দশ টাকা চাল নিয়ে দুর্নীতি বন্ধ হোক

0

দশ টাকা দরে চাল বিক্রি সরকারের একটি মহৎ প্রকল্প। কিন্তু শুরু থেকেই এই মহৎ প্রকল্পেও নয় ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু ও লোভী জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবক এখানেও বাগড়া বসিয়ে চলেছে। প্রথমত রয়েছে স্বজনপ্রীতি। দুস্থ হোক বা না হোক নিজেদের লোকদের নামে কার্ড করে দেয়ার সংস্কৃতি চলে আসছে সেই শুরু থেকেই। এখন চলছে দুর্নীতি আর দলবাজির করোনাকালে সবাই যখন মানবিক হচ্ছে ১০ টাকার ডিলাররা তখন দুর্নীতি করছে । এই কর্মসূচীর আওতায় সুবিধাভোগীদের তালিকা করতে গিয়ে যেসব অভিযোগ এসেছে সে ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয় অবহিত রয়েছে। সে কারণেই তারা দ্রুত যাচাই বাছাই করে প্রকৃত গরিব ও দুস্থদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের চিঠি দেয়া। করোনাজনিত মহামারী শুরু হওয়ার আগে আগে। এ চিঠি দিলেও আজও সেই কাজে গতি আসেনি। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর এখন সুযোগ এসেছে গরিবের চাল প্রাপ্তির কাজটি সুষ্ঠু ও সুন্দররূপে সম্পাদনের। বলাবাহুল্য, এ কাজ করতে গেলে সরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ প্রভাবশালীদের হুমকি-ধমকির শিকার হবেন। এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন কোন প্রকার হুমকি-ধমকিতে ভয় না পেয়ে স্বজনপ্রীতির উর্ধে থেকে সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে খ্যাদ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্ড ডিজিটালাইজড করা হবে। মন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রশংসিত হলেও বলা হচ্ছে এখানেও ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে। যেমন হয়েছে ২,৫০০টা করে প্রকল্পে।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, করোনাকালীন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের স্থবিরতায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। সরকার নানাভাবে এদের প্রত্যেকের কাছেই ত্রাণ ও নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস চালিয়েছে। তারপরও এটাই বাস্তবতা যে, দুর্নীতি ও দলবাজির কারণে এই তালিকার বাইরেও থেকে গেছেন (প্রকৃত) মানুষ। আবার তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও সঠিকভাবে সহায়তা পৌঁছায়নি সবার কাছে। তাই বিরোধী রাজনৈতিক দল, সমাজের বিত্তবান মানুষ এবং নানা সমাজকল্যাণমূলক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ওপরও বড় দায় এসে পড়েছে। তারা শতাব্দীর এই ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রমণে শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে প্রত্যেককেই মানবতার দায়বোধ থেকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ১০ টাকা চালের কার্ড দুর্নীতিমুক্তভাবে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা উচিত। নতুন তালিকা তৈরির সময়েই এই কাজ করা হলে দরিদ্রদের সুবিধাই হবে। বছরে ৫ মাস গরিব ও দুস্থদের মাঝে ১০ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি চাল প্রদানের ব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী শুভ পদপে প্রমাণ হবে। এই কাজে সামান্যতম অনিয়ম কোনক্রমেই বরদাশত করা উচিত হবে না। সরকারকে তাই সর্ষের ভেতর ভূত তাড়ানোর উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। অন্যথায় আবারও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হবে।