সিপিডি’র সংলাপে করোনাকেন্দ্রিক পুনঃবাজেটের প্রস্তাব

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চলমান মহামারি করোনাভাইরাসকেন্দ্রিক পুনঃবাজেটের প্রস্তাব করেছে বক্তারা পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতার কথা চিন্তা না করে সংস্কার বাড়িয়ে করোনার ঝুঁকির বাস্তবতা কমানো দরকার। শনিবার ‘সিপিডি বাজেট সংলাপ ২০২০’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ কথা জানান বক্তারা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। অনুষ্ঠানে আরো অংশগ্রহণ করেন- পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহেমদ, পলিসি রিচার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর।
প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনা এখনো চলমান কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে করোনা প্রতিরোধ এবং করোনা পবরর্তী যথাযথ কোনো পদক্ষেপ দেয়া হয়নি। ফলে বাজেট শুরুর ৬-৭ মাস প্রাধান্য দিয়ে রিভাইজড বাজেট করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতার কথা চিন্তা না করে সংস্কার বাড়িয়ে করোনার ঝুঁকির বাস্তবতা কমানো দরকার। একই বিষয়ে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর বলেন, ধারাবাহিকভাবে এই সময়ে ১ বছরের বাজেট করা উচিত হয়নি। বরং ৬ মাস অন্তর অন্তর দুটি বাজেট করা উচিত ছিলো। এর মধ্যে প্রথম ৬ মাস করোনা মোকাবিলায়। পরের ৬ মাস করোনা পরবর্তী করণীয় কেন্দ্রীক করা উচিত ছিলো। কিন্তু সরকার গতানুগতিকভাবে কেবল জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়েছে বাজেটে। কিন্তু কারোনা ইস্যুকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। এই বাজেটে দিয়ে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ তো দূরের কথা পজিটিভ প্রবৃদ্ধিও হবে না।
তিনি বলেন, এবার রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। এনবিআরের কাঠামোকে সংস্কার করতে বলেছিলাম। কিন্তু তা বাস্তবে করা হয়নি। এ কারণে সরকার এখনি ধার-দেনা করে চলছে। এইভাবে চললে আগামী ৬ মাস পর টাকা ছাপিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দিতে হবে। এটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। তবে এ সময় এখনও আসেনি। কিন্তু সময় আসতে বেশি দূরে নয়।
সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পরিবর্তনের এখনও সময় আছে। তাই এবারের বাজেট যেন রুটিনের হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে এ বাজেট না হয়। যা প্রস্তাব করা হলো তাই পাস হলো সেটা যেন না হয়। বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে পরামর্শ মতামত দিচ্ছেন, এগুলো যেন যোগ করা হয়। তিনি বলেন, সাধারণত সবসময় রুটিন বাজেট হয়ে থাকে। তবে এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রম হবে এমনটা প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে তা দেখিনি। আয় আর ব্যয় নির্ধারণের এই বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু ভালো এবং কিছু খারাপ দিক রয়েছে বলে অভিহিত করেছে সিপিডি। প্রস্তাবনায় বলা হয়, এডিপি বাস্তাবায়ন করার যোগ্য করা, মোবাইলের কলরেটের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো প্রয়োজন। ছোট ও মধ্যমেয়াদি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য টার্নওভার ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, বাজেটে প্রত্যক্ষকরে নিন্মবিত্তের সুবিধা কম দেয়া হয়েছে। আর উচ্চবিত্তশালীদের আরো বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে। ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা সাদা) বিনিয়োগের সুবিধা দেয়া অনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কোনোভাবে কাম্য নয় উল্লেখ করে মুস্তাফিজ বলেন, কারণ অপ্রদর্শত অর্থ সুযোগ আরো আগেও দেয়া হয়েছে। তাতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা এসেছে। তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এসেছে ৯ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং এই সুবিধা দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। এই সুবিধা দেয়াটা ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবীর বলেন, এতে সত্য ও ভালো ব্যবসায়ীদের কর প্রদানে নিরুৎসাহিত করছে। এতে বিশ্বের কাছে আমাদের মর্দাযা ক্ষুণ্ন হবে। সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক থেকে ৮৭ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সরকার এই টাকা নিলে ব্যাংক থেকে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের অর্থ পেতে সমস্যা হবে বলে আমাদের মনে হয়েছে। ব্যাংকের আবগারি শুল্ক নিয়ে আগেও সমালোচনা হয়েছে। এটা না বাড়ালে ভালো হতো। স্বাস্থ্যখাতে যেভাবে অগ্রাধিকার দেয়ার দরকার ছিল সেভাবে দেয়া হয়নি। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখলাম, হেলথ সেক্টর কোভিড রিলেটেড প্রজেক্ট কেবলমাত্র একটা। এগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) একটা লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ঠিকই। কিন্তু এই জিডিপি অর্জনে সরকারের চেষ্টা সীমাবদ্ধ থাকবে না। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের আয়-ব্যয় ও ভোগে বৈষম্য রয়েছে। এই বৈষম্য দূরীকরণে বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনাও রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়ানোয় নজর দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে চলমান সংকটে পোশাক খাতে বর্ধিত রপ্তানি মূল্যের উৎসে কর কমানো জরুরি বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের তৈরি পোশাক খাত সংকটে রয়েছে। রপ্তানি কমে গেছে। এমন সময় প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানির মূল্যের ওপর উৎসে কর ০.২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ০.৫ শতাংশ করা হয়েছে। এটি কমানো দরকার।