন দাম তেমনি পাবেন তারা। এতে তাদের লোকসান হওয়ার আশঙ্কা কম। যারা ভালোমানের চামড়া নিয়ে আজ হাটে এসেছেন, তাদের চামড়া ঠিকই ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। আর যেসব চামড়া মানের দিক থেকে একটু খারাপ সেগুলো কম দামে বিক্রি হচ্ছে। রাজারহাট চামড়ার বাজারে খুলনা বিভাগের দশ জেলা ছাড়াও ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর এবং ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন। ঈদ পরবর্তী সময়ে তাই এ বাজারের দিকে নজর থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের। এ সময়ে বাজারটিতে কোটি কোটি টাকার চামড়া বিক্রি হয়। তবে কয়েকবছর ধরে এর ব্যতিক্রম ঘটছে।  এ বিষয়ে জেলা বিপণন কর্মকর্তা মো. সুজাত হোসেন খান বলেন, ‘শনিবার ঈদ পরবর্তী দ্বিতীয় হাটে রাজারহাটে রেকর্ড পরিমাণ চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। আমি সরেজমিনে হাট পরিদর্শন করে দেখেছি, গত হাটের তুলনায় গতকাল হাটে চামড়ার দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। গরুর চামড়া গ্রেড অনুযায়ী ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য হাটে যেখানে ছাগলের চামড়ার দাম ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা ছিল সেখানে গতকাল ৩০ থেকে ৭০ টাকা পিস বিক্রি হয়েছে’। যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ‘ঈদ পরবর্তী দ্বিতীয় হাট শনিবার হাটে সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। তবে ঈদের আগে ব্যবসায়ীরা বকেয়া টাকা পেলে বেচাকেনা আরও ভালো হত বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, শনিবার দ্বিতীয় হাটে কোনো চামড়া অবিক্রিত ছিল না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন তা অনেকটা সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন’।