বিদ্যুৎ বিল নতুন করে দেয়া হোক

0

বৈশ্বিক মহামারী কোভিড ১৯ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার, দেশে হঠাৎ সিদ্ধান্তে সব সরকারি পাটকল বন্ধ এবং করোনা রেড জোনের মাঝে সংসদ উপনির্বাচন ঘোষণা ও বর্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় এখন রক্তশূণ্য হয়েছে বিদ্যুতের স্পর্শে। বিদ্যুৎ এখন সবকিছু ফিকে করে দেশজুড়ে বার্নিং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। রাজধানী থেকে রাজগঞ্জ বা রাজাপুর গ্রাম সর্বত্র একই আলোচনা “বিদ্যুৎ বিল”। কথাটা ঠিক বিদ্যুৎ বিল নয়, জনগণের আলোচনার বিষয় “ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল”। জনগণের এই আলোচনা এখন গণমাধ্যমের প্রধান খবরে পরিণত হয়েছে। গতকালও টিভি চ্যানেলের অনেকটাও জুড়ে ছিল ভৌতিক বিল। টিভি ক্যামেরার সামনে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষের স্পষ্ট অভিযোগ ছিল তারা ভৌতিক বিদ্যুৎ বিলের শিকার হয়েছেন। মিটার রিডিং পরীা ছাড়াই বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা যে বিল করেছে তা স্বাভাবিক বিলের অনেক বেশি। ত্রে বিশেষ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এই ভৌতিক বিল শুধু রাজধানী বা কোনো শহরের নয় সারাদেশেই হয়েছে। রাজধানীতে গ্রাহকেরা প্রতিবাদ শুরু করলে বিষয়টি সরকারের নজরে আসে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী অতিরিক্ত বিল দুঃখজনক অবহিত করে পরবর্তীতে বিল সমন্বয় করা হবে জানান। বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুঃখ প্রকাশ করে একইভাবে পরবর্তীতে সমন্বয়ের কথা বলা হয়। জেলা পর্যায়েও বিল নিয়ে অভিযোগ করা হলে একই কথা বলছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা কীভাবে এটা করবেন তা স্পষ্ট করছেন না। ফলে, গ্রাহকদের মাঝে আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।
ভৌতিক বিল সম্পর্কে কর্তৃপ অযুহাত দিচ্ছেন করোনার কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিল করা সম্ভব হয়নি বলেই এমন সমস্যা হয়েছে। গ্রাহকরা অবশ্য এটাকে একটি খোঁড়া অজুহাত বলে দাবি করছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, মিটার রিডিং কোনো জনসমাগমের মধ্যে করতে হয় না। রিডার সাধারণত একাই যান এবং বাড়ির একপ্রান্তে বসানো মিটার নিরিবিলি পরীা করে অফিস বা বাড়ি বসে বিল করেন। ফলে, তার স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার কোন কারণ ছিল না। এরপরও যদি সম্ভব না হয়ে থাকে তাহলে সহজ পদ্ধতি ছিল সর্বশেষ রিডিং দেখে ওই মাসের ইউনিট ও বিল অনুযায়ী পরবর্তী তিনমাসের ধারাবাহিক বা গড় বিল করা। এতে খুব বেশি হলে ১০/১৫ ইউনিট হেরফের হতো। যা পরে সমন্বয় না করলেও কোনো গ্রাহক প্রশ্ন তুলতো না। কিন্তু বিদ্যুৎ কর্তারা তা না করে ইচ্ছে মতো বিল করেছে। তাদের এই কাজটা যে একটি বড় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে করা তার প্রমাণ মেলে বিল গুলো দেখলে। গ্রাহকরা বলছেন, বিদ্যুৎ বিভাগ একাধিক ভাগে বিভক্ত। এরমধ্যে পল্লীবিদ্যুৎ ও পিডিবিই প্রধান। এরা সম্পূর্ণ পৃথক। কোনো কাজেই কারো সাথে সম্পর্ক নেই। বিরোধপূর্ণ স্থানে একটা ছেঁড়া তার জোড়া দিতে কতনা নিয়ম তারা ফলান। অথচ, এবারের ভৌতিক বিলে সবাই এক। কারো বিল অভিযোগমুক্ত নয়। আবার অযুহাত সবারই এক। সবাই দুঃখপ্রকাশ করছেন, একই সুরে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। বলছেন, বিল দিয়ে দিন পরে সমন্বয় করা হবে। কিন্তু মারাত্মক ভুলে ভরা বিল কেউ প্রত্যাহার করছে না। কেউ বলছে না অপো করুন, নতুন বিল দেয়া হবে। তাদের এই অবস্থানই প্রশ্নবিদ্ধ করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান। পৃথক “কোম্পানি” হওয়ার পরও সিদ্ধান্ত ও কর্ম এক হয় কী করে? গ্রাহকদের অভিযোগ, এইসব কারণেই তারা পরবর্তীতে সমন্বয়ের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে তারা বলছেন প্রতিবছরের মে ও জুন মাসের বিদ্যুৎ বিল এরকমই প্রায় দ্বিগুণ হয়। অভিযোগ করলে কর্তৃপ সমন্বয়ের প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু বাস্তবে করেন না। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা মনেকরি গ্রাহক এবার সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই, গ্রাহকের আস্থা ফেরানো জরুরি। এ কারণে আমাদের প্রস্তাব সকল বিল প্রত্যাহার করে রিডিং পরীার মাধ্যমে নতুন বিল দেয়া হোক। কম হোক বেশি হোক গ্রাহক স্বস্তির সাথে বিল পরিশোধ করবে। আমরা আশা করবো, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন।