শিক্ষা ক্যালেন্ডার বদলে নতুন জট যেন না বাঁধে

0

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস রাষ্ট্রের এমন কোনো খাত নেই যেখানে ছোবল মারেনি। অর্থনৈতিক খাতগুলোতে এমনভাবে থাবা মেরেছে যে, তা সহসা মেরামত হবে বলে সরকারও মনে করছে না। তবে তির পর তির শিকার হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। একেবারে শিশু থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাই বিপর্যস্ত হয়েছে। স্কুল থেকে ভার্সিটি সকল পর্যায়ে সাপ্তাহিক, সাময়িক ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় সৃষ্টি হয়েছে জট। সেশনজট, সিলেবাসজট, ভর্তিজট সবই যেন পাকিয়ে গেছে ভয়ঙ্করভাবে। জট পাকিয়ে গেছে কোটি শিক্ষার্থীর জীবনে। সার্বিকভাবে সৃষ্ট এই জট থেকে শিক্ষাকে মুক্ত করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে সে কথাই বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শনিবার এক সেমিনারে তিনি এ সংক্রান্ত বেশকিছু কথা বলেন। যা বাস্তবায়নে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার যেমন সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি নতুন অসতর্কতায় জটিলতারও কিছু আশঙ্কা রয়েছে। আমার সেদিকটা খেয়াল রাখার পরামর্শ রাখবো।
গতকাল ‘শিক্ষা ক্যালেন্ডারে আসছে পরিবর্তন’ এই শিরোনামে ঢাকার একটি দৈনিকে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদটি ছিল সেমিনারে তুলে ধরা সমস্যা ও তা সমাধানে ডা. দীপু মনির পরিকল্পনার কিছু বিষয় নিয়ে। তুলে ধরা সমস্যার মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামী প্রাথমিক ও এবতেদায়ী সমাপনী, জেএসসি, জেডিসি এবং ঝুঁলে থাকা এইসএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। সেমিনারে এ বছর সমাপনী ও জেএসসি জেডিসি পরীক্ষা এড়ানোর পরামর্শের সাথে সিলেবাস কাটছাঁটের কথা বলা হলে মন্ত্রী আপত্তি করেন। তিনি স্পষ্ট বলেন সিলেবাস কাটছাঁট নয়, এবারের শিক্ষাবর্ষের সময় বাড়িয়ে মার্চ পর্যন্ত নিয়ে আগামীটা ৯ মাসে শেষ করা হবে। ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় ছুটির তালিকা ছেটে ফেলে কাস ঘন্টা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমরা এর অনেক আগেই সিলেবাস ছাঁট নয়, মার্চ পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বর্ষগণনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম এই নিবন্ধেই। কারণ, আমরা মনে করি শুধু শ্রেণি বদল শিক্ষা নয়, শ্রেণিতে শিক্ষার উপযুক্ত জ্ঞান অর্জনটাই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সিলেবাস শেষ করে পাশ করার পথই ধরা শ্রেয়। আমরা ৯মাসে বছর প্রসঙ্গে আগেও বলেছি আবারও বলছি, এটাও যুক্তিসঙ্গত নয়। তাহলে সেই অপূর্ণতা রয়ে যাবে। এবার মার্চ পর্যন্ত হলে আগামী ক্যালেন্ডার মধ্য ফেব্র“য়ারি করা হলে শিক্ষাটা হবে। মন্ত্রীর ঝুঁলে থাকা এইচএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন করার পরিকল্পনায় বলেছেন সিলেবাস কমানো নয় বিষয় কমিয়ে দ্রুত সময়ে পরীক্ষা শেষ করা হবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে। আমরা জানি, সদ্য স্বাধীন দেশে এমন পরীক্ষা হয়েছিল। ৭২ সালে দুটি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছিল ৫ বিষয়ে। তা ছিল ৭১এর বাতিল ও ৭২এর নিয়মিত পরীক্ষা। ৭৩ এ এসএসসি পরীক্ষা হয়েছিল ধর্ম বাদে ৯ বিষয়ে। ফলে, বিষয় কমানো খুব সমস্যা নয়, যদি শিক্ষা কোর্স শেষ হয়ে থাকে। এবারের পরীক্ষার্থীদের অবশ্য কোর্স আগেই শেষ হয়েছে। আমরা অবশ্য এটাকে সমস্যা মনে করছি না। আমাদের ভাবনা ভর্তি নিয়ে। একমাস হলো এসএসসির ফল হয়েছে, ৮২ ভাগের বেশি পাশ করে ভর্তি হতে পারেনি বন্ধের কারণে। এখন এইচএসসি পরীক্ষার পরও যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে জট তো বাঁধতে পারে। কারণ, সামনেই আরেকটি এসএসসি, তার পরই ফের এইচএসসি। বিষয়টি এখনই ভাবনায় নেয়া প্রয়োজন। কারণ, করোনা কমছে নয় ভয়ঙ্কর হচ্ছে। কতদিন পাঠশালার দরজা বন্ধ থাকবে কেউ জানে না। ফলে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়টাতে আরও ভেবেচিন্তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নেয়া হোক। ৯ মাসে শিক্ষা ক্যালেন্ডার বা পরবর্তী ভর্তি ছাড়াই ফেলে রাখার জন্য পরীক্ষার না করাই ভালো।