ওষুধের দোকানে আট টাকার মাস্ক ফুটপাতে ২০ টাকা!

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহামারি করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী যশোর শহরে তৎপর হয়ে উঠেছেন। ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির স্বাস্থ্য সুরক্ষা দ্রব্যাদি বিক্রি করে কামিয়ে নিচ্ছেন কাড়িকাড়ি টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা আতঙ্কিত অসহায় মানুষ নিম্নমানের এসব পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, কিছু পণ্যের দাম ওষুধের দোকান থেকেও ফুটপাতে তিনগুণ পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ফেস মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও অন্যান্য জীবাণুনাশকের ব্যবহার বেড়ে যায়। এর আগে ফেস মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার শুধুমাত্র চিকিৎসকরা ব্যবহার করতেন। সাধারণ মানুষ এসব পণ্য খুব একটা চিনতেনও না। হঠাৎ করে জনসাধারণের মধ্যে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় যশোর শহরের ওষুধের দোকানগুলোতে মজুদ শেষ হয়ে যায়। এরই মধ্যে সরকারি নির্দেশনাও আসে প্রত্যেককে ফেস মাস্ক ও জীবাণুনাশক ব্যবহারের জন্য। করোনা আতঙ্কে মানুষ ফেস মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস,পিপিই ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। নতুন ধরনের এই ব্যবসার সুযোগ নেন এক শ্রেণির মৌসুমী ব্যবসায়ী। সরকারি নির্দেশে শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ থাকলেও মানুষের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে প্রশাসনও এসব ব্যবসায়ীকে ফুটপাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য বিক্রিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।
এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা যশোর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মেতে উঠেছেন বিভিন্ন কোম্পানির নিম্নমাণের পণ্য বিক্রিতে। এসব পণ্য ব্যবহারে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মানুষের উপকার না হলেও ব্যবসায়ীদের পকেট ভারী হতে থাকে। দেশে সুখ্যাতি আছে এমন কোম্পানি যেমন এসিআই। এই কোম্পানির তৈরি জীবাণুনাশক ‘স্যাভলন’ দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষের ঘরেই ব্যবহার হতে দেখা যায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্যাভলনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য কোম্পানি মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য একই আদলে জীবাণুনাশক বাজারে বিক্রি করছে। যেমন ‘স্যাবরন’ ‘স্যাবলন’ ইত্যাদি নামে। এসব পণ্যের নামের বানানে সামান্য হেরফের থাকলেও আদল ঠিকই এসিআই কোম্পানির মত। ফলে সাধারণ মানুষ স্যাভলন ভেবে স্যাবরণ ও স্যাবলন কম দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। মুখে ব্যবহারের মাস্ক কিনেও মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। ইতোমধ্যে সকলেই জেনে গেছেন স্বাস্থ্যসম্মত ফেস মাস্ক হলো ‘এন-৯৫’। কিন্তু দেশে এখনও এই ফেস মাস্ক পাওয়া যায় না বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলছেন, পাওয়া গেলেও এন-৯৫ একটা মাস্কের দাম এক হাজার টাকার ওপরে পড়বে। যেহেতু সাধারণ মানুষ এন-৯৫ মাস্কের নাম জানেন, সে কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এখানেও তৎপর হয়ে উঠেছেন। ফুটপাতের প্রতিটি দোকানে এন-৯৫ মাস্কের আদলে বিক্রি হচ্ছে কেএন-৯৫ মাস্ক। যা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সার্জিক্যাল মাস্ক, পিপিই নামে পলিথিলিনের তৈরি পোশাক প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতগুলোতে। শহরের বিভিন্ন ফুটপাত ঘুরে দেখা যায়, নিল-সাদা রংয়ের সার্জিকাল ফেস মাস্ক বর্তমানে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগেও ফুটপাতের দোকানিরা নিচ্ছিল ২৫ টাকা। যা শহরের গাড়িখানা রোডের বঙ্গবাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা। অবশ্য অন্যান্য ওষুধের দোকানে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। আর পাইকারি নিলে প্রতিটির দাম ৭ টাকা। শুধুমাত্র এই একটি সার্জিক্যাল ফেস মাস্ক বিক্রি করে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে ১২ থেকে ১৩ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। অথচ এসব মাস্কের অধিকাংশের প্যাকেটের গায়ে কোম্পানির নাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফুটপাতে ১ হাজার মিলিলিটার ‘স্যাবরন’ (হলি কেয়ার ফুড অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা) বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা, ১ হাজার মিলিলিটার ‘স্যাবলন’ (গাজী কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। এই কোম্পানির ৫০০ মিলিলিটার ‘স্যাবলন’ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। তবে এসিআই কোম্পানির ‘স্যাভলন’ ৫০০ মিলিলিটার বিক্রি হচ্ছে ৩৪৫ টাকা, সাথে একই কোম্পানির ৫টি সাবান (প্রতিটি ১২৫ গ্রাম, মূল্য ৪৪ টাকা) ফ্রি। এসিআই কোম্পানির ২০০ মিলিলিটার ‘স্যাভলন’ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা, ১২৫ মিলিলিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার ১৫০ টাকা, ১০০ গ্রাম ওজনের স্যাভলন সাবান বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা।