কয়লা আমদানিতে সীমা টানছে চীন? মে মাসে আমদানি কমল ২০%

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও পাঁচ মাস ধরে চীনের কয়লা আমদানিতে চাঙ্গা ভাব বজায় ছিল। তবে গত মাসে পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দিয়েছে দেশটি। দেশটির সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পরও মে মাসে দেশটির কয়লা আমদানি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। তবে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) চীনের জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত আমদানিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকতে দেখা গেছে। খবর রয়টার্স ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
চীন বিশ্বের শীর্ষ কয়লা ভোক্তা দেশ। দেশটির খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ কয়লা শিল্প রক্ষা ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে এবং পণ্যটির আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে সম্প্রতি জ্বালানি পণ্যটির আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে চীন সরকার। এতে দেশটির বন্দরগুলোতে পণ্যটির প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদায় চাঙ্গা ভাবের পরও গত মাসে দেশটির কয়লা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ সময় দেশটির অভ্যন্তরীণ খনিগুলো থেকে জ্বালানি পণ্যটির ঊত্তোলনে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় ছিল।
চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সব মিলিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টন কয়লা আমদানি করে দেশটি। চলতি বছরের আগের মাসে দেশটি আমদানি করেছিল মোট ৩ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টন কয়লা। ২০১৯ সালের মে মাসে চীনের জ্বালানিটি আমদানির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার টন। সে হিসেবে গত মাসে আগের মাস ও আগের বছরের একই মাসের তুলনায় দেশটির কয়লা আমদানি কমেছে যথাক্রমে ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টন ও ৫৪ লাখ ১০ হাজার টন।
অন্যদিকে মে মাসসহ চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে চীনের সম্মিলিত কয়লা আমদানিতে বড় উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। দেশটির শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে দেশটি সব মিলিয়ে ১৪ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার টন কয়লা আমদানি করেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
চীনের অভ্যন্তরীণ খনিগুলো থেকে প্রতি বছর প্রচুর কয়লা উত্তোলন করা হয়। তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে দেশটিকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কয়লা আমদানি করতে হয়। ফলে বিশ্বের শীর্ষ কয়লা উত্তোলনকারী দেশ হয়েও চীন বিশ্বের শীর্ষ কয়লা আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি দেশটি অভ্যন্তরীণ কয়লা শিল্পের উন্নয়নে করারোপ করেছে এবং পণ্যটিতে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে চেষ্টা করছে। এর জের ধরে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্যটির আমদানি রোধে কঠোর অবস্থানে যেতে পারে দেশটি। শুল্ক আরোপ বৃদ্ধির সঙ্গে গুণগতমানের ভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে জ্বালানিটি আমদানিতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে চীন সরকার। এতে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দেশটিতে জ্বালানিটির আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন জ্বালানি পণ্যবাজার বিশ্লেষকরা।
এদিকে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় লকডাউনসহ আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ তুলে দিয়েছে চীন সরকার। এতে দেশটির আর্থিক ও শিল্প খাতগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিকে ফিরতে শুরু করেছে। ফলে দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া এবারের গ্রীষ্ম তুলনামূলক উষ্ণ হওয়ায় দেশটির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বিরাট অংশ কয়লাভিত্তিক হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দেশটিতে কয়লার চাহিদা বাড়তির দিকে রয়েছে।
দেশটির শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে চীনের খনিগুলো থেকে সব মিলিয়ে ১১৫ কোটি টন কয়লা উত্তোলন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
তবে অভ্যন্তরীণ কয়লা শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি চীনের আমদানি হ্রাসের পেছনে পরিবেশ ইস্যু অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। পরিবেশ ইস্যুতে বড় ধরনের সংস্কার প্রকল্পের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশটির কয়লা উত্তোলন খাত। মূলত দূষণ কমিয়ে আনা ও উত্তোলন খাতে আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে চীন সরকার। ফলে দেশটির ছোট ছোট কয়লা খনি বন্ধ হতে শুরু করেছে। গত এক বছরেই চীনে সব মিলিয়ে ৫০০ কয়লা খনি কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। চায়না ন্যাশনাল কোল অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল শেষে দেশটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে সক্রিয় কয়লা খনির সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮০০। ২০১৯ সাল শেষে এ সংখ্যা ৫ হাজার ৩০০-তে নেমে এসেছে।