এমপি পাপুল কাণ্ড :এবার জেরার মুখে স্বরাষ্ট্রে কর্মরত এক কর্নেল ও জনশক্তির দুই অধিকর্তা

0

মিজানুর রহমান॥ মানবপাচারের দায়ে আটক বাংলাদেশি এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্বীকারোক্তি মতে এবার ঘুষ গ্রহণের কৌশল বাতলে দেয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত দেশটির একজন সামরিক অফিসারসহ ৩ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে আদালতে তলব করা হয়েছে। পাবলিক প্রসিকিউশন তাদের জেরা করেছেন এবং আদালত তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেছেন। ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস এবং আরবি দৈনিক আল-কাবাসে পাপুলকাণ্ডের ফলোআপ রিপোর্টে অভিন্ন এ তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে পাপুলকাণ্ড উন্মোচনকারী আল কাবাসের রিপোর্টে বাড়তি তথ্য ছিল পাপুলের সহযোগী স্বরাষ্ট্রে কর্মরত কর্ণেল, জনশক্তি ডিপার্টমেন্টের দুই পরিচালক ছাড়াও একজন নারী ব্যবসায়ীকে কাল আদালতেজেরা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে বিস্তৃত তদন্ত চলমান রয়েছে জানিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, পাপুল ইস্যুতে দেশি বিদেশি নতুন নতুন নামযুক্ত হচ্ছে এবং তা চাঞ্চল্য তৈরি করছে। বিশেষতঃ ‘বাঙালি এমপি’র কেসটি কুয়েতের রাজনীতি ও প্রশাসনে বাড়তি উত্তাপ তৈরি করেছে। দিনে দিনে এটি যেনো কেবলই বিস্তৃত হচ্ছে। তবে আরব টাইমস বা আল-কাবাস কোনো রিপোর্টেই জেরার মুখে পড়া কর্ণেলসহ অন্যদের নাম-পরিচয়ের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
দু’দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তাসহ দু’জন সরকারী কর্মকর্তাকে পাপুলের সহযোগী হিসাবে আটক করা হয়। তাদের জামিন নাকচ করে জেলে পাঠানো হয়েছে। আগামী ৬ই জুলাই তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে আদালত শুনানী হওয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে। ১৭ই জুন পাপুলকাণ্ডে স্বরাষ্ট্রের বড় কর্তাসহ দু্থজনের আটক সংক্রান্ত রিপোর্টে ৩ কর্মকর্তাকে তলবের সিদ্ধান্তের কথা প্রথম প্রকাশ পায়। তখনো তাদের নাম ঠিকানার বিস্তারিত প্রকাশ হয়নি। তবে তারা কারা, কোন মন্ত্রণালয়ের সেই ইঙ্গিত ছিলো। বলা হয়েছিল- পাপুলের রিমান্ডের শেষ দিনে একনাগাড়ে ৯ ঘন্টার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনি রাঘব-বোয়ালদের নাম বলেছেন। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তাসহ দু্থজন মধ্যস্থতাকারীকে মোটা অংকের ঘুষ দেয়ার কথা কবুল করেছিলেন। তাদের দেয়া ঘুষের পরিমাণ ও ডকুমেন্ট আগেই হাতে পেয়েছিল কুয়েত-সিআইডি। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল- পাপুলকাণ্ডে এ পর্যন্ত কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান ৩ এমপি, স্বরাষ্ট্র ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের ৭ শীর্ষ কর্তা এবং ৩টি সংস্থায় কর্মরত অন্তত ২১ জন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে কুয়েত-সিআইডি। এদের কারও নাম প্রকাশ হয়নি। কিন্তু অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। পাপুলের স্বীকারোক্তিতে লাক্সারি কারসহ দামী উপহার গ্রহণকারীদের সঙ্গে সংযুক্ত কুয়েতের যে ৩ জন কর্মকর্তাকে তলব ও জেরা করা হয়েছে তাদের মধ্যে সদ্য সাসপেন্ড হওয়া জনশক্তি বিভাগের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তাও রয়েছেন। রিমান্ডে পাপুল তার সহযোগী ও বেনিফিশিয়ারি যাদের নাম বলেছেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না পেলেও নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা চলে এসেছে। এসবের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে ইঙ্গিতপূর্ণ ওই সব তথ্য নিয়ে খোদ কুয়েতি পার্লমেন্টে আলোচনা হয়েছে। পাপুলকে বাঁচাতে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার দায়ে অভিযুক্ত সংসদের বর্তমান দুইজন এমপি সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে যোগ দিয়ে এ ইস্যুতে কথা বলেছেন। তারা নিজে থেকেই পাপুলকাণ্ডে তাদের নাম আসার বিষয়ে স্পিকারকে অবহিত করে এবং সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাদের নামে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে দাবি করে পাপুলের কাছ থেকে কোন ধরণের অন্যায় সুবিধা নেয়ার দায় অস্বীকার করেছেন। সেদিন সংসদে পাপুলকাণ্ডে অন্তত ৬ জন এমপি কথা বলেন। তাদের বক্তব্য, তীর্যক মন্তব্য এবং বিবৃতির নোটিশ প্রদানের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী আনাস আল সালেহ সংসদে বিবৃতি দিতে বাধ্য হন। তিনি তার তার বক্তৃতায় পাপুলের নাম মুখে না নিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ভিসা বাণিজ্যে রাষ্ট্র হিসাবে কুয়েতের নিরাপত্তা বা অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে বিস্তৃত এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তারা রেহাই পাবে না। এমপি, মন্ত্রী বিশিষ্টজন হলেও তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। উল্লেখ্য কুয়েতের ইতিহাসে মানবপাচার বিষয়ক সর্ব বৃহৎ এবং চাঞ্চল্যকর ওই মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশি এমপি কাজী পাপুলকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। তবে তার সহযোগী যারা আটক হয়েছেন জুলাই’র মাঝামাঝিতে তাদের বিষয়ে শুনানী হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। জানা গেছে এমপি পাপুল ইস্যুতে কুয়েত সিটিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ পর্যায়ের দু্থজন কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের ব্যাংক একাউন্ট তালাশ করা হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হতে পারে। তবে ডিপ্লোমেটিক ইমিউনিটিপ্রাপ্ত ওই দুই বাংলাদেশিকে জিজ্ঞাসাবাদ না ঢাকা ফেরত পাঠানো হবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।