সরকারকে ধন্যবাদ, তবে…

0

গতকাল শনিবার সহযোগী একটি দৈনিকের প্রধান খবর ছিল, ‘চাকরি জীবনে প্রথম সরকারি অনুদান, যশোরে সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক-কর্মচারী পাচ্ছেন দেড় কোটি টাকা’। সংবাদের ভেতরে লেখা হয়েছে অনুদান তালিকাভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা হচ্ছেন নন এমপিও। অর্থাৎ এরা কেউ সরকারি কোনো বেতন-ভাতা পান না। এদের বেতন হয় টিউশন ফি থেকে। যা বন্ধ রয়েছে গত তিনমাস। এই টাকার জন্যই সম্প্রতি তারা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছেন। দৈনিক লোকসমাজে এ সংক্রান্ত একটি সরেজমিন প্রতিবেদন গত সপ্তাহে প্রকাশ হয়। যেখানে শিক-কর্মচারীদের মানবেতর অবস্থা ও অভিভাবকদের বর্তমান সামর্থের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরা হয়। ওই রিপোর্টের সূত্র ধরে আমরা এই কলামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিলাম। সে প্রসঙ্গে আলোচনার আগে আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা মনে করি এই কাজটি সরকারের ভালো কাজের অন্যতম একটি হিসেবে গণ্য হবে। আমরা আমাদের ওই সম্পাদকীয়তে সরকারের কাছে ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে ছিলাম। যেভাবেই হোক সে অনুরোধের প্রাথমিক বাস্তবায়নে আমরা আনন্দিত। এজন্য আমরা সরকার প্রধান ও যশোরের জেলা প্রশাসককে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।
তবে আমরা মনে করি, এই অনুদান মূল সমস্যার সমাধান নয়। কারণ, করোনাকালীন তিনমাস বকার শিক্ষকরা ৫ হাজার ও কর্মচারীরা আড়াই হাজার টাকা পেয়ে অনুদান প্রাপ্তির সাময়িক আনন্দ উপভোগ করা ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারবে না। তাই, সরকারের উচিৎ হবে এই আনন্দ স্থায়ী করতে একটি বিশেষ ব্যবস্থা করা। এ েেত্র আমরা আমাদের ২৩ জুন-তারিখের সম্পাদকীয়তে তুলে ধরা প্রস্তাবনারই পুনরাবৃত্তি করতে চাই। ‘বেসরকারি শিক্ষা নিয়ে সরকারকেই ভাবতে হবে’ শীর্ষক ওই লেখায় আমরা উল্লেখ করেছিলাম দেশের পরিস্থিতি গত তিন মাসে যেখানে গিয়ে ঠেকেছে সেখান থেকেই বলা যায় বেসরকারি শিক্ষা রীতিমতো হুমকির মুখে। বন্ধের তিন মাস পার হয়েছে, আরও কতদিন কতমাস বন্ধ থাকবে তার ঠিক নেই। এই তিন মাসে বেকার হয়ে পড়া অভিভাবকরা বকেয়া বেতন দিতে পারবে না। বাকি যারা মানবিক বিবেচনায় দেবেন তারা পরবর্তীতে দিতে পারবেন কি-না বা দেবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে যথেষ্ট। এ অবস্থায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ কতদিন চালাতে পারবেন তা এক বিশাল ভাবনার বিষয়। তারা প্রতিষ্ঠানটাই বা কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন তাও এক বড় প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন অল্প বেতনে সংসার চালানো শিক্ষকরা কতদিন বকেয়া বেতনে টিকে থাকতে পারবেন। যতদূর অনুভব করা যায় তাতে এটুকু বলতে পারি অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষক পেশা বদলে বাধ্য হবেন। কারণ, তাদের মাতা পিতা স্ত্রী সন্তান আছে। তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হয়। এতদিন তারা বেতনের অংকটা গোপন করে নিজের সম্মান রার সুযোগ পেলেও বেতনহীন অবস্থায় আর তা পারছে না। অবশ্য, অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে আর দু মাস গেলে শিক্ষকতা পরিচয়ই বদলে যাবে। অপরদিকে বেসরকারি শিক্ষা যারা টিকিয়ে রেখেছেন সেই অভিভাবক মহল আর কতদিন অর্থের যোগান দিতে পারবেন- তা নিয়ে অনেক বড়ো সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন পত্রিকা গতকালও লিখেছে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাড়ছে বেকার সংখ্যা, বদলে যাচ্ছে বেসরকারি চাকরি ও পেশাজীবীদের পেশা। শ্রমজীবীদের ঘরে অভাবের দাপট বাড়ছে। আমরা জানি এটা শুধু খবর নয় এটাই বাস্তবতা। দু‘দিন আগে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান একই তথ্য দিয়েছে। সার্বিক এই বাস্তবতা ইঙ্গিত করে বেসরকারি শিক্ষা সার্বিকভাবেই চরম হুমকির মুখে। এ অবস্থায় সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা ও প্রকল্প ছাড়া বাঁচানোর কোনো পথ নেই। আমরা মনে করি সরকারের উচিৎ দায়িত্ব নেয়া। হয় ননএমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা, অথবা বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা করা। একইসাথে সকল বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীর বেতন অর্ধেক করে দেয়া। অন্তত দু বছরের জন্য হলেও করা জরুরি। এতে শিক্ষক অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান তথা বেসরকারি শিক্ষাটাই রা পাবে। আমরা আশা করবো, সরকার অনুদান প্রদানের পাশাপাশি এ বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে